নিজেকে জান এবং প্রকাশ কর!!
মুম্বাই, এপ্রিল ০৩ রাত তখন ১২টার বেশি। বিশ্বকাপ জয়ে উল্লাসে মাতোয়ারা ভারত। আর সেই জোয়ারে গা ভাসালেন সোনিয়া গান্ধীও। নিরাপত্তার সব বেষ্টনী ভেঙে, জনতার কাতারে ক্ষণিকের জন্য এক হয়ে গেলেন তিনি।
রাষ্ট্রনায়ক না হয়েও ভারত চালাচ্ছেন সোনিয়া সোনিয়া- এমনটাই মনে করা হয়।
ইন্দিরা ও রাজীব গান্ধী নিহত হওয়ার পর থেকে সোনিয়া ও তার দুই ছেলে-মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে সব সময়ই উদ্বিগ্ন ভারত সরকার। কিন্তু বিশ্বকাপ বলে কথা। তাই নিরাপত্তার কড়াকড়ি বাধ মানাতে পারেনি সোনিয়াকে।
সেমিফাইনালে যেদিন পাকিস্তানকে যখন ভারত হারালো, সেদিনও ভিআইপি গ্যালারিতে দুই হাত তুলে সোনিয়ার উল্লাস প্রকাশ সবার দৃষ্টি কেড়েছিলো। ইতালিয়ান সোনিয়া যে পুরোপুরি ভারতীয় হয়ে গেছেন, তার প্রমাণ মিললো শনিবার রাতে মুম্বাইয়ের ফাইনাল খেলায়ও।
ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কাকে ছয় উইকেটে হারিয়ে ভারতের জয়ের সাক্ষী ছিলেন সোনিয়াও। ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ জয় ভারতের, স্টেডিয়ামের বাইরে তখন বাঁধ ভাঙা উল্লাস; স্টেডিয়াম থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়ার সময় তাতে আটকা পড়লো সোনিয়ার টাটা সাফারি, কিন্তু আটকালেন না কংগ্রেস নেত্রী।
ভারতের টিভি চ্যানেলগুলোর খবরে দেখা যায়, সাদার ওপর প্রিন্টের সালোয়ার-কামিজ পরা সোনিয়া গাড়ি থেকে নেমে সবার সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। বলছেন, "অভিনন্দন সবাইকে, বিশ্বকাপ জয়ের এ কৃতিত্ব আমাদের সবার। "
সোনিয়ার গাড়ির প্রহরায় ছিলো আরো দুটি গাড়ি।
কিন্তু এসবের থোড়াই তোয়াক্কা করেছে তখন জনতা, কারণ নেত্রীই তো নেমে এসেছেন তাদের মাঝে।
নিরাপত্তার কারণে কংগ্রেসপ্রধানকে দূর থেকেই দেখতে অভ্যস্ত ভারতীয়রা। তাই চোখে দেখেও অনেকের ঘোর কাটছিলো না। যখন ঘোর কাটলো, তখন হাত মেলানোর জন্য শশব্যস্ততা, অনেকের মোবাইল ক্যামেরাগুলোও হয়ে ওঠে সচল।
"আমার সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছিলো না, সোনিয়া গান্ধী আমাদের মাঝে! ট্রাফিজ জ্যামে গাড়ি আটকা।
এর মধ্যে একটি গাড়িতে সোনিয়া। খুব ভিড় ছিলো, তবে ঠেলেঠুলে তার সঙ্গে হাত মেলাতে পেরেছি। নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে", টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বললেন আশিষ চাওলা। মুম্বাইয়ের কৈলাস কলোনির বাসিন্দা তিনি।
সোনিয়ার সঙ্গে কথা বলার জন্য অনেকে মটর সাইকেল নিয়ে খুব জোরে ছুটছিলেন।
তাদের সতর্ক করলেন তিনি। বললেন, "সাবধানে চালাবেন, সবার জন্য থাকলো শুভ কামনা। "
রাহুলের মধ্যাহ্ন ভোজ
শনিবার দুপুরের কথা, মুম্বাইয়ে স্টেডিয়াম ছাড়া অন্য সব এলাকা ছিলো ফাঁকা। যাদের টিকিট আছে, তারা স্টেডিয়ামে, অন্যদের প্রস্তুতি টেলিভিশনের সামনে বসার। আর এর মধ্যেই এয়ারপোর্ট থেকে ওয়াংখেড় স্টেডিয়ামে যাওয়ার পথে প্রায় ফাঁকা একটি রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্ন ভোজ সারলেন রাহুল গান্ধী।
সঙ্গে ছিলেন তার সাত বন্ধু।
