আমি সত্য জানতে চাই
নিম্ন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ক্লাসে যোগ-বিয়োগ ও গুণনের পদ্ধতি শেখানোর পর নিজে নিজেই ভাগের নিয়ম আবিষ্কার করে শিক্ষককে অবাক করে দিয়েছিলেন কাজী পরিবারের যে দুরন্ত বালক তার নাম কাজী মোতাহার হোসেন। কাজী মোতাহার হোসেন নামের এই দুরন্ত বালক পরবর্তী জীবনে খ্যাতি লাভ করেন বাংলাদেশের প্রথম পরিসংখ্যানবিদ, বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, দাবাড়ু এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিক হিসেবে। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁকে ডাকতেন 'মোতিহার' বলে, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্-এর ভাষায় তিনি 'আপনভোলা নিরহংকার মানুষ, বিদ্বান ও গুণী'। আর গুণমুগ্ধ ভক্তদের কাছে তিনি শ্রদ্ধেয় 'কাজী সাহেব'। বিজ্ঞান গবেষণার পাশাপাশি সাহিত্য-সংস্কৃতি-সঙ্গীত-খেলাধুলা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে অনন্য সাধারণ প্রতিভার সমন্বয়ে যুক্তিবাদী, ধর্মপ্রাণ ও স্পষ্টবাদী কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন পরিপূর্ণ মানুষ।
সংস্কৃতিসচেতন আদর্শ বাঙালি কাজী মোতাহার হোসেন ১৮৯৭ সালের আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন। ১১৬তম জন্মদিনে কাজী মোতাহার হোসেনের জন্য আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।
কাজী মোতাহার হোসেন ১৮৯৭ সালের ৩০ জুলাই (বাংলা ১৩০৪ সালের ১৪ শ্রাবণ) শুক্রবার ভোরবেলা তত্কালীন নদীয়া জেলার ভালুকা (বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী) থানার অন্তর্গত লক্ষ্মীপুর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কাজী গওহরউদ্দীন আহমদ এবং মাতা তসিরুন্নেসা। পিতা-মাতার চার ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান।
জনাব গওহরউদ্দীন আহমদের নিবাস ছিল ফরিদপুর জেলার পাংশা উপজেলার অধীন বাগমারা গ্রামে। তাঁদের পূর্বপুরুষ মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে দিল্লী-দরবারে ধর্মীয় উপদেষ্টা ও কাজী (বিচারক) পদে নিযুক্ত ছিলেন। বংশগত 'কাজী' পদবী তাঁরা পেয়েছেন এই সূত্রেই।
পিতার কাছে এবং পারিবারিক মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয় তাঁর। নানার বাড়ীতে লক্ষ্মীপুরের কাছে যদুবয়রা নিম্ন প্রাইমারি স্কুলে ১৯০৬ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি।
পরে ১৯০৭ সালে বাগমারা নিম্ন প্রাইমারি স্কুল পাস করেন । ১৯০৯ সালে তিনি কুষ্টিয়া মহকুমার অন্তর্গত সেনগ্রাম মাইনর স্কুল থেকে উচ্চ প্রাইমারি (ষষ্ঠ শ্রেণী) পাস করেন। পরে কুষ্টিয়া গিয়ে উচ্চ প্রাইমারি ক্লাসের বৃত্তি পরীক্ষা দিয়ে প্রথম হন। ১৯১৫ সালে তিনি কুষ্টিয়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত প্রবেশিকা (ম্যাট্রিকুলেশন) পরীক্ষায় পূর্ববঙ্গ ও আসামের ভিতরে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে আইএসসি শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে কাজী মোতাহার হোসেন বেশ কয়েকজন গুণী শিক্ষকের সান্নিধ্য লাভ করেন।
কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়বার সময়ে একটি অপ্রীতিকর ঘটনার দরুন সব শিক্ষার্থীর দশ টাকা করে জরিমানা ধরা হয়। জরিমানা মওকুফের সুযোগ না পেয়ে সেখান থেকে চলে এসে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হন তিনি। ১৯১৭ সালে এই কলেজের বিজ্ঞান শাখা থেকে তিনি প্রথম বিভাগে চতুর্দশ স্থান অধিকার করে আইএসসি পাস করেন এবং মাসিক কুড়ি টাকা বৃত্তি লাভ করেন। ১৯১৯ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকা কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং এই পরীক্ষায়ও পূর্ববঙ্গ ও আসামের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথম হয়ে মাসিক ত্রিশ টাকা বৃত্তি লাভ করেন। ১৯২১ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন।
ইংরেজি শিক্ষার ক্ষেত্রে কাজী মোতাহার হোসেনই ছিলেন পরিবারের প্রথম ব্যক্তি।
স্কুলজীবনে অবসর সময়ে পিতার বইপুস্তক পাঠ করার মাধ্যমে সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয় কাজী মোতাহার হোসেনের। বাল্যকালে একই গ্রামের কাজী আবদুল ওদুদের ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে এসে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রমথ চৌধুরী ও সত্যেন দত্তের লেখা এবং 'সবুজপত্র', 'প্রবাসী' ও 'পরিচয়' পত্রিকাসমূহ পাঠ করার সুযোগ লাভ করেন তিনি। কুষ্টিয়া হাইস্কুলে পড়ার সময়ই শিক্ষক জ্যোতিন্দ্রমোহন রায়ের উত্সাহ ও প্রেরণায় কাজী মোতাহার হোসেনের লেখালেখির হাতেখড়ি হয়। 'সওগাত' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম রচনা 'গ্যালিলিও'।
১৯২৬ সালের ১৯ জানুয়ারি কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন এবং কাজী মোতাহার হোসেন ঢাকায় 'মুসলিম সাহিত্য সমাজ' নামে একটি প্রগতিশীল সাহিত্য-সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের বার্ষিক মুখপত্র 'শিখা'র দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ-সংখ্যা সম্পাদনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন। পরবর্তী কালে নিজস্ব স্টাইলে মননশীল, প্রাঞ্জল ও বলিষ্ঠ প্রকাশভঙ্গির একজন দায়িত্বশীল প্রাবন্ধিক ও সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন কাজী মোতাহার হোসেন।
১৯৩৭ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম মৌলিক প্রবন্ধসংকলন 'সঞ্চরণ' প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাজী মোতাহার হোসেনকে সাধুবাদ জানিয়ে বাংলা ১৩৪৪ সালের ২রা ভাদ্র প্রেরিত পত্রে লিখেছিলেন, "... বিচিত্র ভাবকে এবং আলোচনার বিষয়কে স্বচ্ছ প্রাঞ্জল ভাষায় রূপ দিয়ে যে প্রবন্ধগুলি আপনার 'সঞ্চরণ' গ্রন্থে প্রকাশ করেছেন তা পড়ে পরিতৃপ্ত হয়েছি। আপনার বলবার সাহস এবং চিন্তার স্বকীয়তা সাধুবাদের যোগ্য।
..." প্রমথ চৌধুরী, উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখেরও বিশেষ প্রশংসা লাভ করে 'সঞ্চরণ'।
কাজী নজরুল ইসালম ছিলেন কাজী মোতাহারের অন্তরঙ্গ সুহৃদ৷ ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে নজরুল সর্বপ্রথম ঢাকায় আগমন করেন মুসলিম সাহিত্য সমাজ-এর প্রথম বাত্সরিক সভায় তিনি সম্মানীয় অতিথি হয়ে৷ ঐ পুণ্যময় লগ্ন থেকেই অন্তর ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায় দু’জনের৷ কাজী মোতাহার ‘নজরুল জীবনকথা’ প্রবন্ধে সর্বজনস্বীকার্য এই উক্তি করেছেনঃ
নজরুলের দানে বঙ্গবাণী অলংকৃত হয়েছে৷ তার সঙ্গীত-আবৃত্তি এবং দেশাত্মবোধক কবিতা বাঙালীর জাতীয় সম্পদ৷
