ইদানিং একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি, বেশীর ভাগ সময় কাউন্টার সিটিং(?) বাস গুলোর তুলোনায়, লোকাল বাস গুলোতে ভীর কিছুটা কম থাকে। তাই এমন অনেক যাত্রীই আছে যারা কাউন্টার বাসের তুলনায় লোকাল বাসে ভ্রমণে সাচ্ছন্দ বোধ করে। এতে পয়সাও কিছুটা কম লাগে আর কপাল ভাল থাকলে বসার জন্য একটা জায়গা পাওয়া যায়। আমি এ দলেরই একজন সদস্য। হয়ত বোকা বলেই এজন্য নিজেকে অনেক বুদ্ধিমান মনে হয়।
এ বুদ্ধির উপর ভরসা আছে বলেই হ্য়তবা, লোকাল বাসটা সামনে এসে দাড়াতেই উঠে পড়লাম। গন্তব্য মহাখালী। ভাগ্যের জোরে বাসের সামনের দিকে একটা বসার জায়গাও পেয়ে গেলাম। বাসে উঠবার সাথে সাথেই একটা সিট পেয়ে গেলে কেমন যেন ভাগ্যবান, ভাগ্যবান মনে হয়। লোকাল বাস গুলোতে সাধারনত উঠবার সময় মনে হয় তখনই ছেড়ে দেবে, কিন্তু উঠলেই বাসটা থেমে যায়।
আমি তাড়াহুড়ো করে উঠবার পরেই যথারিতি বাসটা থেমে গেল। এই সময় এক জোড়া যুবক-যুবতী, আমার মত তাড়াহুড়ো করেই বাসে উঠল। এ রকম জুটি গুলো সাধারণত বাসের পেছনের দিকের আসন গুলো দখলের সুযোগে থাকে। জানি না কেন, পেছনের দিকের আসন খালি থাকা সত্বেও তারা ইন্জিন কভারের উপর বসল। হয়তবা কাছেই কোথাও নামবে।
দুধেআলতা গায়ের রং বলে একটা উপমা আছে, মেয়েটাকে দেখে আমার মনে হল দুধেআলতা গায়ের রং কে খুব সহজেই দুই ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে, পরিস্কার দুধেআলতা রং এবং ময়লা দুধেআলতা রং। মেয়েটার গায়ের রং অবশ্যই প্রথম ক্যাটাগরিতে পরবে। মেয়েটা যতটা ফর্সা, ছেলেটা ঠিক ততটা কালো না হলেও বেশ কালো। আর যাই হোক এ বর্নকে শ্যামলা বলাটা একটু বেশীই প্রসংসা হয়ে যায়। বলা বাহুল্য, মেয়েটার কল্যানে বাসে উঠার সাথে সাথেই এরা সকলের দৃষ্টি আকর্ষনে সক্ষম হলো।
শরীরের সাথে নীবিড় ভাবে জড়িয়ে থাকা লাল জামাটার কারণে, দুধেআলতা গায়ের রং এর মেয়েটার যে মাদকতাময় আকর্ষণ উন্মোচিত হয়েছে তা দেখে হয়তবা মুণি-ঝষিদেরও ধ্যাণ ভেঙ্গে যাবে, আমি সহ বাসের অন্য যাত্রীরা তো কোন ছাড়পোকা। এ পর্যন্ত হয়তবা ঠিকই ছিল, অসস্তি শুরু হলো যখন ছেলেটার একটি হাত ধীরে ধীরে পেছন দিয়ে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরল। মেয়েটির দুধেআলতা গায়ের রং এর জন্যই হয়তবা, ছেলেটির কালো হাতের গতিবিধি বেশী দৃষ্টেগোচর হলো। মেয়েটে তার শরীরের ভারসাম্যের অনেকটাই প্রয়জন ছাড়াই ছেলেটির উপর সমর্পন করল। খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, ছেলেটির আঙ্গুলের অগ্রভাগ খুব বাজে ভাবে মেয়েটির শরীর স্পর্শ করে আছে।
বাস ভর্তি নানা বয়সী মানুষের সামনে পর্ণোগ্রাফির যেন এক জীবন্ত প্রদর্শনি। জানি না কেন যেন নিজেকে খুব অসহায় আর বিরক্ত লাগতে লাগল। খুব ইচ্ছে হল গিয়ে বলি, "আপনারা যেভাবে বসেছেন সেটা জনসম্মুখে খুবই দৃষ্টিকটু। আশেপাশে আপনাদের পরিচিত কেউ নেই, এটা নিশ্চিত হয়েই মনেহয় আপনারা এভাবে বসেছেন। কিন্ত খেয়াল করেছেন কী, এ বাসে অনেকেই আছে যারা আপনাদের বাবার বয়সী, মায়ের বয়সী ভদ্র মহিলারাও আছেন।
এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক যে তারা আপনাদের দেখে বিব্রতবোধ করছে। অপরিচিত বলেই কি তাদের সামনে আপনাদের ন্যুনতম লজ্ঝাবোধটা থাকবে না?"
পাছে লোক কিছু বলে বলেই হোক অথবা অনধিকার চর্চা বলেই হোক, আমি এসবের কিছুই বলতে পারলাম না। এক সময় বাসটা তাদের গন্ত্যব্যে পৌছে গেল..। আর আমি ভাবতেই থাকলাম আর রচনা করতে থাকলাম আরো অনেক অলীক কথোপকতন।
এ পৃথিবিতে মানুষ নামের অতি বুদ্ধিমান প্রাণির অবির্ভাব ঘটেছিল প্রায় সাড়ে চারশ কোটি বছর পূর্বে, আর এই মানুষ কতৃক প্রথম সভ্য নগরীর পত্তন হয় মাত্র কয়েক হাজার বছর পূর্বে।
এ দুয়ের মাঝে বয়ে গেছে অনেক সময়। তৈরী হয়েছে অনেক ধর্ম, অনেক মতামতের কিন্তু সৌন্দর্য, শালীনতা এগুলোর সঙ্গা সব সময় ধ্রুব। মানুষ যেমন শিখেছে সমাজ বদ্ধ হয়ে থাকা, জন্ম নেয়ার জন্য বাবা-মায়ের প্রতি কৃতঞতাবোধ, ঠিক তেমনি শিখেছে শালীনতা, অশালীতা বোধ। যা অন্য কোন পশু প্রাণির ভিতরে নেই। বিড়াল, কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণিদের যৌনকংখা পুরনের কোন স্থান ভেদাভেদ জ্ঞান নেই।
কিন্তু আমরা তো মানুষ, আমাদের তো এ ভেদাভেদ জ্ঞান আছে। আমরা নিজেদেরকে সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবও সবচেয়ে সভ্য ভাবার পেছনে কী আমাদের শালীনতা বোধের কোন অবদান নেই? রিক্সার আরোহি যখন যুবক-যুবতী হয় তখন কেন যুবকের আরেক হাত লুকিয়ে থাকে। সভ্য প্রজন্মের প্রতিনিধির এ কেমন অসভ্য আচরণ।
অনেক আগে একটি বইয়ে পড়েছিলাম, অন্য সকল প্রাণিদের সাথে মানুষের একটি মূল পার্থক্য হল, অন্য সকল প্রাণি একই অবস্থান থেকে তাদের জীবন শুরু করে, কিন্তু মানুষ শুরু করে তার পূর্বপুরুষের শেষ থেকে। এ জন্যই মানুষ আজ এতটা সভ্য।
আমরা কী একবারও ভেবে দেখব না, আমরা আমাদের পরবর্তীদের জন্য কি সভ্যতা(!) রেখে যাছ্ছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।