রাজীব-সোনিয়া তনয় রাহুল যখন বন্ধুদের নিয়ে রেস্তোরাঁটিতে ঢোকেন, তখন সেখানে খাবার খাচ্ছিলেন মাত্র চার জন। তারাসহ রেস্তোরাঁর সবাই অবাক রাহুলকে দেখে। নিরাপত্তা রক্ষীদের বাধার কারণে সবাই রাহুলের খুব কাছাকাছি যেতে পারেননি। তবে শেষে রেস্তোরাঁর সব কর্মচারী বাড়িতে বাঁধিয়ে রাখার জন্য একটি ছবি পেলেন, তা ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে।
খেলার আগে ৪৫ মিনিট ওই রেস্তোরাঁয় কাটান রাহুল। রেস্তোরাঁকর্মীরা জানান, রাহুল ও তার বন্ধুরা খেয়েছিলেন পিজ্জা ও পাস্তা, পানীয় নিয়েছিলেন ডায়েট পেপসি। মোট বিল হয়েছিলো ২ হাজার ২৩৩ রুপি। তবে বিল দেওয়ার ব্যাপারটি চমৎকৃত করেছিলো রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক পেরুমল পিল্লাইকে।
তিনি টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে বলেন, "মজার বিষয় দেখলাম।
তারা সাত বন্ধু ভাগাভাগি করে সবাই অর্থ দিয়েছে। আর রাহুল সত্যিই আলাদা। এত বিনয়ী। এরকমটা দেখা যায় না। "
এ তো গেলো রাহুলের খেলার আগের ভোজপর্ব।
খেলার পর যে পরিমাণ মদ বিক্রি হয়েছে, তা ঢেলে দিলে মুম্বাই ভেসে যাওয়ার উপক্রম হতো। মুম্বাই নগরীর বারগুলো হিসাব করে দেখেছে, খেলার শেষের আট ঘণ্টায় প্রায় দুই লাখ লিটার মদ বিক্রি হয়েছে।
খেলোয়াড়দের জন্য পুরস্কার
সেই ১৯৮৩ সালে একবার বিশ্বকাপ এসেছিলো ভারতের ঘরে, কপিল দেবের হাত ধরে। এরপর আসি আসি করেও আসেনি। সৌরভ গাঙ্গুলী প্রায় কাছাকাছি নিয়ে গেলেও পারেননি কপিলের সহযাত্রী হতে।
তবে পেরেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।
তাই বিশ্বকাপ জয়ের নায়কদের পুরস্কার দিচ্ছে ভারতের ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)। ঘোষণা অনুযায়ী দলের ১৫ ক্রিকেটারদের প্রত্যেকে পাবেন ১ কোটি রুপি।
শনিবার শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ট্রফি জয়ের পরপরই এ ঘোষণা দেয় বিসিসিআই। শুধু খেলোয়াড়ই নয়, বিশ্বকাপ জয়ী দলের প্রত্যেক কর্মকর্তা পাবেন ৫০ লাখ রুপি।
আর নির্বাচকদের প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২৫ লাখ রুপি।
ফোন বন্ধ পুনমের
বিশ্বকাপ ক্রিকেট জয়ে সবাই উন্মাতাল হলে তা একটু হলেও বিপদ নিয়ে এসেছে মডেল পুনম পাণ্ডের জন্য। ভারত জিতলে নিজের দেহবল্লরী মেলে ধরবেন সবার কাছে- এ কথা বলেছিলেন তিনি। এখন পুনমের মোবাইল ফোন বন্ধ পাচ্ছেন সাংবাদিকরা।
ভারতের জয়ের আগেই বিপদে পড়েছিলেন পুনম।
নিজের নগ্নরূপ মেলে ধরার বাসনা দেখানোর পরই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। সে মামলায় গ্রেপ্তারও হতে পারেন তিনি।
তবে এত কিছুতেও নাকি দমবার পাত্রী নন পুনম- ২০ বছর বয়সি এ মডেল তারকার ঘনিষ্ঠ এক জন তাই বললেন টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে। পুনম বলছেন, তিনি ভয় পাচ্ছেন না। বিসিসিআই যদি সায় দেয়, তিনি ভারতের বাইরে হলেও তার সাধ পূর্ণ করতে চান।
আর সেজন্য বিসিসিআই'র কাছে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন পুনম। বলেছেন, তিনি ক্রিকেটপ্রেমী। আর ক্রিকেটে ভারতের এ জয়ে একটি ভিন্ন রকমের মজা করতে চেয়েছেন তিনি।
ইউরোপ-আমেরিকায় এ ধরনের মজা করার বৈধতার বিষয়টি তুলে ধরে পুনম নগ্ন হওয়ার জন্য প্যারিসকে বেছে নিয়েছেন। এখন বিসিসিআই রাজি হলেই হয়।
বিডিনিউজ২৪.কম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।