আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবার বন্ডের আড়ালে প্লেসমেন্ট ব্যবসা করবেন সালমান



রূপান্তরযোগ্য বন্ড গঠনের আড়ালে আবারও প্লেসমেন্ট ব্যবসার ফন্দি এটেছে সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন নর্দান পাওয়ার সলিউশন লিমিটেড। তড়িঘড়ি করে বন্ডটির অনুমতি দিতে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) বুধবার বিশেষ জরুরি সভার আহ্বান করেছে। কমিশনের রেকর্ড ভেঙে বন্ডের প্লেসমেন্ট ব্যবসার সুযোগ করে দিতে বুধবার কমিশনের সভায় নর্দান পাওয়ার সলিউশনের প্রস্তাবটি পাস করা হবে বলে জানা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাজার পতনের পর বিভিন্ন কোম্পানির প্লেসমেন্ট ব্যবসা বন্ধ থাকলেও এবার রূপান্তরিত বন্ডের মাধ্যমে নতুন পদ্ধতিতে এসইসি আবারও নর্দান পাওয়ার কোম্পানিকে প্লেসমেন্ট ব্যবসার সুযোগ করে দিচ্ছে। অনেকটা গোপনে জরুরি সভা ডেকে এ বন্ডের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, সালমান এফ রহমানের চাপে এসইসির চেয়ারম্যান জিয়াউল হক খন্দকার বিষয়টির অনুমতি দিতে তড়িঘড়ি করে বিশেষ সভার আহ্বান করেছে। আর এ কাজে নর্দান পাওয়ার সলিউশনের পক্ষে কাজ করছেন এ প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ শেয়ার অধিগ্রহণকারী বেক্সটেক্স কোম্পানির মালিক সালমান এফ রহমান। আর এর সঙ্গে যুক্ত আছেন নিউ ইংল্যান্ড ইক্যুইটির মালিক লুৎফর রহমান বাদল। ১৮ শতাংশ সুদে রূপান্তরিত এ বন্ডের অভিহিত মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে একপ্রকার প্লেসমেন্ট ব্যবসা করার আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নর্দান পাওয়ার সলিউশন লিমিটেড রূপান্তরযোগ্য বন্ড ইস্যু করে ১৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য গত ৩০ মার্চ এসইসিতে একটি আবেদনপত্র জমা দেয়া হয়।

একইসঙ্গে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) বন্ডটির ট্রাস্টির দায়িত্ব পালনের অনুমোদনের জন্যও আবেদন জানায়। ওই আবেদন পাওয়ার পরপরই তড়িঘড়ি করে বন্ডটি অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু করে এসইসি। আবেদন পাওয়ার পর মাত্র তিন কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাস্টির দায়িত্ব পালনের জন্য আইসিবিকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। একই দিন বন্ড ইস্যু করে অর্থ সংগ্রহের অনুমোদনের জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করে কমিশনের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু ওইদিন কমিশনের একজন সদস্য অনুপস্থিত থাকায় কোরাম পূর্ণ হয়নি।

তাই বৈঠকের তারিখ পূনর্নিধারণ করা হয়। শুধু নর্দান পাওয়ারের বন্ড অনুমোদনের জন্য বুধবার কমিশনের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। এসইসিতে দেয়া আবেদন অনুযায়ী, নর্দান পাওয়ারের প্রস্তাবিত ১৭৫ কোটি টাকার বন্ডের পুরোটাই প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। এর বার্ষিক সুদের হার রাখা হয়েছে ১৮ শতাংশ। ৬ মাসের অবকাশকালসহ (গ্রেস পিরিয়ড) বন্ডের মেয়াদ ধরা হয়েছে সাড়ে ৪ বছর।

অবকাশকাল শেষে প্রতি তিন মাস পরপর বন্ডধারীদের নির্ধারিত হারে সুদ প্রদান করা হবে। প্রতি এক বছর পর মূল বিনিয়োগের ২৫ শতাংশ হারে পরিশোধ করা হবে। মূল বিনিয়োগের অর্ধেক নগদ অর্থে এবং বাকি অর্ধেক কোম্পানির শেয়ার প্রদানের মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে বন্ডের বিনিয়োগকারীরা অভিহিত মূল্যে (১০ টাকা) নর্দান পাওয়ারের শেয়ার পাবেন। এদিকে, নর্দান পাওয়ারের প্রস্তাবিত বন্ডের সুদের হার এবং শেয়ারে রূপান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

