আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ্যাডভেঞ্চার!!!! উইথ আব্বুজী।

বসে বসে একা একা দূর আকাশে মেলেছি পাখা
আব্বুকে অফিস থেকে ৩ দিনের ট্রেনিং পাঠানো হলো ঢাকার সড়ক ও জনপদ বিভাগে। আম্মুকে বলতে শুনলাম_আমার মেয়ের কয়টা কাপড় গুছিয়ে দাও তো, এইবার আমি আর আমার মেয়ে যাবো, দাদার বাসায় উঠবো। তখন আমার বয়স কত হবে ৮/৯। এত্ত খুশি কোথায় রাখি। জীবনে প্রথম ঢাকা যাচ্ছি।

পথে পথে কত রোমাঞ্চকর জিনিস। বাসের জানালা দিয়ে দেখছি.....উচু নীচু কত পাহাড়....সাদা সাদা মেঘ আব্বু বললেন আমরা এখন শীতাকুন্ড পার হচ্ছি। আমাদের বাস গ্রামগঞ্জ পার হয়ে চলতে লাগলো। একসময় খেয়াল করলাম বাসটি খুব ধীরে চলছে। আব্বুকে জিঞ্জেস করলাম_ আব্বু বাস এভাবে চলছে কেন??? আব্বু বললো_ চলো আমরা বাস থেকে নেমে যায়।

অনেকক্ষন বসে থাকায়,আমারও মনটা ছটপট করছিলো কখন যে বাস থেকে নামবো। বাস থেকে নেমে আরেক এ্যাডভেঞ্চার। বাস চারকোনা একটা পাথরের উপর আর পাথর নদীর উপর চলছে। আব্বু বললেল _ এই চারকোনা পাথরটাকে ফেরী বলে। ফেরীতে দাড়িয়ে ঝালমু্ড়ি আর আমড়া খেলাম।

বড়আব্বুর বাসায়( আশকোনা) যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। পথের ক্লান্তি চোখের পাতায় ঘুম জুড়িয়ে দিলো। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আব্বুকে দেখতে না পেয়ে খুব কেঁদেছিলাম। বড়আব্বু কান্না থামানোর জন্য আমাকে কোলে নিয়ে বাইরে বের হলেন। কিছু চকলেট নিয়ে ফেরার পথে দেখলাম .... অনেক বড় নদী, সেখানে শুধু শাপলা আর শাপলা।

বড়আব্বুকে বললাম_ আমি নদী থেকে শাপলা নিবোওওওওওওও। বড়আব্বু বললেল_ বোকা মেয়ে!!! এটা নদী না, এটাকে ঝিল বলে। আচ্ছা তুমি এখানে দাঁড়াও। আমি দেখি কোন নৌকা পাওয়া যায় কিনা। দাড়িয়ে দেখলাম বড়আব্বু কার সাথে কি কি কথা বলে আমাকে নিয়ে একটা নৌকায় উঠলো।

দাঁড় টেনে শাপলা তুলে আমাকে বললো _ধরোতো। আমি ধরতে গিয়ে দিলাম দৌড়। বড়আব্বুর কাছে যেতেই নৌকা গেলো উল্টে। দুজনে মিলে পানি খেয়ে পেট পুড়িয়ে কয়েকগাছি শাপলা হাতে বাসায় এলাম। যাক একটা জিনিস শিখলাম! ঝিল মানে হলো ডুববো কিন্তু মরবো না।

বিকেলে আব্বু এলো, আব্বুকে কঠিন শাস্তি দিয়েছি। একদম কথা বলিনি। আব্বু প্রমিজ করলো আর এমন করবে না, আমাকে রেখে আর কোথাও যাবে না। তারপর আমরা এয়ারপোর্ট দেখতে গেলাম। কয়েকটা বিমান উড়াউড়ি দেখে আব্বুর কোলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

পরেরদিন .....আব্বুর অফিস। আব্বুর পাশে চুপচাপ বসে রইলাম ঠিকই, কিন্তু ট্রেনিংতো দেখছিনা। আমার স্কুলের মত এক টিচার আবোলতাবল কি কি যেনো বলাবলি করছিলো আর সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঐ লোকটার বকবকানিতে আমার খুব ঘুম পাচ্ছিলো। কিন্তু ঘুমাই কি করে ট্রেনিং যদি এসে চলে যায়।

দুপুরে অফিসে লান্স করে বেড়িয়ে পড়লাম। আব্বুকে বললাম _ আব্বু ট্রেনিংতো দেখলাম না। আব্বু বললেল_ কোন কিছু শিখানোকে ট্রেনিং বলে। আমাদের সামনে যে লোকটি দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলছিলো তিনি আমাদের কাজের কিছু উপায় শিখিয়ে দিয়েছেন। আমরা এতক্ষন কোথায় ছিলাম! ট্রেনিং-এইতো ছিলাম।

