রিজওয়ানুল ইসলাম রুদ্র ১.
নওশিন হায়দার সানি। ইউটিউবের একটা "ভার্চুয়াল সিভি" ভিডিও ক্লিপ দেখে এই নামটা আমাদের পরিচিত হয়ে উঠেছে। মূলত সানির ভিডিওটা ছিলো "পরিচিতি মূলক" বা "ভার্চুয়াল সিভি"। এই ডিজিটাল আইডিয়া এসেছে কোরিওগ্রাফার, মিউজিক ডিরেক্টর. থিয়েটার পারফরমার (?) প্রদিপ ভট্টাচার্য এর মাথায়। শুধু সানি নয়, খ্যাত-অখ্যাত অনেক মডেল তারকাদের ভার্চুয়াল সিভি সে তৈরী করেছে এবং ফিল্মইয়োরসেল্ফ.কম শিরোনামের একটা ওয়েবসাইটও তার আছে।
সেখানে তার সম্পর্কে সে লিখেছে :
Pradeep Bhattacherjee- the name has been travelling behind the success revolution of satellite television industry of Bangladesh. His creative aptitude and audio-visual dimension is one of the reasons why ETV-the first private terrestrial TV channel stands in public mind.
আরো একজন শামসুল ইসলাম রনি, যে আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে "ডিজিটাল সিভি" নামক প্রতিষ্ঠানের জন্য :
Shamsul Islam Rony professionally working on broadcast graphics over seven years. He has been creating high-profile broadcast & motion graphics for the last seven years. His work has aired on RTV, Channel i and Banglavision, among others. Currently he is working at Jamuna Television as in charge of graphics. Before that he was on RTV as lead designer. On that position Rony was involved in many facets of online & offline graphics operations, including cross-training colleagues, and creating and re-designing of on-air packages. His interests is especially on Branding, program packaging, Promotional Packaging and audio visual presentation.
নওশিন হায়দার সানির ডিজিটাল সিভি ইউটিউবে আপলোড করা হয় ২০১২ এর ৭ জানুয়ারি। এখন পর্যন্ত ৬,৩৯৭ মূল ভিডিওটা দেখেছে, বাকিরা ফেসবুক-ব্লগে কিংবা ইউটিউবে নিজেদের চ্যানেলে আপলোড করে দেখিয়েছে বাংলাদেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারিদের। তুমুল হাসি-ঠাট্টা-সমালোচনার জন্ম দিয়ে নওশিন হায়দার সানি নামের ১৭ বছর বয়সি কিশোর মডেল এক ধরণের "ফানি আইকন" হিসেবে ভার্চুয়াল জগতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এতে তার মডেলিং ক্যারিয়ার, শোবিজ জগৎ নিয়ে তার চিন্তা-ভাবনা যে দর্শক সিরিয়াসলি না নিয়ে নিছক আনন্দ লাভ করছে, মজা পাচ্ছে তার বিকৃত ইংরেজি এবং বাংলা উচ্চারণ শুনে, বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি ও মুখভঙ্গি দেখে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাচ্ছে আপামর জনসাধারণের, সেদিকটা হয়তো প্রদিপ, শামসুল বা সানির মাথায় কখনোই কোনোভাবে আসে নাই। নিজেকে কীভাবে সবার কাছে তুলে ধরতে হয়, সে জিনিসটা মানুষ শিখতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, বাংলাদেশে মডেলিং করে ভালো পোশাক কীভাবে পরতে হয়, সেটা জানা যায়, কিন্তু কীভাবে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হয় সবার কাছে, সেটা জানা যায় না, সম্ভব নয়।
কারণ এগুলো যারা পরিচালনা করছে তারা অনেকেই সানির মতোই মূর্খতা নিয়ে বেঁচে আছে। তাদের ধারণা মডেলিং মানেই নিজের সম্পর্কে দুগাল ফুলিয়ে বলা, কয়টা ফ্যাশন শো আর ফটোশুট করেছে, কোন পোশাক ডিজাইন করেছে এসব রসিয়ে রসিয়ে বলা আর মানুষের কাছে "বিশাল কিছু" হিসেবে নিজেকে তুলে ধরা। যদিও সানির বাচনভঙ্গি, দুর্বল ইংরেজি, ভুল গিটার কর্ড এবং অদ্ভুত মুখভঙ্গির কারণেই সে সমালোচিত হয়েছে বেশি। সে ১৭ বছর বয়সে পোশাকের ডিজাইন করে পুরষ্কার জিততে পারে, অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। কিন্তু সেটা যদি অল্প বয়সেই বুক ফুলিয়ে মানুষকে বলে বেড়ায় তাহলে তার ভবিষ্যতের জন্য সেটা হয়তো-বা আশানুরূপ ফল বয়ে আনবে না।
মিডিয়া নিয়েই তার সবকিছু। সানি কী পড়াশোনার পাট চুকিয়ে এখানে এসেছে? মনে হয় না। সায়েন্স ল্যাবরেটরি গভর্নমেন্ট স্কুল বলে কোনো স্কুল ঢাকা শহরে নেই আমার জানামতে, গভর্নমেন্ট সায়েন্স ল্যাবরেটরি তো সবাই চিনে, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি যদি সানি পাশ করেই থাকে, তাহলে সে অবশ্যই সুন্দরভাবে কোনো একটা কাজ করতে শিখবে। সবার শেষে রেডিয়্যান্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনিং নামের একটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেছে, যেটা সম্পর্কে ধারণা অনেকেরই নেই। সবথেকে দুঃখের ব্যাপার সানি নিজের উচ্চতা সম্পর্কে বলেছে, মাই হাইট ইজ ফাইভ পয়েন্ট এইট ইঞ্চি! হবে ফাইভ ফিট এইট ইঞ্চি! কিসের উচ্চতা বলেছে কে জানে!
