আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্ষবরণের আজব ধরন ধারন



নতুন বছরে পান্তা-ইলিশ খেতেই হবে! আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হলেও বাইরের কেউ কিন্তু হুট করে ব্যাপারটা বুঝতে পারবে না। অবাক হবেই। ঠিক তেমনি দুনিয়ায় এমন অনেক অঞ্চল আছে, যাদের বর্ষবরণের তরিকা দেখে চমকে উঠব আমরাও। থালা ভেঙে নববর্ষ! দেশটা পরিচিত। ডেনমার্ক।

তবে ওই দেশে বর্ষবরণের আদি সংস্কৃতিটা একেবারেই অন্যরকম শোনাবে। সেখানে নববর্ষের রাতে প্রতিবেশীর দরজার সামনে চীনা মাটির বা সিরামিকের থালা, বাটি ও গ্লাস ভাঙে সবাই। কী ভয়ংকর রীতি! তবে এর পেছনে কাজ করে এক অন্ধবিশ্বাস। তারা ভাবে, এই বিশেষ দিনে প্রতিবেশীকে বিরক্ত করলেই সামনের দিনগুলো মিলেমিশে থাকা যাবে। নববর্ষের প্রথম দিনে ঘর থেকে বের হতেই তাই চোখে পড়বে বাসার সামনে ভাঙা থালা, বাটি, কাপ ও গ্লাসের টুকরার স্তূপ।

বালিশের নিচে পাতা কেন? নববর্ষের প্রথম দিন কেউ ঘুমিয়ে কাটায়? তাও আবার বালিশের নিচে পাতা রেখে! অবশ্য এভাবে ঘুমিয়ে থেকে যদি সারা বছর ভালো কাটানো যায়, তবে মন্দ কী! আয়ারল্যান্ডের বর্ষবরণ প্রথা এমনই। রীতি অনুযায়ী সেখানকার কুমারী মেয়েরা তাদের বালিশের তলায় মিসলটো (অনেকটা জামরুল ফলের পাতার মতো) নামের একটি গাছের পাতা রেখে দেয়। তাদের বিশ্বাস বর্ষবরণে এ পাতা বালিশের নিচে রেখে ঘুমালে নতুন বছর তারা সুপুরুষ স্বামী পাবে। এসো হে আত্মা! আমরা ডাকি বৈশাখকে, আর মেঙ্কিানরা ডাকে মৃতের আত্মা! নিশি রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে আত্মা নামিয়ে বর্ষবরণ করে দেশটির একটি বিশাল অংশ। ভৌতিক এ দিন তাদের কাছে 'ডে অব দ্য ডেড' নামেও পরিচিত।

অবশ্য তাদের বিশ্বাস, নতুন বছরের শুরুতেই কাছের মৃত ব্যক্তিরা তাদের কাছে ফিরে আসে এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা দেয়। তবে কেউ চাইলেই নিজ বাড়িতে আত্মা নামাতে পারবে না। এ জন্য সরকার অনুমোদিত প্রার্থনা কেন্দ্রে যেতে হবে। ব্যবসাও চলে ভালো_১৫ মিনিটের জন্য আত্মা নামানো বাবদ খরচ করতে হয় ১৫ ডলার! অন্তর্বাসে বর্ষবরণ দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশে আজব সব বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়। ব্রাজিল, বলিভিয়াসহ এ অঞ্চলের অধিকাংশ রাষ্ট্রে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয় বিভিন্ন রং ও নকশার অন্তর্বাস পরে।

লাল ও হলুদ রঙের পোশাক পরে সবাই। ভালোবাসার কাউকে পাওয়ার জন্য লাল রং আর অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ার ইচ্ছা থাকলে পরে হলুদ রঙের অন্তর্বাস। গোলবর্ষ গোলাকার পৃথিবীর সব শুভ কিছু হবে গোলাকার বৃত্তের মতো। তাই ফিলিপাইনে বর্ষবরণ হয় গোলাকার সব কিছু দিয়ে। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে তারা গোলাকার ফল কমলা, আপেল খেয়ে থাকে।

কেকটাও গোল, এমনকি পোশাকেও গোলাকার চিত্র বসানো থাকে। গোলাকার কিছুকে তারা পয়সার সঙ্গে তুলনা করে এবং পয়সা মানেই তো ভাগ্য খুলে যাওয়া। বর্ষবরণের রাতে আকাশে গোল কয়েনও ছুড়ে মারে ফিলিপিনোরা। কবরস্থানে বর্ষবরণ! নতুন বছর যে শুধু নতুন দিনের আগমনী বার্তা বয়ে আনে তা হয়তো চিলির জনগণ মানে না। তাই তারা নতুন বছরকে স্বাগত জানায় কবরস্থানে অনুষ্ঠান করে।

চিলির রাজধানী তেলকা শহরের কবরস্থানে সবাই সমবেত হয়ে তাদের হারানো প্রিয়জনদের কবরে ফুল ও মোমবাতি জ্বালিয়ে বর্ষবরণ করে। নানা বাদ্যযন্ত্রসমৃদ্ধ এ বর্ষবরণ মৃত প্রিয়জনদের স্মরণ অনুষ্ঠান, নাকি বর্ষবরণের উন্মাদনা তা বোঝা দায়। ১৯৯৫ সাল থেকে দেশটিতে এ রীতি চালু হয়। জ্বালাও কাকতাড়ুয়া পুরনো ও 'খারাপ' জিনিসকে পুড়িয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় ইকুয়েডরের বাসিন্দারা। প্রথম কাগজ ও কাঠের টুকরো দিয়ে কাকতাড়ুয়া বানানো হয়।

এরপর ওটাকে বাতিল ঘোষণা করে লাগানো হয় আগুন। মাঝরাতে ওই অগি্নকুণ্ডুল ঘিরে চলে বর্ষবরণ উৎসব। আঙুর খাওয়ার দিন ১২টি গ্লাসে ১২টি আঙুর সাজানো থাকে। প্রতিটি গ্লাস থেকে একটি করে আঙুর খেতে হয়। ১২টি গ্লাস মানে নতুন বছরের শুভ ১২ মাস।

আঙুর খাওয়ার অর্থ_সামনের ১২টি মাস যেন কাটে দুধে-ভাতে। স্পেনে নববর্ষ উদ্যাপন শুরু হয় এভাবেই। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী নতুন বছরের শুরুতে যে সাইরেন বাজে, সেই সময়ের মধ্যেই খেতে হয় আঙুর। এরপর সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার ঐতিহ্যবাহী চকোলেট খেয়ে শুরু করতে হয় ঝলমলে নতুন দিন। ডুবুরির নৃত্য এটাই মনে হয় সবচেয়ে বিপজ্জনক বর্ষবরণ।

রাশিয়ার ঐতিহ্য অনুযায়ী বর্ষবরণের দিন সবাই বৈকাল হ্রদে ডুব দিয়ে পানির তলদেশ থেকে একটি গাছ বা গুল্ম উঠিয়ে নিয়ে আসে। আর কাজটা করেন পেশাদার ডুবুরিরাই। সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার বাধ্যতামূলক। হ্রদের তলদেশ থেকে তুলে আনা ওই গাছকে ঘিরে ডুবুরিরা নৃত্য করে। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন অনেক তারকাও।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।