আব্বুকে আবার জিঞ্জেস করলাম_ আচ্ছা আব্বু! তাহলে আমাদের স্কুলটা কি ট্রেনিং? আব্বু বলেছিলেন_ হুমম! ওটা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনিং। আচ্ছা এখন বলো! বাসায় যাবে নাকি কোথাও ঘুরবে? সাথে সাথে বলে ফেললাম_ না ঘুরবো। তারপর গেলাম একটা পার্কে (রমনাপার্ক)। দোলনায় চড়লাম। আব্বু ধীরে ধীরে দোল বাড়াতে লাগলো।

একসময় খুব ভয় পেলাম, আব্বুঊঊঊঊঊ করে চিৎকার করে উঠলাম। আব্বু তাড়াতাড়ি দোলনা ধরে থামালো। আব্বু কোলে নিয়ে বলেছিলো_ পাগল মেয়ে। হঠাৎ শুনতে পেলাম_ ঐ.. বাতাসা বাতাসা ৫ টাকা। আব্বুকে বললাম_ বাতাসা কি? আব্বু বলল_ তুমি যে চম্পাআপড়ি খাও,ঐ ওগুলো।

আব্বু দুটো বাতাসার স্টিক নিয়ে দিলো। আমি মুখে দিতেই সব হাওয়া হয়ে গেলো। মেজাজটা কেমন লাগে? আব্বু আমরা অন্য কোথাও যাই, আমার এখানে ভালো লাগে না। আব্বু বললো_ চলো আমরা শিশুপার্কে যাই। আমিও বলেছিলাম_ হ্যাঁ হ্যাঁ শিশুপার্ক।

নাগোরদোলায় উঠেছিলাম মনে আছে। এযেনো আরেক বিশ্বয়। আমার তখন মনে হয়েছিলো পুরো পৃথিবী আমার চোখের সামনে। এদিক সেদিক ঘুরাঘুরির পর আব্বু আর আমি দুটো কোণআইসক্রীম নিয়ে একটা বেঞ্চে বসলাম। আরেকটি কথা বলেনি আমি এরআগে ইগলোআইসক্রীম খেয়েছি কিন্তু কখনো কোণআইসক্রীম খাইনি।

আমার কোণটা শেষ হওয়া মাত্র আব্বু বললেন_ হায়!হায়! তুমি কোণটাও খেয়ে ফেললে? আমিতো ভয়ে শেষ,এ কি করলাম! কিন্তু আব্বুকে বললাম আব্বু ঐটাতো বিস্কুটের মত ছিলো! আব্বু খুব হেসেছিলেন আর বলেছিলেন_ হ্যাঁ কোণটাও খাওয়া যায়। তুমিতো কখনো কোণআইসক্রীম খাওনি আবার আব্বুকেও কিছু না বলে কিভাবে খেলে? আমি তখন কিছু না বলে হেসেছিলাম। এখন বুঝতে পারছি আমার ছোট ছোট প্রশ্নের উত্তর দিতে আব্বু খুব মজা পেতো। আস্তে আস্তে কখনযে সন্ধ্যা হলো টেরই পেলাম না, ঢাকার রাস্তায় নিয়ন আলো জ্বলে উঠেছে। পার্ক থেকে বাহির হওয়ার পথে দেখলাম অনেক বড় বড় বেলুন ।

আব্বুর দিকে তাকাতেই তিনি বুঝে গেলেন_ বেলুনের লোভ সামলানো বড় দায়। আমার থেকেও বড় এমন একটা বেলুন কিনে দিলেন। দিনটা খুব ভালো কাটলো। মনে ভিষন খুশি। দু/তিন কদম হেঁটে খেয়াল করলাম আমার গায়ের লাল সাদা জামাটা কিভাবে যেনো পাল্টে গেলো সাথে সাথে চোখ দিয়ে পানি পড়ে গেলো_ আব্বুঊঊঊঊঊঊ আমার জামাটা কে যেনো চুরি করেছে..ঊঊঊঊঊঊঊঊ আব্বু আমাকে কোলে নিয়ে জামার রহস্য উম্মোচন করলেন।

দেখো কাঁদে না, তোমার জামা কেউ নেয়নি। এইযে রাস্তায় লাইট দেখছো, ঐটার জন্য এমন দেখাচ্ছে। তারপর পরিক্ষানিরিক্ষা শেষে কান্না থামালাম। এরপর কতবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়া করলাম,কিন্তু সেইবারের মত এত রোমাঞ্চকর অনুভব আর পাইনি।
 


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.