আপনি আমাকে পছন্দ করেন কি করেন না তাতে আমার কিছু যায় আসে না, আপনাকে খুশি করার জন্য আমি এ পৃথিবীতে আসিনি।
বন্ধুদের সাথে আড্ডাতে আমরা এক একজন তো বলা যায় বিশেষজ্ঞ হয়ে যাই। আর ব্লগে লিখতে গেলে তো মাশাল্লাহ আমরা বুদ্ধিজীবী! আমাদের মধ্যে এমন কয়জন আছি যারা মঞ্চে উঠে বক্তৃতা দিয়েছি? অনেক বেশি বক্তৃতা দেয়ার অভিজ্ঞতা থাকলে পরে আর তেমন কোন ব্যাপার মনে হয় না কিন্তু জীবনের প্রথম বক্তৃতা দেয়ার অভিজ্ঞতা আসলেই অন্য রকম।
আমার প্রথম অভিজ্ঞতা হয় আমি যখন সিক্স কি সেভেনে পড়ি। আগেই বলে রাখা প্রয়োজন আমি জীবনে ডিবেট করিনি, কোন কুইজে অংশ নেই নি, গান তো পারি ই না।
এক্সট্রা কারিকুলার কিছুই করি নি। স্কুলে পড়ালেখা, গল্প করা, আর ক্রিকেট ফুটবল খেলা- বন্ধুদের সাথে এসব করেই আমার দিন কেটে যেত। ক্রিকেট ফুটবল খেলাকে এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটি বলতে চাই না, কারণ স্কুল থেকে কোন খেলা আয়োজন করা হলে তাতে আমি কোনদিন খেলতাম না। এ সম্পর্কে একটা মজার ঘটনা বলি। স্কুলে থাকতে আমার একটা বন্ধু খুব ভাল ছবি আঁকত।
ওকে দেখতাম টেন্ডুলকার, ওয়াসিম আকরামের ছবি হুবহু একে ফেলত। আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখতাম আর উৎসাহ দিতাম। যাইহোক, কেন যে ও বরাবর ড্রয়িং পরীক্ষাতে খারাপ করত আমরা ভেবে পেতাম না। আমাদের এক বন্ধু মজা করতে বলত, আরে পরীক্ষার সিলেবাসের ড্রয়িং যে লেখাপড়া(!) তাই সে পারে না। যদি এটা লেখাপড়া না হত তাহলে এটাও সে ভাল করত!
অনেক আজাইরা পেচাল পাড়লাম এবার আসল ঘটনাতে ফিরে আসি।
আমাদের এক স্যার আমাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করতেন মাঝে মাঝেই। উনি আমাদের ইংরেজি পড়াতেন। একবার এক অনুষ্ঠানের আগে উনি আমাদের বলে দিলেন এবার মঞ্চে উঠে বক্তৃতা দিতে হবে। আমরা সবাই না না করে রব তুললাম। স্যার তো নাছোড়বান্দা! না দিতেই হবে, আবার তাও দিতে হবে ইংরেজিতে! আমরা ভয় পেয়ে গেলাম।
স্যার সাহস দিয়ে বললেন আরে ভয়ের কিছু নেই কারা কারা বক্তৃতা দিবে আগেই ঠিক করা থাকবে। ওরা আগে থেকে কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেই হবে। স্বাভাবিক ভাবেই আমি ঐ লিস্টে ছিলাম না। অনুষ্ঠানে আমরা বন্ধুরা একসাথে মজা করে গেলাম। প্রথমে কুইজ হল, আরো অনেক কিছু হল বিস্তারিত বলছি না।
যাইহোক খাবার আগে আমাদের অতিথিরা কিছু বললেন। তার পরে স্টুডেন্টদের বলার পালা। এক এক করে থ্রি ফোরের বাচ্চারা বক্তৃতা দিল। ওদের ইংরেজি শুনে যারা বাইরে থেকে এসেছে ওরা তো অবাক। আগে থেকে ঠিক করা লিস্ট থেকে এক বড় ভাই নাম ডাকছে আর একজন একজন করে উঠে যাচ্ছে বক্তৃতা দিতে।
কেঊ ভুল কিছু বললে আমরা মজা করে চিৎকার দিচ্ছি। কুইজের রেজাল্ট দিতে একটু দেরি হচ্ছে তাই ভাইয়া দেখলাম লিস্টের বাইরে থেকেও দুই একজনকে ডাক দিল। এবার আমাদের তো ভয়ে জান হাতে, কি আজব এটা কি! এই সময়ে আমার নাম ডাকা হল। আমি তো বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গেলাম। আগেই বলেছি আমার এসবে কোন অভিজ্ঞতা নেই, তার উপর কোন প্রস্তুতি ছাড়া ইংরেজিতে এত দর্শকদের সামনে কথা বলতে হবে।
ভাইয়া আবার আমার নাম ধরে ডাক দিল। আমি তো ভাবলাম দৌড় দিয়ে পালাই! এক বন্ধু আমাকে ঠেলে দাড় করিয়ে দিল। ইচ্ছে করছিল ওর পাছায় একটা লাত্থি মারি, আর বড় ভাইরে ইচ্ছে করছিল গুলি করি। যদি পিস্তল থাকত করেও দিতে পারতাম! কি আর করা পালাবার উপায় নেই। কাপা কাপা পায়ে মঞ্চে উঠে গেলাম।
মাইকে কথা বলতে গিয়ে অন্য রকম অভিজ্ঞতা। নিজের কথা এত জোরে নিজে শুনে তো আমার জিব্বায় পেচ লেগে যাওয়ার অবস্থা। ভাবলাম এখনো সময় আছে, পালাই! বুদ্ধি করে আগে যারা বক্তৃতা দিয়েছে তাদের কিছু লাইন মনে করে বলে দিলাম। কিন্তু টাইম তো পার হয় না, চার পাচ লাইন বলার পরে আমার তো বলার আইটেম শেষ হয়ে গেল। এদিকে এতক্ষণ আমরা পিছন থেকে পচাইছি, এখন একজন হটাত করে বলে উঠল, কিরে বাসা থেকে মুখস্ত করে আসনি! মেজাজ গেল পুরা বিলা হইয়া।
আরে হারামি, আমি কি জানি নাকি আমাদের মঞ্চে উঠতে হবে! কোনমতে আরো দুই এক লাইন বলে থাঙ্কু বলে কথা শেষ করে আমার সিটে ফিরে আসলাম। সিটে ফেরত আসার পরে বন্ধুরা উৎসাহ দিতে লাগল, আরে দোস্ত ভালই বলেছিস, আমরা হলে তো এক লাইনও বলতে পারতাম না! শুনে নিজেকে আমি কি হনুরে টাইপ মনে হতে লাগল।
পরের দিন ক্লাসে গেলে স্যার বলল, "তোমরা তো ভালই বলেছ। আমার জীবনের প্রথম বক্তৃতা দিতে গিয়ে আমি মঞ্ছের পিছনের পর্দার নিচে দিয়ে পালিয়েছিলাম!" শুনে আমি মনে মনে বলি, "স্যার, আমিও পালাতাম কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের পর্দার ওপাশে দেয়াল ছিল, তাই পারিনি!" আহা! সেইদিনের কথা মনে হলে এখনো গায়ে কাটা দেয়। আর এখন আমি কারণে অকারণে এত বেশি লেকচার দেই যে আমার বন্ধুরা আমাকে লেকচারার ডাকে।
আমার কথা তো অনেক বললাম। আপনাদের এমন কোন অভিজ্ঞতা থাকলে শেয়ার করতে পারেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।