আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের শিশু বনাম জার্মান শিশু

আমারে দিবো না ভুলিতে

বার্লিন: আজ সন্ধ্যার পর থেকেই দুঃসহ একটা অনুভূতি তাড়া করে ফিরছে। কিছুতেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছি না। ফেসবুকে এক বন্ধুর পোস্ট করা একটা ছবি দেখে আমি রীতিমত হতবাক হয়ে গেলাম। নিজের অজান্তেই দেখি চোখের কোনে পানি। দু’টি মেয়ে, কতইবা বয়স হবে, ৮/১০।

ওরা গণপিটুনির শিকার। শুক্রবার লালবাঘ কেল্লার মোড়ে ওই শিশু দুটিকে পেটানো হয় চুরির অপরাধে। তাদের আর্তনাদ আর অসহায়ত্বের এই ছবি হাজার হাজার মাইল দূরে আমাকে এতোটাই ভাবিয়ে তুলেছে যে, ইচ্ছা না থাকলেও এই অপ্রিয় বিষয়ে লিখতে বসে গেলাম, ক্লান্ত দেহ আর ভগ্ন মন নিয়ে। গণপিটুনি ব্যাপারটা আমাদের কাছে খুবই স্বাভাবিক। প্রশাসন, পুলিশ সবাই নীরব।

আমার মনে আছে একবার এক ১৭/১৮ বছরের ছেলেকে চুরির দায়ে এতোই পেঠানো হচ্ছিল যে, আমি ভাবলাম বুঝি ও মারাই যাবে। মরিয়া হয়ে পল্লবী থানায় ফোন করলাম, সেখান থেকে একমহিলা পুলিশ খুব বিরক্ত হয়ে থানায় নিয়ে আসেন বলেই লাইন কেটে দিল। এটাও না হয় সহ্য করলাম এই ভেবে যে, তারা নিজের দোষেই মরে। তাই বলে এইসব শিশুও কি এখন এভাবেই মরবে? যা হোক, এটা আমার লেখার বিষয় না, আমি আজ জার্মান শিশুদের নিয়ে লিখব। পাঠক, ওদের শিশুদের সঙ্গে আমাদের শিশুদের তফাতটা একটু মিলিয়ে নেবেন।

মানে, ওদের আর আমাদের শিশুদের বেড়ে উঠার রীতিনীতির কথা বলছি। আমি খুব কাছ থেকে কোনো জার্মান শিশুকে দেখিনি, কথা বলাটা সম্ভব নয়, ওরা ইংরেজি বোঝে না। ওদের সঙ্গে আমার দেখা হয় পথে, বাসে বা ট্রেনে। ৩/৪ বছরের শিশুদের সাধারণত বেবি ট্রলিতি করে এখানে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিটি বাসে আর ট্রেনেই ওদের ট্রলি রাখার জন্য আলাদা একটা জায়গা থাকে।

এই কনকনে শীতেও ওরা বেশ চুপচাপ বসে থাকে, কোনো কান্নাকাটি বা অস্থিরতা নেই। হয়তোবা ওরা আমাদের শিশুদের চেয়ে বেশি সভ্য, হয়তবা বাবা-মার পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীরাও ওদের সুবিধার দিকে নজর দেয় বলে। ৩/৪ বছরের শিশুদের দেখেছি বাবা-মার সঙ্গে ছোট্ট সাইকেলটি চালিয়ে নির্ভয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। কোনো ট্রাক এসে ওদের জীবনটাকে শেষ করে দেয় না। ওদের রাস্তার দু’পাশে দেখে লম্বা একটা দৌড় দিতে হয় না।

বড়রা ওদের জন্য রাজপথকেও অভয়ারণ্য বানিয়ে দিয়েছে। রাস্তা যতোই ফাঁকা থাক না কেন, পথচারিদের জন্য সবুজ আলো না জ্বলে ওঠা পর্যন্ত কেউই রাস্তা পার হয় না। ব্যাপারটা আমার কাছে প্রথমে একটু হাস্যকর মনে হয়েছিল। পরে, এক বন্ধুর কাছে শুনলাম, ওদের শিশুদের কথা ভেবেই ওরা নিয়ম মানে। ওরা চায় না ওদের অনিয়ম দেখে শিশুরাও অনিয়ম করুক।

৭/৮ বছরের বাচ্চাদের দেখেছি একা একাই ট্রেনে বা বাসে বসে আছে। ওদের বাবা-মাদের কোনো ভয় নেই। ওরা কোনো ছেলেধরার হাতে পড়বে না। আর ট্রেনের মধ্যে তো ওরা মনমত দৌড়াদৌড়ি, ছুটোছুটি আর চেঁচামেচি করে। কেউই হাহা করে তেড়ে আসে না।

বা ব্যথা পাবে বলে বাবা-মা রাও হাত চেপে ধরে রাখে না। জার্মান শিশুদের যেটুকু দেখেছি ওদের জীবনের স্বাধীনতার জায়গাটা বোঝার জন্য এটাই যথেষ্ট। অনেকে বলবে ওদের স্বাধীনতা আছে দেখেই তো সামাজিক কোনো মূল্যবোধ নাই। হয়ত ঠিক। কিন্তু, আমিতো দেখিনি বা শুনিনি, এখানে শিশুরা গণপিটুনি খাচ্ছে।

ভাল করে ভাবলে আমরা বাঙালিরা যে মূল্যবোধ নিয়ে গর্ব করি সেটা আমার কাছে গালির মতো লাগে। একটি ছোট্ট ঘটনা বলে শেষ করি। আমার এক বৃটিশ বন্ধুকে একদিন কটাক্ষ করে বলেছিলাম, ” তোমরা এতো সভ্য জাতি বলে নিজেদের দাবি কর, আর তোমাদের দেশে সতেরোশো সালের কোনো এক সকালে রুটি চুরির দায়ে মাত্র ১৪ বছরের একশিশুর জীবনের আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাকে রাস্তার মোড়ে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল। ” সেদিন সে মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে ছিলো।

আজ রাতে সে আমাকে একটা ই-মেইল পাঠিয়েছে। সে শুধু লিখেছে, ”England 1700= Bangladesh 2011 Click This Link


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.