কবিতা সম্পর্কে
আমি কবিতাকে কীভাবে দেখি, কবিতার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কি, কবিতা ছাড়া আমার পক্ষে কত আর বাঁচা সম্ভব- এইসবই আলোচনার বাইরে রেখে আজ আমাকে বলতে হবে- একদিন দেখলাম, শুটিংয়ের ফাঁকে ক্লান্ত নায়িকা গাড়ির মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে। গাড়ির এসির আবেশে বসে ড্রাইভারও মনে হলো ঘুমোচ্ছে, জানালার কাচ ভেদ করে তাকিয়ে দেখে আমার আরো মনে হলো, ঘুমন্ত নায়িকার জাগ্রত পোশাক দু’ক্লাস উপরের বেঞ্চে গিয়ে বসেছে। ড্রাইভার কি ঘুমের ভান করে আড়চোখে নায়িকার পোশাককে আরো উস্কানি দিচ্ছে? আসল কথা, ড্রাইভার ঘুমের ভান করে আড়চোখে যা দেখছিল মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমি কবিতাকে আড়চোখে ঐভাবে দেখি। ঠিক, সরাসরি তাকাতে পারি না। একটা ঘুমের ভাব করে আড়চোখে দেখতে থাকি, বস্ত্রসভ্যতার দুঃসাহসিক অভিযাত্রাঃ ক্লান্ত এই নায়িকার নাম সৈয়দা নাজমুন আরা কিন্তু চলতি ছবিতে তার চরিত্রের নাম যমুনা, সে গ্রামীণ মেয়ে, চটপটে, দেখে বোঝা যাবে না তার মধ্যে গোখরা সাপ ঘাপটি মেরে আছে; সে তার এক মেসোর প্রেমে পড়ে যাবে।
বসন্তপুর আইডিয়াল মহিলা কলেজের একাদশ মানবিক, রোল নং ৫৬- এই নাজমুন আরার সঙ্গে বৃন্দাবন ছবির যমুনা চরিত্রের যে সম্পর্ক- কবিতার সঙ্গেও আমার সম্পর্ক এককথায় তাই। আর শেষ কথা, কবিতা ছাড়াই বাঁচে মেঘ, বনভূমি, হরিণের দলঃ এমন কি আমিও তো কয়েক বছর জাস্ট একটা বটগাছ হয়ে বেঁচে আছি তেমাথার পথের ওপরঃ ঠিক সরাসরি কবিতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই আমারঃ
বসন্তের শ্রেষ্ঠ কবিতা
কবিতার সঙ্গে কথা বলা দরকার, কে তাকে ভালোবাসে?
যদি মীমাংসা আসিবেক, তবে সিনারিও বলে দেবে, কে বেশি বড় কবি? শুদ্ধ কবিঃ যৌন কবি, মৌন কবি, মূলত কবি, ভুলত কবি- আমরা এতকাল কি জানতাম? সাহিত্য সমালোচক, সম্পাদক, অধ্যাপক আর পাঠকই নির্ধারণ করেন কবিকে, কবির সন্তান কবিতাকে? কিন্তু আজ! আজকের দিন বড় অন্যরকম দিন। সেলফোন, ইমেল-ফিমেল-ফেসবুক-যোগাযোগ সম্পূর্ণ রঙিনঃ
আজ, আমি বলছি, কবিতাই বলে দিক, কে তাকে নির্মাণ করেছে? কে তাকে হাওয়ায় পেয়েছে? কে তাকে পথে কুড়িয়ে পেলেও ঘরে ফেরার আগেই হারিয়ে ফেলেছে? কবিতাই বড় কবির নামধাম, ইমেল-ব্লগ ওপেন করে দিক। কবিতাই সিদ্ধান্ত দিক, এই শীত কিসের সংকেত? কবিতাই সিদ্ধান্ত নিক, শীতের পেছনেই কেন বসন্ত ঘাপটি মেরে থাকে? আর আমাদের ছেলেমেয়েরা উতলা হয়ে পড়ে। মেসবাসার প্রেমিকের যন্ত্রণাকে উসকে দেওয়ার মানে কি? আমার মনে হয়, কবিদের ছোটবড় দৈর্ঘ্য-প্রস্থ এখন থেকে মাপামাপি করুক বাংলা কবিতা, কবিতাই সম্পাদনা করুক বসন্তের শ্রেষ্ঠ কবিতা।
