আমার ভিতরে আমি স্বতন্ত্র জীবন যাপন করি।
এটা আমার লিখা প্রথম গল্প। এস.এস.সি পরীক্ষা দেয়ার কিছুদিন আগে লিখেছিলাম। চট্রগ্রামের দৈনিক পূর্বকোণের সুজনেষু বিভাগে এটা ছেপেছিল ২৭/৫/২০০৫। কোন কিছু পরিবর্তন না করে ব্লগে শেয়ার করলাম।
কেমন লাগল জানাবেন।
বিশাল আয়োজন। কিন্তু একটা সমস্যা হয়ে গেছে। মুনা কিছুতেই ড্রেস বাছাই করতে পারছেনা। জোছনার আলোতে ঠিক কোন রংয়ের ড্রেসটা মানাবে কিছুতেই বুঝতে পারছে না।
আম্মুটা যে কি এত বড় একটা ঘটনা আম্মু আছে তার সিরিয়াল নিয়ে, আর আব্বুতো এখনও অফিস থেকেই আসেনি।
আজ মুনাদের পরিবার যাবে জোছনা দেখতে পাশের খোলা মাঠে। বিকেলে অনেক ভীড় থাকলেও সন্ধ্যার পর একদম ফাঁকা হয়ে যায়। এরকম ফাঁকা মাঠে আব্বু আম্মুর আর সাথে আলো আর আলো। আর ভাবতে পারছে না মুনা।
ততক্ষনে আম্মু চলে এসেছে, সিরিয়াল বোধহয় শেষ। “তোমার আব্বু ফোন করেছিল,আসছে”। মুহূর্তেই মুনার মনটা খুশীতে নেচে উঠল। আম্মু ড্রেস সমস্যার সমাধান করে দিল। হাল্কা নীল রং নাকি জোছনার আলোতে বেশ ফুটবে।
ইস!আম্মুটা এত কিছু জানে।
কলিংবেলের শব্দ হল,নিশ্চয় আব্বু এসেছে। হ্যা তাই ঘরের ভিতর ঢুকেই মেয়েকে কোলে তুলে নিল আর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল “ শোন আমরা ডিনার সেরেই বের হব,এক ফ্লাক্স কফি,দুটো মগ,বিছানার চাদর,ক্যাসেট প্লেয়ার আর আমার আম্মুর জন্য দূরবীনটা নিতে হবে। মৌরি মানে মুনার আম্মু বলে উঠল “এই বয়সে এত ঢং পাও কই? শেখর কোল থেকে মেয়েকে নামাতে নামাতে বলল “ঢং! কই?তোমার হাত ধরে জোছনায় ভিজবো আর আমার আম্মুটা দূরবীন চোখে লাগিয়ে আলোকিত আকাশ দেখবে”
-কি যে তুমি করনা। ভীষন খুশী।
মুখে বললেও মনে মনে মৌরি নিজেও ভীষন খুশী। সারাদিন সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছে। সে কি পরবে,শেখর কি পরবে সেটাও ঠিক করা। মৌরী পরবে হালকা গোলাপী রংয়ের শাড়ীর সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ,খোপায় বেলী ফুল, শেখর পরবে ধবধবে সাদা পান্জাবী সাথে চুড়িদার পাজামা।
ডিনার শেষে তারা রওনা দিল জোছনা দেখতে, পিছনে পিছনে মালপত্র নিয়ে আসছে দারোয়ান আজগর মিয়া।
****
মুরাদ উন্মুখ হয়ে বসে আছে চুলার পাশে। আজকে সে খুব আনন্দে আছে। আজ তাদের ঘরে ভাল রান্না হচ্ছে। ডাল চটচটি,মরিচ পোড়া সাথে ভাত। কতদিন পর ভাল খাবার খাবে।
এতদিন কোন বেলা শুধু্ই ভাত,কোন বেলা মাড় আর কোন বেলা কিছুই জোটেনি।
মুরাদের বাবা ইটভাঙ্গার কাজ নিয়ে এখানে এসেছে পনের দিন হল,আজ বেতন পেয়েছ। বিশাল মাঠের কোনায় ছেড়া পলিথিনের তাবুতে আজ প্রদীপ জ্বলেনি। আসমান ভাঙ্গা জোছনার আলোতে প্রদীপ জ্বালানোর কোন মানে নাই। মুরাদের আর তর সইছেনা।
কতক্ষনে রান্না হবে, কতক্ষনে খাবে এসব ভাবতে ভাবতে মুরাদ চুলার পাশেই ঘুমিয়ে গেল। হঠাৎ করেই মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গল “মুরাদ বাপ উঠ,রান্না হইয়্যা গ্যাছে…”মুরাদ ধড়ফড় করে উঠে গেল।
ফাকা মাঠে আলোর বন্যা নেমেছে। ঠিক মাঠের মাঝখানে বসে কফি খাচ্ছে শেখর আর মৌরি। মুনা মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে।
ক্যাসেট প্লেয়ারে একে একে জোছনার গান বেজে চলছে। দুজন মগ্ন হয়ে আকাশ দেখছে।
সে মাঠের এক কোণে গোল হয়ে বসে ভাত খাচ্ছে মুরাদ এবং তার মা-বাবা। চোখ মুখে পরম তৃপ্তি। পৃথিবীর কোন তৃপ্তি যেন একে ছুঁতে পারেনা।
দুটি পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। কখনো হবেওনা। একধরনের দেয়াল আছে।
।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।