পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি
( স্পয়লার এলার্র্ট)
প্রথম দিকে ছবিটা নিয়ে তেমন আগ্রহ পাইনি। সোয়ান লেক সেই ১৮৭৫ সাল থেকে উপস্থাপিত বিখ্যাত রাশিয়ান ব্যালে। প্রায় দেড়শ বছর ধরে এই ব্যালে এত বার প্রযোজিত, উপস্থাপিত, বিবর্তিত , উন্নত - ইত্যাদি হয়েছে যে সেই একই চর্বিত চর্বণ ভেবে ছবিটা পেয়েও দেখা হয় নাই। এক রাতে- শরীর ও মন যখন যথেষ্ট খারাপ এবং মন আর কোন কাজের চাপ নিতে রাজি নয়- স্রেফ খেয়াল বশে ছবিটার ট্রেইলার দেখলাম - এবং বুঝলাম - না দেখাটা ভুল হবে। এখানে উল্লেখ্য- আমি হরর মুভির সেই রকম ফ্যান ।
অনেক দিন থেকে কোন ভালো হরর তৈরী হচ্ছে না ( সব রকমের প্লটই কোন না কোন ভাবে আগে তৈরী হয়ে গেছে) বলে বেশ হতাশ।
তো দেখা শুরু করলাম- আমার মত যারা ছবিটা সোয়ান লেক নামক ব্যালে বা হরর ড্রামা ভেবে শুরু করবেন , তারা বিরাট ভুল করবেন। আসলে ছবির ট্রেইলার দেখলে মনে হয় যেন হরর মুভি।
ব্ল্যাক সোয়ান - ছবিটা মনযোগ দিয়ে দেখার মত একটা ছবি। ছবির মূল চরিত্র নিনা নামের একটি মেয়ে যে শহরের বিখ্যাত ব্যালে কোম্পানিতে অনেক দিন ধরেই নাচে।
আর সবার মত তারও ইচ্ছা, সোয়ান লেকের বর্তমান সোয়ান কুইন বিদায় নিলে ঐ জায়গাটা তার নিজের পাওয়ার। হবেই বা না কেন? বছরের পর বছর, দিন রাত ২৪ ঘন্টা সে নিজেকে শুধু ব্যালের জন্যই তৈরী করেছে - তার ধ্যান , জ্ঞান, প্রেম, অবসেশন - সবটাই ব্যালে। আসুন, ছবিতে প্রবেশের আগে , সোয়ান লেকের কাহিনী সংক্ষেপ জানি।
ওডেট একজন অভিশপ্ত রাজকন্যা যে রথবার্টের অভিশাপে রাজ হাঁসে পরিণত হয় দিনে, কেবল রাতেই তার অপরুপ সুন্দর মানবী রুপ বের হয়ে আসে। চিরবন্দিনী ওডেট মুক্তির জন্য কাতর কিন্তু নিরুপায়।
তাকে অভিশাপ মুক্ত করতে পারবে একমাত্র অনুগত ও সত্য প্রেম, চিরন্তন হলে। রাজপুত্র সিগফ্রেড ওডেটকে (সাদা রাজহাঁস) দেখে প্রেমে পড়লে এবং সব কিছু জেনে শুনে চিরন্তন আনুগত্যের প্রতিজ্ঞা করলে রথবার্ট তার কন্যা ওডেলকে (ছবিতে ওডেট এর ইভিল টুইন, কালো রাজহাঁস) ওডেট সাজিয়ে এই প্রেম ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয় । সফলও হয়, যখন রাজপুত্র ওডেলকেই তার প্রেম ভেবে বিয়ের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। ভগ্ন হৃদয় ওডেট শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করে চির আকাঙ্খিত মুক্তি পাওয়ার জন্য।
এখন ছবিতে গল্পটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ না।
কারণ ছবিতে নিনা ও নিনার মনস্তত্ত্বই প্রধান। নিনা এতই সহজ, সরল মিষ্টি একটা মেয়ে যে তার পক্ষে ছলনাময়ী, লাস্যময়ী (সিডাক্টিভ) কালো রাজহাঁসের অভিনয়টা হচ্ছিলো না। সে পবিত্র ও সুন্দরের প্রতীক হোয়াইট সোয়ান খুব সহজেই নাচতে পারছিলো , কিন্তু অসুন্দর- ষড়যন্ত্র ও স্বার্থপরতার প্রতীক ব্ল্যাক সোয়ান এর কোন বৈশিষ্ট্যই যেন তার ভিতরে অনুপস্থিত। নিনা, এটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেয়- সে একজন নিঁখুত ব্যালেরিনা। ব্ল্যাক সোয়ানকে সে পারফেক্ট করেই ছাড়বে!
ছবির গল্প এর পর আবর্তিত হতে থাকে নিনার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে।
নিনা এমনিতেই ভয়াবহ নার্ভাস ( পিঠ আঁচড়ানো ঘুমের মধ্যে) । তার উপরে একজন পারফেকশনিস্ট। এই পারফেকশন অর্জন করতে গিয়ে সে পুরনো " সোয়ান কুইনের" জিনিস পত্র চুরি করে । এই পারফেকশন তার অবসেশন এ পরিণত হলে সে তার স্বভাব বিরুদ্ধ কাজ গুলোও করে। কিন্তু,
" মানুষ যখন তার আত্মার বিরুদ্ধে কাজ করে, সে নিজেকেই ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
"
নিনার নিজের "খারাপ" হওয়ার ইচ্ছা বা চেষ্টা মনে হয় না দেখানো হয়েছে ছবিতে। বরং পারফেকশনের জন্য তার ডেশপারেশন তাকে শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে ঠেলে ফেলেছে , সেইটাই ছবির উপজীব্য মনে হয়েছে আমার কাছে। পারফেক্ট ব্ল্যাক সোয়ান হতে গিয়ে তাই নিনা নিজেকে, মানে হোয়াইট সোয়ানকেও ধ্বংস করে ফেলে।
এখানে নাটালি পোর্ট্ম্যানকে বিশাল অভিনন্দন - একজন অল্প বয়স্ক , পারফেকশনিস্ট, ডেস্পারেট ব্যালেরিনার মনস্তত্ত্বকে অত্যন্ত সফল ভাবে উপস্থাপনের জন্য।
সেই সাথে অভিনন্দন ডাইরেক্টরকেও , একটা সাইকোলজিকাল মুভিকে , মুভির হ্যালুসিনেশন অংশ গুলোকে এত রিয়েল করে ফুটিয়ে তুলতে পারার জন্য।
এইটা ঠিক, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে নিনার সাথে একাত্ব বোধ করলে (আবারো নাটালির কৃতিত্ব) ছবির শেষের দিকে নিনার পরিবর্তন গুলো সহ্য করা কঠিন।
( মাত্রাতিরিক্ত ডেস্পেরাশন অথবা অবসেশন এর ভালো বাংলা প্রতিশব্দ কি হতে পারে?)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।