আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাদক নয়, চাই প্রাণবন্ত তারুণ্য

দেশের তরে

তানিম আহমেদ: মাতাল স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন’। ‘সাতক্ষীরায় ১,০০০ বোতল ফেনসিডিল আটক’। ‘দেশব্যাপী ভয়াবহ মাদক ইয়াবার বিস্তার’। এ ধরনের শিরোনাম প্রতিনিয়তই দৈনিকগুলোতে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ থেকেই সহজেই অনুধাবন করা যায় মাদক সমস্যা বাংলাদেশের অন্যতম জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। যার অধিকাংশই শিক্ষিত তরুণ-তরুণী। এসব তরুণ-তরুণীদের অধিকাংশই প্রথমদিকে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ধূমপানে অভ্যস্ত হয়। আর একসময় ঝুঁকে পড়ে মাদকের দিকে। সিগারেট খাওয়া থেকেই যে মাদকাসক্ত হয় এতে সন্দেহের অবকাশ নেই।

এক জরিপে দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের ৯৮ শতাংশ ধূমপায়ী অর্থাৎ তারা মাদকাসক্ত হওয়ার আগেই ধূমপান দিয়ে তাদের নেশা শুরু করে। তরুণ ছাত্রদের অনেকে ধূমপানকে তারুণ্যের ফ্যাশন হিসেবে দাঁড় করাতে চায়। কিন্তু গাড়ির সাইলেন্সর বা ইটের খোলার মতো মানুষের মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের করা কোন স্টাইল হতে পারে না। এতে কোন স্মার্টনেসও প্রকাশ পায় না। অনেকে সিগারেট খেলে কি আর এমন হবে বলে ধূমপানের নেতিবাচক দিকটি এড়িয়ে যেতে চান।

কিন্তু বিজ্ঞানীদের মতে, সিগারেটের নিকোটিনও একটি মাদকদ্রব্য, যা হেরোইন ও কোকেনের মতো নেশাজাতীয় বস্তুু। এসব বস্তুু যেমন তরুণ-তরুণীদের নেশাগ্রস্ত করে তুলতে পারে তেমনি সিগারেটের নিকোটিন ও তাদের নেশাগ্রস্থ করে তুলতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা মাদকের বিষাক্ত ছোবলে দিশেহারা দু’দশক আগেও যেখানে বাংলাদেশের মানুষ হেরোইনের নাম জানতো না। সেখানে বর্তমান বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বোচ্চ নেশাগ্রস্ত দেশের মধ্যে সপ্তম। মাদকাসক্তরা বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে মাদকদ্রব্য কেনার পেছনে।

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন লাখ টাকার সিগারেট বিক্রি হয়। অথচ ধূমপান ও মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য কোন আন্দোলন ও আইনের বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। অনেকেই দাবি করছেন সকল ক্যাম্পাসে কর্তৃপক্ষের উচিত ধূমপান নিষিদ্ধ করা। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে মাদক সমস্যা শুধু বর্তমান নয় ভবিষ্যতেরওসমস্যা। কিছু কিছু সমস্যা বর্তমানে সমাধান করলেই হয় না।

যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলতে চলতে একটা সময় জাতিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে পারে। আমাদের দেশে মাদকের সহজলভ্যতা মাদকের বিস্তারের অন্যতম একটি মূল কারণ। এদেশে সহজলভ্য মাদকদ্রব্যের মধ্যে হেরোইন, ইয়াবা, ও ফেনসিডিল অন্যতম। অথচ এর একটিও আমাদের দেশে উৎপাদিত হয় না। মাদক সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ড্রাগ ট্রাফিকিং বন্ধ করতে হবে।

ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের প্রধান চোরাই পথ মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজার। র‌্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীকে এই চোরাই পথে আসা সকল মাদক যেন না আসতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে দেশে ইয়াবা নামক মাদকের বিস্তার বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক ‘ড্রাগস ইনফরমেশন’ এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে- ইয়াবা হেরোইনের চেয়েও ভয়াবহ। চিকিৎসকদের মতে, ইয়াবা সেবনের পর যেকোন সময় মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিঁড়ে যেতে পারে।

