খুব সহজ করে বলতে গেলে, ব্ল্যাক হোল হচ্ছে মরে যাওয়া তারা। অপঘাতে মৃত অনেক মানুষ যেমন মরে গেলে ভূত হয়ে যায়, তেমনি তারারা মরে গেলে হয় ব্ল্যাক হোল। যেই শোনা, ওমনি হয়তো ক্যাঁক করে আমাকে চেপে বসলে, অপঘাতে মানুষ মরলেই কি আর ভ‚ত হয়? হুমম, তা সবাই হয় না বটে! কিন্তু তারার ভূতই হলো ব্ল্যাক হোল। দাঁড়াও, বুঝিয়ে বলছি।
তারা কী, তা তো নিশ্চয়ই জেনে গেছো।
তারা বা নক্ষত্রের কিছু জ্বালানি থাকে, যেগুলো রাসায়নিক বিক্রিয়া করে তাপ ও আলো উৎপন্ন করে। তাপ ও আলো মূলত শক্তির দুইটি রূপ। যখন কোনো তারার জ্বালানি ফুরিয়ে যায়, সেটা তো তখন আর রাসায়নিক বিক্রিয়া করে শক্তি উৎপন্ন করতে পারে না। করবে কীভাবে, ওর তো জ্বালানিই নেই! তখনই তারাটা মরে যায়। এরমধ্যেই কিন্তু তারাটির ভিতরে এক বিশাল ঘটনা ঘটে যায়।
ঘটনাটা আমাদের সূর্যকে দিয়েই বোঝাই। সূর্যের জ্বালানি হলো হিলিয়াম। সূর্যের ভেতরে তো প্রচণ্ড গরম, তাই সেখানে কোন কিছুই স্থির থাকতে পারে না। খুব গরম পড়লে তুমি খুব লাফালাফি করো না? সেরকমই আর কি। তো হিলিয়াম কণাগুলোও প্রচণ্ড গরমে অনবরত ছোটাছুটি করে।
এই ছোটাছুটি করতে গিয়ে হিলিয়াম কণাগুলো অনবরত একটার সঙ্গে আরেকটার ঠোকাঠুকি হচ্ছে। আর তা এতোই জোরে হচ্ছে যে, দুইটা হিলিয়াম কণা ঠোকাঠুকি করে একটা কণা হয়ে যাচ্ছে। আর মজার ব্যাপার কি জানো? দুইটা হিলিয়ামের ভেতরে যে মৌলিক উপাদানগুলো থাকে, একটা হাইড্রোজেন কণাতেও সেই পরিমাণেই ওই উপাদানগুলো থাকে। তাই দুইটা হিলিয়াম কণা মিলে যখনই একটা কণা হচ্ছে, তখন আর সেটা হিলিয়াম থাকছে না। সেটা হয়ে যাচ্ছে হাইড্রোজেন।
মজার ব্যাপার না?
এখন ঘটনা হলো, দুইটা হিলিয়ামের যেই ভর, একটা হাইড্রোজেন কণার ভর তারচেয়ে বেশি। কিন্তু আকারে হাইড্রোজেনের একটি কণা দুইটি হিলিয়াম কণার চেয়ে ছোট। ফলে, দিন দিন আমাদের সূর্যের আয়তন কমছে, আর ভর বাড়ছে। ভাবছো, এই ভর আবার কি জিনিস? আমরা যে ওজন মাপি, ওটাই আসলে ভর। ওজন অন্য জিনিস।
সে আরেকদিন বোঝাবো।
এখন বলো তো, কোন বস্তুর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বেশি? হ্যাঁ, যেই বস্তুর ভর বেশি, তার মাধ্যাকর্ষণ শক্তিও বেশি। মানে সে তার চারপাশের বস্তুগুলোকে ততোবেশি শক্তি দিয়ে আকর্ষণ করে। ভাবছো, তাহলে তো আমরা সারাদিন বড়ো বড়ো বিল্ডিংয়েই আটকে থাকতাম। আরে বাবা, পৃথিবী যতো বড়ো, ওর মাধ্যাকর্ষণের কাছে আমাদের চারপাশের সবকিছুর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতোই কম, যে আমরা আর কোনো কিছুর মাধ্যাকর্ষণই টের পাই না।
অর্থাৎ, দিন দিন সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি বেড়ে যাচ্ছে। ফলে গ্রহগুলো আস্তে আস্তে সূর্যের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে। যখন সূর্যের আর কোনো জ্বালানি, মানে হিলিয়াম অবশিষ্ট থাকবে না, সবটুকু হাইড্রোজেন হয়ে যাবে, আমাদের সূর্যও তখন একটা ব্ল্যাক হোল হয়ে যাবে। তখন সূর্যের যে কী পরিমাণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি হবে চিন্তা করেছো? কারণ তখন যে ওর ভর অনেক বেড়ে যাবে! তখন ওর আশেপাশের সবকিছুই ও টেনে পেটের মধ্যে নিয়ে যাবে। আর তখন তো আর ওর জ্বালানি নেই, সুতরাং কোনো আলোও থাকবে না।
আর ব্ল্যাক হোলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতো বেশি হয় যে, সেখানে আলোও যদি একবার ঢোকে, আর বেরোতে পারে না, আটকে যায়। তাই ব্ল্যাক হোল দেখতে কালো মনে হয়। আর দিন দিন নানা কিছু খেয়ে ওটা ফুলে শুধু ঢোলই হতে থাকে। কেন এমন হয় ভাবছো? আরে, ওটার আশেপাশে যা-ই আসে, সবই তো ওটা টেনে পেটের ভেতর নিয়ে নেয়। আর যা একবার ওর পেটে ঢোকে, তা কী আর বের হতে পারে? আলোও তো বের হতে পারে না!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।