সানির ইংরেজি উচ্চারণ অনেকের কাছেই হাসির উদ্রেককারি।
এর যথেষ্ট কারণও আছে, যখন সে বলে ওঠে, " আই অ্যাম বেরি প্রাউড (এরপর বিরতি) বাংলাআদেশি বেরি মাছ!" একটা সহজ ইংরেজি বাক্যকে ভেঙে সানি কী বিতর্কেরই না জন্ম দিয়েছে! প্রদিপ কি শুধু ক্যামেরা চালিয়ে দিয়ে গাঁজা খাচ্ছিলেন, আর এডিটিং প্যানেলে কিছু ভিডিও এফেক্টস দিয়ে দিলেই হলো? এই সিভি যে বাংলাদেশ এবং তার বাইরে বসবাসরত প্রবাসিরা দেখে যারপরনাই আহত হয়েছেন মন্তব্য পড়লেই বুঝা যায় :
0 million sperm cells and this is the only one that got through !!!! This guy is a n insult to human civilization.
sabbir051 2 weeks ago 47
sorry pardon me for my vulgar language. that crap said in malay
"আপা খাপা ভায়ে সামা সামা
বাংলাদেশ এর GAY রা আমায় চূদে করো তামা তামা"
sala genuine gay
lipockfu1 1 week ago 25
উল্লেখ্য যে সানি তার বহুভাষাবিদ দক্ষতার পরিচয় দিতে মালয় ভাষার কিছু উদাহরণ দিয়েছে। "আপা খাপা ভায়ে সামা সামা" এর অর্থ কী? মালয়েশিয়ার মানুষ নাকি "আপা" শব্দটা উচ্চারণই করে না! যাই হোক সানি হয়তো নিজেও জানে না।
বাংলাদেশি ইন্টারনেট গোপাল ভাঁড় সানি অত্যন্ত সিরিয়াসলি একটা কাজ করে যে তীব্র হাসির খোরাপ জুগিয়েছে তার তুলনা হয় না। কিন্তু এটা তার ভবিষ্যতের জন্য অবশ্যই মঙ্গলজনক নয়। সে শাকিব খানের চরিত্র করবে, মানুষ সেটা দেখে "জনি লিভার" এর মতো কোনো ব্যাঙ্গাত্মক কিছু মনে করবে!
একটা ডিজাইন করে পুরষ্কার পেয়েছে বেচারা।
সেটাই ঘুরে ফিরে তাকে বলতে শোনা গেছে! এটাই তার ১৭ বছরের অর্জন (বয়স সন্দেহজনক!)।
সর্বশেষ সানিকে ফোন করে এক মেয়ে ও তার বন্ধুরা কথাবার্তা রেকর্ড করেছে এবং ইউটিউবে আপলোড করেছে :
পাল্টা জবাব :
লন্ডন থেকে সানির জন্য প্রশংসা :
বুঝাই যাচ্ছে মডেল হতে গিয়ে সানি যে খ্যাতি পেতে যাচ্ছিলো, গোপাল ভাঁড় বা হাস্যকর একজন মানুষ হিসেবে সে তার চাইতে বেশি কিছু পেয়ে গেছে!
মজা অনেক হয়েছে, এবার সিরিয়াস কিছু ব্যাপারে আলোচনা করা যাক। সানি আমাদের তরুণ প্রজন্মের একজন। কিন্তু সে ভুল পথে পরিচালিত হয়েছে, হচ্ছে। তাকে শেখানো হয়েছে মিডিয়া বা মডেলিং মানেই শো ডাউন।
নিজেকে দেখানো। কিন্তু আসলে নিজেকে দেখানোর ভেতরেও একটা আর্ট থাকবে হবে। যে কারণে ন্যুড এবং পর্নোগ্রাফি এক জিনিস না, ঠিক তেমনি, কথা বলা আর নিজেকে তুলে ধরতেও শৈল্পিক ও শিক্ষিত মানসিকতার পরিচয় থাকতে হবে, নিজের ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। মিডিয়াতে যাচ্ছে বেপরোয়া ছেলে-মেয়ে। ইয়াবা সেবন করে, মদ খেয়ে, ডিজে পার্টি করে নিজেকের যৌবন, নিজেদের সংষ্কৃতি-দেহ বিকিয়ে দিচ্ছে ফটোগ্রাফার অপূর্ব, ডিজাইনার আনিসুজ্জামান আনিস বা আরো অনেক লুইচ্চা-বদমাশদের কাছে।
এদের থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না। মিডিয়া আমাদের সংস্কৃতির দর্পণ। এটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করাটা আমরা ৪০ বছরেও শিখতে পারি নাই। সানিদের মতো তরুণ প্রজন্মকে বুঝাতে হবে, পড়াশোনা করো, ইংরেজি ভালোভাবে শিখো, নিজের মাতৃভাষায় শুদ্ধভাবে কথা বলো... একটা সময় মানুষ নিজেই তোমার প্রশংসা করবে, তোমাকে আর "ডিজিটাল সিভি" বা প্রদিপের সামনে যেতে হবে না!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।