আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘোলা জোৎস্নার ছায়া

sorry vai

১. বিআরটিসির কাউন্টারে ভীড় জমতে শুরু করেছে। সালাউদ্দিন মিয়ার চায়ের কেটলিতে পাতি লাল রঙ ছড়াচ্ছে। তড়িঘড়ি করে তিথি এসে পাচশো টাকার নোটটা বাড়িয়ে দিয়ে একটা প্লাস্টিক হাসি হাসলো। সালাউদ্দিনের এই প্লাস্টিক হাসিই সাত রাজার ধন। কোন কথা না বলে তরমুজের বিচির মত দাতগুলো কেলিয়ে ক্যাশ থেকে ভাঙতি বের করে দিলো।

তিথি আরেকটা প্লাস্টিক হাসি দিয়ে পাশ ফিরলো। উফ, বাস মিস! চেচিয়ে সালাউদ্দিনকে বললো, কি ভাই, বাস চলে গেলো আর আপনি আমাকে বললেনই না! সালাউদ্দিন বেশ রস মেখে জবাব দিলো, ভালোই তো হইছে। অপেক্ষা করতে করতে তিথি আপায় আমার দোকানে এক কাপ চা খাবে এইবার। মন্দ কি? তিথি বিরক্ত হয়ে পাশের বেঞ্চে গিয়ে ভ্যানিটি ব্যাগটা কোলে নিয়ে বসলো। আকাশ আজ পরিস্কার।

ঝলমলে রোদে খা খা করছে সকালটা। বাবা এর মধ্যে আঠারোবার কল করেছে। তিথি ধরবে না। মন ভালো না থাকলে ও ফোনে কথা বলেনা। পাত্রপক্ষের উপর কোন অভিমান নেই, অভিমান সব বাবার উপর।

বিয়ে ভেঙে যাওয়ার মত আনন্দের একটা ব্যাপারে বাবা বারবার প্রেসার মাপাছেন আর আসন্ন মৃত্যুর পূর্বাভাস দিচ্ছেন। বাবার এক দফা এক দাবি। একটা প্রতিষ্ঠিত পুরুষের গলায় ঝুলে পড়ুক তিথি। মাস্টার্স শেষ করে এমবিএ করছে। আর কত? ও কি বিয়ে করতে চায় নাকি চায়না? ও আসলে নিজেই জানেনা উত্তরটা।

নির্ঝরকে তো ভুলতে পেরেছে শেষ পর্যন্ত। নির্ঝরও এখন এক বাচ্চার বাপ। না, নির্ঝরকে নিয়ে কোন কষ্ট আর অবশিষ্ট নেই। তবে, তবে কি? একটা মুক্ত পাখির মত থেকেও কিসের যাতনা? কিঞ্চিত জল জমে চোখের কোণে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে ওঠে ও, যদি জানতেম আমার কিসেরও ব্যাথা, তোমায় জানাতাম।

হঠাৎ কানের কাছে কে যেন বলে উঠে, জানিতে জানিতে জীবন যাবে, তবুও কি সখা উত্তর পাবে? তিথি ঘাড় ঘুরিয়েই বিরক্ত হয়ে সরে বসে। সেই লোকটাই আবার। অসহ্য। লোকটা সানগ্লাস খুলতে খুলতে বলে, আমি কি আপনার পাশে একটু বসতে পারি? তিথি বেশ ভয় পেয়ে যায়। কাপা কাপা গলায় বলে, দেখুন ভাইয়া, আমি অফিসে যাচ্ছি।

কিছু বলার থাকলে বলুন। আমি বাস এ উঠবো। লোকটা মুচকি হেসে বলে, আচ্ছা, আপনি অফিস এ যান। তবে এই বস্তুটা গ্রহন করলে খুশি হবো। বলে একটা ভাজ করা কাগজ ধরিয়ে দিতে দিতে বলে, এটা কোন প্রেমপত্র না।

তবে চিঠি। আমি লোক একেবারে খারাপ না। বাজে কিছু লেখা নেই। কাল থেকে আর এখানে দাড়িয়ে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবো না। আমার পর্যবেক্ষণ শেষ।

লেখাটা পড়লে ভালো লাগবে, এই যা। যান অফিসে যান। বাস ছেড়ে দিবে। তিথি কাগজটা নিয়ে সম্মোহিতের মত হাটতে থাকে বাসের দিকে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।