চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি
সাম্প্রতিক জনগণনা রিপোর্ট বলছে দেশের সবচেয়ে বড় অংশ মানুষ বয়সে যুব, প্রায় ষাট শতাংশ। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে এই যুব ভোটাররাই যে অনেকাংশে নির্ধারণ করে দেবেন প্রার্থীদের ভাগ্য, সেটা সহজবোধ্য। পশ্চিমবঙ্গের যুবমানস দীর্ঘদিন ধরেই চিন্তা চেতনায় বামপন্থী। ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁকে পশ্চিমবঙ্গের যুবরা তার পরিচয় রেখেছেন। প্রাক স্বাধীনতা পর্বে যুগান্তর বা অনুশীলন সমিতির সাড়াজাগানো বিপ্লবী আন্দোলনগুলি ছিল যুব আন্দোলনের উজ্জ্বল অধ্যায়।
স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ষাট সত্তর দশকের বাংলার রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ ছিল মূলত যুবদের হাতেই। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা থেকে গ্রাম বাংলার জোতদার নিয়ন্ত্রিত কায়েমী স্বার্থের উচ্ছেদের লড়াই ছাত্র যুবদের কন্ঠে জন্ম দিয়েছিল ‘তোমার নাম আমার নাম ভিয়েতনাম’ বা ‘সত্তর দশককে মুক্তির দশকে পরিণত করুন’ -এইসব স্বপ্নমাখা সমাজ বদলের শ্লোগান।
বিপ্লবী রাজনীতির উপর সত্তর দশক জুড়ে নির্মম দমন পীড়ণের অধ্যায় সবচেয়ে বেশি রক্তাক্ত করেছে যুবদেরই। আজকে পরিবর্তনের শ্লোগান তুলে যারা ক্ষমতায় আসতে চাইছে; সেদিন কাশীপুর বরানগর সহ গোটা বাংলা জুড়ে একের পর এক গণহত্যায় যুবদের রক্তে তারা হোলি খেলেছিল। কংগ্রেসী গণহত্যাকারীদের প্রতি তীব্র ঘৃণা আর চরম কুশাসনের প্রতি মানুষের ক্ষোভকে পাথেয় করে সি পি এমের ক্ষমতায় আসা।
অল্পদিনের মধ্যেই শাসকের সাথে আপোষ রফার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাদের আস্থাভাজন হওয়ার রাজনীতি। আর দু দশকের মধ্যেই তা পৌঁছয় আত্মসমর্পণের পর্বে। সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের আমলে শুরু হয় শাসক শ্রেণির অ্যাজেন্ডাকেই উর্ধ্বে তুলে ধরার নির্লজ্জ রাজনীতি। ১৮৯৪ সালের ঔপনিবেশিক জমি অধিগ্রহণ আইনের ব্যবহার থেকে এস ই জেডের হয়ে ওকালতি - চরম বিশ্বাসঘাতকতার এই পর্বেই আমরা দেখেছি টাটা সালিম সহ একচেটিয়া পুঁজির দালালির স্বার্থে যুব সমাজকে কীভাবে কৃষকের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে। যুবকের চাকরীর স্বপ্নকে কৃষকের জমি ছিনিয়ে নিয়ে পুঁজি বিনিয়োগের পদ্ধতির সাথে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পার্টির অনুগত যুবশক্তিকে সমাজ বদলের কোনও স্বপ্নে যখন আর ধরে রাখা যায় নি, তখন ফাটকা পুঁজির ব্যবসা, দালালি আর প্রোমোটারির পাইয়ে দেওয়া রাজনীতিকে আঁকড়ে যুবদের কাছে টানতে চেয়েছে সি পি এম। কিন্তু যুব সমাজকে আদর্শহীন এই বালির বাঁধে আটকে রাখার প্রয়াস অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়েছে।
প্রতিবাদহীনভাবে শাসনক্ষমতার কাছাকাছি থেকে গুছিয়ে নেবার যে মানসিকতায় সি পি এম তার তিন দশকের শাসনে জনগণকে অভ্যস্ত করে তুলতে চেয়েছে, তাই এখন বুমেরাং হয়ে তৃণমূলের জনাধার হয়ে উঠেছে। যুবশক্তির একটা স্রোত সি পি এম ছেড়ে এখন তৃণমূলের দিকে হলেও তা নেহাৎই সাময়িক। আদর্শ নীতি নৈতিকতাহীন এই ‘নব কংগ্রেসী’রা যুবসমাজ বিশেষত তার অগ্রণী অংশকে কোন মতেই ধারণ করতে পারবে না।
সাংসদ কেনাবেচা, ২জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি, আদর্শ আবাসন, কমনওয়েলথ গেমস এর নামে পুকুরচুরি - গোটা দেশ ইউ পি এ র একের পর এক দুর্নীতির যে লাগামছাড়া প্রদর্শনী দেখেছে, তৃণমূল তারই শরিক। আর এ কথা কে না জানে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় শরিক যুবরাই। তৃণমূলের কাছে কোনও রকম আস্থা রাখার অর্থই যে প্রতারণার নিশ্চিত রাস্তা, সে বিষয়ে যুবসমাজকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
এবারের নির্বাচন তাই যুবদের কাছে কঠিন রাস্তা নির্মাণের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার নির্বাচন। একদিকে শাসকশ্রেণির কাছে যুবদের স্বপ্নকে বলি দেবার যে দক্ষিণপন্থী সংস্কৃতি তৈরি করেছে শাসক ‘বামপন্থী’রাই, তাকে পরিবর্তনের লড়াই।
অন্যদিকে তথাকথিত পরিবর্তনপন্থীদের মিথ্যা স্বপ্ন বিক্রির বেসাতির বিরুদ্ধেও এটা জোড়ের সাথে দাঁড়ানোর সময়। দক্ষিণপন্থী ও দক্ষিণপন্থায় পরিবর্তিত বামপন্থীদের যুগপৎ বিরোধিতা করে যুবসমাজের নতুন স্বপ্ন প্রতিষ্ঠার লড়াই। আসুন এই স্বপ্ন দেখার শরিক হই একসাথে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।