জয়দেব কর
আমি জন্মান্ধ হোমার
তুমি এসে গেলে জ্বর নিভে হয় কঠিন বরফ
হাপরের সঙ্গ ছেড়ে ওরা ওঠে হিমালয় শিরে
যেন কপোলের লোনা জল যায় ফিরে নিজ নীড়ে
হে বন্ধু আমার, ভুলে যাও মিছে ইষ্টনাম জপ।
দেখো অনাগত মহাকাল চেয়ে রয়েছে ক্ষুধায়
গলিত জলের বুক জুড়ে আছে শুধু হাহাকার,
দীর্ঘাকার রূপালি ডানায় এই সময় তোমার
শৈশবের নিরাকার দিন ফিরে আসুক সুধায়।
আমাদের ফসলের মাঠে সোনালি ঝিলিক আনো
কাক-তাড়ুয়ার সরু কাঁধে ফিঙে গড়ুক আস্তানা,
উগারের প্রাণ হয়ে যাক আমাদের শস্যদানা
সোনালি পাতার গুচ্ছ হোক পৌষের হিম মাখানো।
চিলের ডানার মতো যেন থাকে ভ্রূজোড়া তোমার,
তুমি মোর ইলিয়াড বন্ধু আমি জন্মান্ধ হোমার।
গন্ধমাতাল সন্ধ্যারাতে
অজস্র সহস্র বছরের পর প্রেম দ্রোহ বিরহের
অসুস্থ সুন্দর গন্ধমাতাল প্রতিটি সন্ধ্যা রাতে
নিজের হাতের মুঠোয় অবাধ্য আমি
দুর্বোধ্য সকল গদ্যশরীরের বর্ণিল লোহিতে পুষি
বর্ণচোরা ডাকাতের দল।
যোগ আর বিয়োগের ধারাপাত মেনে
শুন্যতায় আর পূর্ণতায়
প্রতীক্ষার তন্দ্রাহীন অপূর্ব বিস্ময়
উন্মুখ আমাকে সমূহ পন্থায়
বেদখল করে দখলের নামে!
অজস্র সহস্র বছরের প্রেম দ্রোহ বিরহের
অসুস্থ সুন্দর গন্ধমাতাল প্রতিটি সন্ধ্যারাতে
আমি হাঁটি
আমি থামি
দৃশ্যের ভিতরে,দৃশ্যে
হৃদয়ের ভিতরে, হৃদয়ে
শরীরের ভিতরে, শরীরে
পথের ভিতরে,পথে।
গোলাপ ফোটাও
এই পৌত্তলিক নগরীর শূন্য মন্দিরে আসো হে
মহাশ্বেতা, স্বমূর্তিতে তুমি; আমি অর্চক তোমার
প্রেমিকের পূজা লও এসে, জ্যন্ত ঈশ্বরী আমার
পুরুষেরে বলি দেবো আজ শুধু প্রাপ্তির বিরহে।
চলে এসো নীলজ্যোৎস্নার মাতোয়ারা দ্যুতি নিয়ে
অন্য এক মধু-যন্ত্রণায় _ আসো উর্বর জমিন
প্রতীক্ষার ক্ষয়িষ্ণু বাস্তবে আছি পাপ-পূন্যহীন
নদী আর পাখিদের গানে দৈত্যদাহন নিভিয়ে
বিশুদ্ধ যাজ্ঞিক অঞ্জলির তীব্র তৃষাতুর প্রাণে
খোলাবুকে রংধনু উড়িয়ে বিশ্বাসের বিষ ছাঁকো
ভাঙ্গনের মউ মেখে নিয়ে অনিন্দ্য আযাদি গানে
পৌরাণিক বিধাতার বুকে বাতিলের চিহ্ন আঁকো।
অশান্ত বৈশাখী ঝড় পোষো নীলাভ চোখের কোণে
গোলাপ ফোটাও রাশি রাশি ঠোঁটে ঠোঁট আবাহনে।
বারান্দার চালে একটি দোয়েল
(উৎসর্গঃ সুপ্রিয় পূর্বসূরি হুমায়ুন আজাদকে)
সর্পশরীরে ভীষণ কৃষ্ণাঙ্গ হিমকাল
স্বতন্ত্র শোকার্ত আমাদের জবর শীতার্ত
করে সান্দ্রস্পর্শে আজকাল!
প্রাথমিক প্রথম পাঠ্য বইয়ের ঐ-সব
পাতায় পাতায় সাদাকালো শ্বাপদেরা
হুঙ্কারে কম্পিত করে,
ভেংচি কাটে বিপন্ন শৈশবে!
জড়িয়ে ধরতে এসে লজ্জায় কুঁকরে ওঠে
অভিসারিকা আমার, হৃৎপিণ্ডে
সিগারেট হাতে মগ্ন অন্য পুরুষ দেখে!
ঘুম যায় প্রগতির দেবতারা,
সামান্য মেঘলা দিনে রাষ্ট্রমগজের মাঝে
বড়ো যত্নে রাখা ঐশী বানীর অমন
বর্ণময় গন্ধময় প্রভুময় পূজ্যমান অদৃশ্য পায়েতে।
আমাদের আততায়ী?
_ আমরাই!
