কালার বাশিঁ হলো বাম বলে শুধু রাধা নাম
রাধার মন জুড়ে তুমুল উৎসাহ-উদ্দীপনা। কারণ সে নারী। ৮ মার্চ সারা বিশ্ব জুড়ে পালন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। অভিসার ভুলে কৃষ্ণের সঙ্গে এই নিয়েই কথা বলছিল সে।
কৃষ্ণের প্রশ্ন, নারী দিবস কী এবং কেন?
রাধা কৃষ্ণের প্রশ্নে অবাক হয়।
আসলেই কৃষ্ণ এক মেঠো রাখাল, খাঁটি বাংলায় যাকে বলে আস্তা খেত। বাঁশি বাজানো আর প্রেমলীলা ছাড়া বিশ্বের কোনো খবরই সে রাখে না, জানে না।
কৃষ্ণকে নারী দিবস সম্পর্কে রাধা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করে।
রাধা বলে, সারা বিশ্বে নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য আন্তর্জাতিক নারী দিবসটি প্রতিবছর উদযাপন করা হয়। এই বিশেষ দিনটির পেছনে আছে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম, ইতিহাস।
আজকের যে মেয়েটি তাঁর শ্রমের সঠিক মজুরি পাচ্ছেন, যে কর্মজীবী নারীটি ভোগ করছেন প্রসবকালীন ছুটি; সুস্থ-সুন্দর কাজের পরিবেশে যে নারীটি কাজ করছেন, তাঁদের এই অর্জনের পেছনে আছে যেমন তাঁর যোগ্যতা ও ক্ষমতা, তেমনি আছে ৮ মার্চের ইতিহাস।
কৃষ্ণ খুব মনোযোগ দিয়ে রাধার কথা শুনতে থাকে। রাধা বলে যায়--
১৮৫৭ সালে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে দমন-পীড়ন। ১৯০৮ সালে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেিকনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো।
ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ। জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হলো দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি যোগ দিলেন। ক্লারা প্রস্তাব দিলেন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা হোক।
সিদ্ধান্ত হলো, ১৯১১ সাল থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। তবে দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও স্বাধীনতার আগে থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ সালে দিবসটি পেল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। পৃথিবীজুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি।
রাধার জ্ঞান-গরিমায় মুগ্ধ হয় কৃষ্ণ। রাধার কাছ থেকে সে অনেক জেনেছে, অনেক শিখেছে। এবার জানলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্পর্কে।
হুট করে রাধাকে একটা উদ্ভট প্রশ্ন করে বসে কৃষ্ণ। তার প্রশ্ন--
৮ মার্চ নারী দিবস; পুরুষ দিবস কবে? একটা দিন নারী দিবস আর বছরের বাকী দিনগুলো কি তাহলে পুরুষ দিবস!
কৃষ্ণের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় রাধা। কী উত্তর দেবে সে? নিজের মনেই রাধা উত্তর খোঁজে--
প্রায় ১০০ বছর ধরে নারীদের অধিকার আদায়ের জন্য নারী দিবস পালন করা হচ্ছে। কিন্ত কথা হল নারীর অধিকার কে দেবে- পুরুষ? পুরুষ কেন একজন নারীকে তার অধিকার দেবে? নারীওতো পুরুষের মতই একজন মানুষ, তাহলে পুরুষদের কাছ থেকে কেন স্বীকৃতি বা অধিকার পেতে হবে? কোন পুরুষ কি কখনও তার অধিকার নারীদের কাছে চেয়েছে?
পুরুষতো কখনও তাদের কাজের জন্য নারীর স্বীকৃতি চায় না বা তার অধিকার চায় না! তবে নারীদের কেন এই চাওয়া ? এভাবেই পুরুষের কাছে অধিকার চেয়ে চেয়ে নারীরা কী নিজেদের দুর্বল করে উপস্হাপন করছে না?
রাধা মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, যদি কখনও পুরুষ তাদের কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ একটি বিশেষ দিবস পালন করে, তখনই সে নারী দিবস পালন করবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।