ব্যাংকিং খাতে ১৩-১৪ শতাংশ হার সুদে ঋণ পাওয়ার সুযোগ থাকলেও কী কারণে কোম্পানিটি ১৮ শতাংশ সুদে বন্ড ইস্যু করছে তা অনেকের কাছেই বোধগম্য নয়। ব্যাংকে আমানত রেখে যে হারে সুদ পাওয়া যায় তারচেয়ে কমপক্ষে ৬ শতাংশ বেশি সুদ দেয়ার পরও অভিহিত মূল্যে শেয়ারের রূপান্তরের সুযোগ প্রদানের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, এসইসির বিধি অনুযায়ী কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা পূর্ণ হলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক। গত ডিসেম্বরে কোম্পানিকে ৯০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহের অনুমোদন দেয়ার সময় এসইসি আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসার শর্ত বেঁধে দিয়েছিল। ফলে নর্দান পাওয়ারকে এক বছর পরই পুঁজিবাজারে আসতে হবে।

কোম্পানির আইপিওতে অভিহিত মূল্যের অতিরিক্ত (প্রিমিয়াম) অর্থ সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া তালিকাভুক্তির পর শেয়ারবাজারে কোম্পানির শেয়ার অভিহিত মূল্যের চেয়ে বেশি দরে লেনদেন হওয়াই স্বাভাবিক। ওই সময় কোম্পানির ইস্যুকৃত বন্ডকে অভিহিত মূল্যে শেয়ারে রূপান্তর করা হলে বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের পাশাপাশি বন্ডে বিনিয়োগকারীরাও পুঁজিবাজার থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা তুলে নেয়ার সুযোগ পাবেন। তালিকাভুক্তির আগেই কোম্পানির উদ্যোক্তা ও তাদের ঘনিষ্ঠজনদের জন্য বিপুল মুনাফার সুযোগ তৈরি করে রাখার জন্যই রূপান্তরযোগ্য বন্ড ইস্যু করা হচ্ছে বলে কেউ কেউ ধারণা করছেন। জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১২ অক্টোবর নর্দান পাওয়ার সলিউশন লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রাথমিকভাবে এ কোম্পানির উদ্যোক্তা ছিলেন রাজশাহী থেকে নির্বাচিত সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. এনামুল হক। প্রাথমিকভাবে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছিল ৫০ লাখ টাকা। এরমধ্যে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের নামে ৪০ লাখ এবং তার স্ত্রী তহুরা হকের নামে ১০ লাখ টাকার শেয়ার ছিল। পরে বেঙ্মিকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বেঙ্টেঙ্ লিমিটেডের কাছে ৫০ লাখ টাকার শেয়ার ইস্যু করে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৯০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৯১ কোটি টাকা উন্নীত করার জন্য এসইসিতে আবেদন করা হয়।

২৭ ডিসেম্বর এসইসির পক্ষ থেকে এরমধ্যে ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের নামে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৪ কোটি ৫০ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার ইস্যু করে ৪৫ কোটি ৩ লাখ টাকা এবং বেঙ্টেঙ্ লিমিটেডের নামে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ৭০ হাজার শেয়ার ইস্যু করে ৪৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহের অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু এসইসি শুধুমাত্র বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহের অনুমতি দিলেও কোম্পানির পরিচালকরা শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি (আরজেএসসি) থেকে প্রাপ্ত রিটার্ন অব এলটম্যান্টে দেখা যায়, এসইসির পক্ষ থেকে দুই শেয়ারহোল্ডারের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহের অনুমতি দিলেও কোম্পানির শেয়াহোল্ডার সংখ্যা বেড়ে আটে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে রয়েছেন- ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক (৪৯.৮৭%), বেক্সটেক্স লিমিটেড (৪৯.৯৭%), তহুরা হক (০.১১%), মোসলেহউদ্দীন (০.০১%), মমিনুল ইসলাম (০.০১%), নিউ ইংল্যান্ড ইক্যুয়িটি লিমিটেড (০.০১%), শোর ক্যাপিটাল হোল্ডিংস লিমিটেড (০.০১%) এবং ক্রিসেন্ট লিমিটেড (০.০১%) Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.