আমাদের শীর্ণ ভবিষ্যত?
_ আমরাই
আমরা শুনতেই পারছি না
আজাদ আজাদ শব্দে মাত করে দিচ্ছে
কোনো এক বারান্দার চালে শিসভোলা একটি দোয়েল!
আমরা-তো জানিই না দু’টাকার নোট থেকে
বের হয়ে আসা এই আচানক কৃষ্ণবর্ণ
দোয়েলের নাম _ বাংলাদেশ
এই সব শাড়িদের নারী
এখানে কখনো নেই
নিয়মের গতি স্বাভাবিক
রঙের বাহার নেই
ঘড়িদের কাঁটা নেই
স্রষ্টাপুতুল অসাড়ে নাচে
বণিকের চোখে ধিকধিক;
এইখানে _ এই সব স্থানে
সুর নয় ছন্দ নয়
এ-যে অর্বাচীন আমাকেই টানে !
সঙ্গমে সচ্ছল গেরস্থের মতো
পাড়ায় পাড়ায় বিধাতার বাড়ি
চারদিকে মানুষ পালায় মানুষ দাঁড়ায়;
তবু ওড়ে তবু খসে
রহস্যের ঝলমল শাড়ি।
এইখানে নির্বাধ পুর্ণিমারাতে
অচিন সুরের ঘোড়া
বেহেলার তার ছেঁড়ে;
প্রেমে নয় কামে নয় দ্রোহে নয়
তবু যেন কাছে রয় অন্যভাবে
এই সব শাড়িদের নারী !
পদ্য ও গদ্য
কুমারী তোর পদ্য লেখার বয়স হলে শেষ
গদ্য লিখিস রঙ মাখিয়ে লাগবে তখন বেশ!
আমার মতন লিখিস কন্যা দাঁড়ি কমা ছেড়ে
দুর্বা ঘাসের হরিৎ ভুবন বেবাক যাবে বেড়ে!
একটি দোয়েল দুইটি দোয়েল যখন দেবে শিস
কলম খাতায় মিশিয়ে দিস গোখরো সাপের বিষ!
চারদিকেতে দোয়েল-কোয়েল কমলালেবুর হাটে
তুলছে নিলাম অস্থি-মজ্জা পদ্য লেখার মাঠে।
শোন কুমারী, পদ্য এখন ইটের ভাটার মতো
স্থরে স্থরে ছন্দ-শব্দ পুড়ছে অবিরত।
আমাকে চাইতে হয়
আমাকে ফেরাতে স্বতন্ত্র দূরত্ব নিয়ে এসেছিলো যারা
সকলেই খালি হাতে ফিরে গেছে, যার যার মতো করে;
কারো কারো হাতে ছিলো মৃত্যুবর্ণ জ্যোতির্ময় আয়ুধ!
কারো কারো হাতে ছিলো ভালোবাসার চেয়েও শিল্পিক ফুলের তোড়া!
নিশ্বাসের সতেজ কসম
আমি কাউকেই ফিরিয়ে দিই নি।
কাউকেই লুণ্ঠন করি নি।
তবুও ওদের বৈমুখ মূর্তিতে ভেসে ওঠা লুণ্ঠনের চিহ্ন
সুদূর হাওরে নিসঃঙ্গ রাখাল-কণ্ঠের
তীব্র আকাঙ্ক্ষার মতো দংশন করে।
কিন্তু!
আমার নিষিদ্ধ ও অনুমোদিত স্বপ্নে
নিষিদ্ধ ও অনুমোদিত বাস্তবতায়
আমাকে চাইতে হয়
আমি চাই
কেউ একজন আসুক বারেক
কেউ একজনকে আসতে হবে
বিশুদ্ধ ব্যাধের ভূমিকায়
মৃত্যুকে চরম ক্ষুধার্ত করার স্বচ্ছলতা নিয়ে।
অপরিচিতা
কে তুমি বৃক্ষের মতো নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে আছো পথে
পৃথিবীর? আরণ্যক আমি চৈত্র-ফাগুনের তৃষ্ণা
সাজিয়ে এনেছি দেখো; গোখরার খুনিয়া বিষ না!
সে-তুমি কয়েক নদী ঢেলে দাও জল তৃষ্ণাক্ষতে।
যে-তুমি সোনালি সন্ধ্যা দেখো নি যুগল প্রতিমায়
আলিঙ্গনে জ্বলে ওঠা ধুওদানি সময়ের বুকে
সে-তোমার শূন্যপৃষ্ঠা ভরে দেবো শুদ্ধ কবিতায়
পড়ে নিয়ো বারবার উষ্ণতায় কাঁপা-কাঁপা সুখে।
রহস্যের অন্ধকার আমাদের পাড়াগাঁয় আজো
নিবিড় হিতৈষী হয়, দিয়ে ডুব নৈঃশব্দে তোমার
ভেঙ্গে দেয় চারিদিকে সবান্ধব নদীদের পার
ভেঙ্গে দেয় লিঙ্গহীন নপুংসক বিধাতার রাজও।
শান্ত দিঘির মতো তুমি আর তোমাদের দিনে
চোখে চোখ সঁপি আমি একরাশ অপার্থিব ঋণে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।