< চায়া দ্যাখ কেডা রে মমিন
১
রাত প্রায় ৮টা বাজছে, এই সময়টায় শহরের কোলাহল ফিকে না হলেও গ্রামে কোলাহল ফিকে হয়ে ঘরে ফিরে যায়, শুনশান নীরবতা নেমে আসে । হালকা শীত পড়ায় নীরবতা আরও গাঢ় হয়েছে !
তার ওপর বোনাস হিসেবে থাকা জোছনাটা ঠিক কিরকম আবহ সৃষ্টি করেছে তা বোঝা ঠিক মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে, মিরা জানালায় মুখ বাড়িয়ে জোছনা দেখছে ।
সুন্দর চাঁদ
হঠাৎ হাত বাড়িয়ে একমুঠো জোছনা হাতে ধরে যেন সারা মুখে মেখে নিল মিরা
আর গুন গুন করে বলে উঠলো-
“চান্দের রানী লো, আমায় রুপ ধার দাও
তোমার সোনার ধানেরও ভোগ নাও”
মিরা এই গীত শুনেছে তার দাদির কাছ থেকে ! কোন যুক্তি নেই তবুও মিরা জোছনা দেখলেই একমুঠো জোছনা মেখে নেয় !
অযৌক্তিক আরও অনেক কিছুই করবে মিরা আজকে
যেমন অযৌক্তিক কারনেই আজকে তার বিয়ের শাড়ি বের করে পরেছে
বিয়ে হওয়া প্রায় ৩ বছর হল
সন্তান নেই
ছিমছাম সংসার
বিয়ের শাড়িতে মিরাকে ঠিক কিরকম মায়াবী লাগছে মিরা সেটা বুঝতে পারছে না
মিরার বিয়ের শাড়িটা বাক্সে অনেকদিন পড়ে থাকার জন্য ন্যাপথালিন এর গন্ধে ভরে আছে, এই গন্ধটা একদম সহ্য হয় না তার তবুও আজকে সাজার ইচ্ছা পূরণের জন্য মেনে নিতেই হবে
২
কাজল দেয়া প্রায় শেষ, চুল আঁচড়াতে তো চিরুনি লাগবে আয়না লাগবে তাই মিরা খাট থেকে নেমে আয়নার দিকে যায়
মিরা অবশ্য আয়না ছাড়াই কাজল দিতে পারে
স্কুলে তাকে সবাই এই কারনে “কাজলা মিরু” বলে ডাকতো
চুল আঁচড়াতে যেয়েই মাথায় কাটা দাগটা চোখে পড়ে তার
সিঁথির একটু পাশেই দাগটা
ঠাণ্ডা একটা মুচকি হাসি দেয় মিরা , কারন আজকে মিরার ইচ্ছা পূরণের দিন মন খারাপ করলে তো একদম চলবে না , তবে মুচকি হাসিটা মিরার মনের বিষণ্ণতাটা মুছে ফেলতে পারে নি !
মুখে এবার ছোপ ছোপ করে সস্তা পাউডারের পরত আঁকবে মিরা !
মাথায় চপচপে নারিকেল তেল দেয়ার জন্য গালে বেশ সুবিধা করতে পারছে না পাউডার বাবাজী
তেল চুইয়ে গালে এসে পড়ছে বারবার
তার ওপর বসে আছে পাঁচ আঙ্গুলের দাগ
তরকারিতে লবন কম হওয়ার জন্য এটা যেন মিরার গালে লেবেল হিসেবে এঁটে গেছে
এরকম কত লেবেল এঁটে আছে মিরার শরীরে
মাথায় কাটা দাগ
পায়ে কালসিটে পড়ে আছে
পিঠে চলেছে খাণ্ডবের লাঙ্গল
আরও কত দাহন
৩
মিরার সাজা শেষ, পায়ে আলতা পরাও শেষ ! আলতার ডিব্বা কতদিন আগে আনা হয়েছিল তা মিরার মনে নেই
সামান্য পানি মিশিয়েছে আলতার সাথে
আলতায় পানি মেশানোর সময়ও আলতো বিষণ্ণ হাসিটা ছিল মিরার মুখে
বিদ্যুৎ চলে গেল কিছুক্ষন আগেই,
তাই
সাজা শেষে মিরা কুপির আলোয় নিজেকে দেখছে,
কুপির আলোয় মিরার চেহারা অলৌকিক সুন্দর হয়ে উঠেছে
আয়নায় নিজেকে দেখছে আর ফুঁপিয়ে কাঁদছে মিরা
চোখের জলে লেপটে গেছে কাজল
৪
রাত দশটা
এই সময়টাতে টলতে টলতে ঘরে ফিরে মিরার স্বামী
দরজায় কড়া নাড়তে থাকে অবিরাম
ওদিকে সিলিং এর সাথে ঝুলে ওপর ফাঁপর চড়ে বসেছে মিরার
দম যেতে তার অনেক বাকি !
অবিরাম সারা শরীরে ঝাঁকুনি দিতে থাকে সে
মিরার স্বামী আলতাব মিয়া অনেকখানি চটে গেছে দরজা খোলার দেরী দেখে
মিরার ১৪ পুরুষ উদ্ধার করা শেষ, দরজার বাইরে থেকে গালিগালাজের বর্ষণ করতে থাকে আলতাব মিয়া
দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে খিল সরে আসে
দরজা খুলে একদম হা হয়ে যায় আলতাব মিয়া
সিলিং-এ ঝুলছে মিরা
তিন বছর আগে যেই সাজে ঘরে তুলেছিলো মিরাকে সেই সাজে আজ মিরা নিথর
অত্যাচারের মাত্রা কতটা পরিমান অসহ্যকর হলে একটা মানুষ নিজের জীবন হনন করে,
জোছনার কাছেই প্রশ্ন রেখেছিল মিরা .........
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।