আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধ্যরাতে কুপিয়ে স্কুলছাত্রী খুন



মাথা ও ঘাড়ে বঁটির একাধিক কোপ। মাথার ঠিক বাঁ দিকে বঁটি বসানো। পুরো শরীর রক্তাক্ত। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের নৃশংসতায় খুন হওয়া স্কুলছাত্রী মিলি রানী দাসের মরদেহ (১৫) গতকাল বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় এ অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আনা হয়। অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত কারা, কেন এই নৃশংসতা—মিলির পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী এমনকি পুলিশও তা জানে না! ঘটনাটি ঘটেছে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের পাশে জাউয়াবাজার গ্রামীণ ব্যাংকের স্টাফ কোয়ার্টারে।

এলাকাটি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মধ্যে পড়েছে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জাউয়াবাজার পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম জানান, মেয়েটির মাথার ডান দিকে একটি কোপ, ঘাড়ে আরও দুটো কোপ এবং শেষে মাথার বাঁ দিকে সর্বশেষ কোপ দিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। বঁটিটি ওইভাবে মাথায় বসানো ছিল। পারিবারিক সূত্র জানায়, মিলি রানীর বাড়ি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দ্বিতীয়ারদেহী গ্রামে। সে বড়লেখা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে।

ছাতকের গ্রামীণ ব্যাংক জাউয়াবাজার শাখার মাঠকর্মী পদে চাকরি করেন মিলির ফুফু ডলি রানী তালুকদার (৩০)। তাঁর স্বামী জয়দেব দাস শিক্ষকতা করেন সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার একটি কিন্ডারগার্টেনে। মিলির চাচা করুণাময় দাস জানান, ডলি সম্প্রতি এক কন্যাসন্তানের মা হওয়ায় কর্মজীবী দম্পতির বাচ্চাকে দেখভাল করার জন্য মিলি প্রায় ছয় মাস ধরে ডলির বাড়িতে থাকে। গত মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে বাসার জানালার গ্রিল কেটে চার-পাঁচজন দুর্বৃত্ত ঘরে ঢুকে দা নিয়ে ডলি ও মিলিকে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। ডলি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে করুণাময় বলেন, ‘পিসির বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল মিলি। তাকে নিয়ে ওইখানে কোনো সমস্যাও ছিল না। কারা এ কাজ করল, কিছুই বলতে পারছি না!’ জাউয়াবাজার শাখা গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপক রমিজউদ্দিন জানান, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘তুরস্ক ভবন’ নামের একটি ভাড়া করা বাড়িকে স্টাফ কোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার করেন। তিনি থাকতেন দোতলার একটি কক্ষে। ওই সময় তিনি চিৎকার শুনে নিচে গিয়ে মিলির মাথায় বঁটি আটকে থাকা ও ডলিকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় দেখতে পান।

কয়েকজন সহকর্মী নিয়ে তিনি রাতেই ডলি ও মিলিকে জাউয়াবাজার কৈতক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মিলিকে মৃত ঘোষণা করে। পরে পুলিশকে খবর দিয়ে ভোর পাঁচটায় ডলিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং মিলির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে নিয়ে আসা হয়। রমিজউদ্দিন জানান, প্রথম দিকে ধারণা করা হয়েছিল ঘরে ডাকাত ঢুকেছে। পরে কৈতক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডলি জানান, চার-পাঁচজন দুর্বৃত্ত রান্নাঘর থেকে বঁটি নিয়ে মিলিকে ঘুমের মধ্যে একটি কোপ দেয়।

তিনি বাধা দেওয়ায় তাঁকে একটি কোপ দিয়ে পরে মিলিকে কোপাতে থাকে। তিনি বলেন, ‘আমরা ছয়টি পরিবার ওই ভবনে থাকি। ডাকাতি হলে তো লুটপাট হওয়ার কথা। সে রকম কিছুই ঘটেনি। আমরা কিছু অনুমানও করতে পারছি না!’ গতকাল সকালে জাউয়াবাজার পুলিশ ফাঁড়ির একদল পুলিশসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান মুন্সি।

তিনি বলেন, ‘ওই এলাকায় প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করে পাড়া-প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু এমন ঘটনা কেন ঘটতে পারে, এ ব্যাপারে কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। আমরা ধারণা করছি, পূর্বশত্রুতাবশত এ ঘটনা ঘটতে পারে। ’ ওসি প্রথম আলোকে জানান, এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ডলি রানী তালুকদার।

ডলির সঙ্গে কথা বলে দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।