অফ দ্য রেকর্ড, সাহিত্য সমালোচক, সম্পাদক, অধ্যাপক ও কবেকার কবিরাÑ আপনাদের দায়িত্ব আপনারা ফের কাঁধে তুলে নিন। কবিতা আসবে না, কবিতা কোনো দায়িত্বই নেবে না, বড় কথা, কথা শোনানোর জন্য কবিতাকে আপনি পাবেন কোথায় যে দায়িত্ব দেবেন? আমি কবিতাদের বাড়ির কাজের মহিলার কাছ থেকে শুনলাম, কবিতা তো বাসার বাইরে খুব একটা বেরটের হচ্ছে না, পরশু বুধবার তাকে দেখতে আসবে এক প্রকাশক, কবিতা ঘরবন্দি হয়ে পড়বে, গ্রন্থের ভেতরে সংসার করবে
আমরাঃ বন্ধুরাঃ আমাদের কথাগুলো বলাই হলো না কবিতাকে, কে তাকে বেশি ভালোবেসে নির্মিতি রেখেছি? কত শব্দে, কত ভাষায়ঃ হীরের আংটি হারিয়ে যাওয়া মলিন আশায় কে কতটা মলিন আমরা? আজ। কারণ, পরশু কবিতার বিয়েঃ
তুষার দাশের সঙ্গে
তুষার দাশের সঙ্গে দেখা হলো পাহাড়ে, নির্জনে,
বললাম, ‘পাহাড়ে কি? আপনি তো ঢাকায় থাকেনঃ’
হতবাক হন তুষার দাশ, কবি তুষার দাশ, বললেন-
‘আমি কেন ঢাকায় থাকব? ঢাকায় থাকতে পয়সা লাগে-
আমার পয়সা নেই, প্রেম নেই, থাকার মধ্যে লোকালয় থেকে দূরে
কয়টা পাহাড় আছে-
কথা বলার বন্ধু নেই নেই বলে পর্যাপ্ত স্তব্ধতাও আছেঃ’
‘কিন্তু আপনি তো কবি তুষার দাশ, দেখতেও তার মতোঃ’
‘কিন্তু আমি কোনো কবি না, আমি কোনো কবিকেও চিনি না’
আমি কি ভুল দেখছি? আপনি কি তুষার দাশ নন?’
‘আমার নামও তুষার দাশ, কিন্তু জীবনে একটাও কবিতা লিখিনি
কোনোদিন শহরে যাইনি, কোনোদিন চাকরি করিনি, টাকাপয়সা
ইনকাম করিনিঃ আমার কিছুই নেই- এই পাহাড়গুলো ছাড়া’
এবার আমি হতবাক। ‘আমার কি ভুল হয়ে যাচ্ছে?’
‘যাই, বেলা চলে যাচ্ছে, পাহাড়গুলো ডাকছেঃ’
পাহাড়ের প্রতিবেশী তুষার দাশ চলে যায় হাঁটতে হাঁটতে।
আমি ভাবি, ঢাকায় গিয়ে যদি কবি তুষার দাশকে আমি
এই ঘটনা বলি, তিনি কি আমাকে পাগল বলবেন?
নিজের চোখে দেখে আসলাম, নিজের কানে শুনে আসলাম
সেই পাহাড়ি লোকটি, তার নামও তুষার দাশ, অবিকল
আপনার মতো দেখতে, কিন্তু সে কোনো চাকরি করে না,
কবিতা লেখে না, তার নাকি প্রেম বলে কিচ্ছু নেইঃ
জানা মতে, শুধু বেলা পড়ে এলে, কয়েকটি পাহাড়ের সঙ্গে
তার কথা বলার আছে।
তুষার দা যাবে, কবিতার বাইরে
আপনাকে আমি নিয়ে যাব সেই পাহাড়ি দাশের কাছে?
সে কি তবে আপনার বাল্যবেলার হারিয়ে যাওয়া বন্ধুটি? নাকি
কোনো ভূত? অদ্ভুত!!
লাভ এন্ড পেইন
লাভ এন্ড পেইন
যথা মাইগ্রেন
নার্স! নার্স! সিস্টার
ওষুধ-টোসুদ দেনঃ
পেইন এন্ড লাভ
শীতালি প্রভাব
জলশূন্য; মিতালির
কচি কচি ডাবঃ
লাভ লাভ পেইন
পেইন পেইন লাভ
পুনশ্চঃ মিতালি
মুগ্ধময়ী সাপঃ
পেইন পেইন লাভ
লাভ লাভ পেইন
মিতালির ফণা দেখে
খুলে যায় ব্রেইন-
যেই না ছোবল দিল
সেই থেকে পেইন-
ইংরেজিতে কথা আছে:
নো রিস্ক ডট ডট গেইন
নার্স! খুঁজছি নার্স!
সিস্টার, ওষুধ দেন
হাসপাতালে ছুটে আসছে
মালবাহী ট্রেন
ওয়াগন-ভর্তি ড্রিম
লাভ এন্ড পেইন
নতুনধারা/ ৫ম সংখ্যা/ ১ চৈত্র ১৪১৬/ ১৫ মার্চ ২০১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।