যার ফলে স্ট্রোক ও রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং হৃৎপি-ের গতি ও রক্তচাপ বাড়বে, দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাসের আগমন-নির্গমণ হওয়ার কারণে ফুসফুস কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে ধীরে ধীরে। আর এসব ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে মৃত্যু অবধারিত। ইয়াবা এতই ভয়াবহ যে, ইয়াবা থেকে সমাজ রক্ষার জন্য থাইল্যান্ড সরকার সে দেশের গণমাধ্যমের হিসেব অনুযায়ী তিন হাজারেরও বেশি ইয়াবা বিক্রেতাকে ক্রসফায়ারে দেয়। এছাড়া একে সে দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে গণ্য করা হয়। মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের শাসনামলে মাদক ব্যবসায়ীদের সরাসরি মৃত্যুদ- দেয়া হতো।

আমাদের সরকারেরও উচিত মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে পারলে সরাসরি মৃত্যুদ- দেয়া। কেননা তারা পরোক্ষভাবে সমগ্র জাতিকে ধ্বংস করছে। ১৯৯০ সালে আমাদের দেশে “মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন” করা হলে এ এখনো পর্যন্ত তা পুরোপুরি কার্যকর করা হয়নি। আইনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হলেও এ আইনের পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

সাধারণত মাদক দিবসকে কেন্দ্র করে মাদক নিয়ে আমাদের দেশে সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এটিই যথেষ্ট নয়। এজন্যে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও আন্দোলন। এছাড়া মাদকদ্রব্যের নিয়ন্ত্রণের জন্য উন্মুক্ত সংলাপের আয়োজন করা যেতে পারে। সম্প্রতি মাদকদ্রব্যের উপর শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার।

এর ফলে মাদকদ্রব্যের দাম বাড়বে এবং মাদকের ব্যবহার কমবে। কিন্তু শুধুমাত্র এটিই যথেষ্ট নয় মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য। মাদকের অপব্যবহার তরুণদের মেধা ও মননকে শেষ করে দেয়, বিনষ্ট করে সুপ্ত প্রতিভা ও সুস্থ চিন্তা। মাদক গ্রহণের ফলে শরীরের স্নায়বিক ভারসাম্য ভেঙ্গে পড়ে। মাদকদ্রব্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতি সাধন করে মস্তিষ্ক এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের।

একজন নীতিবান ব্যক্তি ও আদর্শবান মানুষ কখনো মাদক নিতে পারে না। একজন মানুষ যখন মাদকে আসক্ত হয় তখন সে নীতিহীন হয়ে পড়ে। এক জরিপে দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের প্রায় ৪০ শতাংশই কোনো না কোন সামাজিক অপরাধের সাথে সংযুক্ত। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো মাদকাসক্ত। আমাদের দেশে যে হারে তরুণ ও যুবসমাজের মধ্যে মাদকাসক্তির হার বাড়ছে তা অত্যন্ত ভীতিজনক ও আশংকাজনক।

মাদক সমস্যা সমাধান না করলে জাতি হিসেবে আমরা অনেক পিছিয়ে যাবো। নিকট ভবিষ্যতে হতে পারে এমন কোন পরিবার পাওয়া যাবে না, যে পরিবারের কেউ না কেউ মাদকাসক্ত নয়। জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও এইডসের বিস্তারের মতো মাদকও একটি জাতীয় সমস্যা। মাদকের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে এগিয়ে এলে আমাদের দেশে তথা সমগ্র বিশ্বে মাদকের মাত্রা দ্রুত হ্রাস পাবে। সচেতন তরুণ-তরুণীদের আজ এ বোধটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন “আমরা মাদকাসক্ত হয়ে অল্প বয়সেই বৃদ্ধ হয়ে যাবো না”।

মাদকের বিপরীতে তরুণেরা নিজেকে বিকশিত করে দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করে গড়ে তুলবে জাতির ভবিষ্যত উজ্জ্বল সম্ভাবনা, সেটাই হোক বর্তমান সময়ের প্রত্যাশা। : ক্যাম্পাস

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.