নজরুল ছিলেন যৌবরাজ্যের প্রাণদীপাবলির ধারক৷ তিনি ছিলেন সবুজসি্নগ্ধ, সবুজ সিন্ধ বাংলার ‘সমাজচেতনা ও রাজনৈতিক জাগৃতির প্রথম কবি৷ আর এ সত্য নজরম্নল বান্ধব কাজী মোতাহারের চৈতন্যগ্রন্থিতে সাত্বত রূপমায় বিবৃত হয়েছিলো৷ ‘মানুষের কবি নজরুল’ প্রবন্ধে কাজী মোতাহার লিখেছেনঃ
নজরুল ইসলাম শ্রেণী প্রাধান্য স্বীকার করেননি৷ তিনি সকল মানুষের সমান অধিকার ও সম্ভাবনার দিকে জোর দিয়েছেন এবং সকল মানুষের চিরনত্মন আশা-আকাঙৰার সুখ-দুঃখ, যৌবন-প্রেম, বীরধর্ম প্রভৃতি নিয়ে কবিতা লিখেছেন৷
নজরুলের ‘বিদ্রোহ’ কবিতার সমালোচনায় কাজী মোতাহার তার চিনত্মার ব্যাপ্তিকে জ্যোতির্ময় করেছেন৷ তিনি লিখেছেনঃ
এ কবিতায় ফিলসফি ফলাবার চেষ্টা নেই- পৌরাণিক কাহিনীর সূক্ষ্ম ইঙ্গিতে আপনা-আপনি অতি মনোরমভাবে কবির বাণী পরিস্ফুট হয়েছে৷ অনবদ্য ছন্দ আর ভাবানুগত ধ্বনি-মাধুর্যে গরীয়ান ‘বিদ্রোহ’ বাংলা সাহিত্যের একটা বিশিষ্ট কাব্য৷ অনেকের মতে, বিশ্বসাহিত্যেও এর তুলনা নেই৷
কাজী মোতাহার হোসেনের প্রকাশিত মৌলিক গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে নজরুল কাব্যপরিচিতি, সেই পথ লক্ষ্য করে, নির্বাচিত প্রবন্ধ (১ম খণ্ড)। প্লেটোর 'সিম্পোজিয়াম', ম্যাক্সিম গোর্কির 'ঝড়ো বাজের গান' কবিতা এবং কাজী আশরাফ মাহমুদের বেশ কয়েকটি হিন্দি কাব্যগ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেন তিনি। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তাঁর রচিত পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে রয়েছে Intermediate Geometry, Beginner's Translation, আধুনিক ভূগোল, সাহিত্যবিকাশ (১ম ভাগ), জ্যামিতি প্রবেশ, প্রবেশিকা বাংলা ব্যাকরণ, ইসলামের ইতিহাস, পাকিস্তান ও পৃথিবী, Elements of Statistics, সাহিত্যিকা (১ম ভাগ), তথ্যগণিত, গণিতশাস্ত্রের ইতিহাস, আলোকবিজ্ঞান (১ম খণ্ড)। 'নবাব স্যার সলিমুল্লাহ' তাঁর রচিত একটি জীবনী পুস্তিকা।
কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতির উপর অনেক বই ও প্রবন্ধ লিখেছেন। তার লেখা বইগুলোর মধ্যে সঞ্চয়ন(১৯৩৭), নজরুল কাব্য পরিচিতি(১৯৫৫), সেই পথ লক্ষ্য করে(১৯৫৮), সিম্পোজিয়াম(১৯৬৫), গণিত শাস্ত্রের ইতিহাস(১৯৭০), আলোক বিজ্ঞান(১৯৭৪), নির্বাচিত প্রবন্ধ (১৯৭৬), প্লেটোর সিম্পোজিয়াম (অনুবাদ-১৯৬৫) অন্যতম।
বিজ্ঞান গবেষণা ও সাহিত্য চর্চার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও কাজী মোতাহার হোসেন নিজের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছেন। ছাত্রজীবনেই তিনি ফুটবল, টেনিস, ব্যাডমিন্টন, দাবা ও সাঁতারে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন। পরবর্তী কালে তিনি নিজেকে উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দাবাড়ু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
তিনি ১৯২৫ সালে 'অল ইন্ডিয়া চেস্ ব্রিলিয়্যান্সি' প্রতিযোগিতায় মোট ১০৩ নম্বরের মধ্যে ১০১ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৯২১ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত একটানা চল্লিশ বছর অবিভক্ত বাংলা এবং পূর্ব পাকিস্তানে দাবা চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। তিনি 'অল ইন্ডিয়া অ্যান্ড সাউথ আফ্রিকা করেসপণ্ডেন্স চেস্ কম্পিটিশন'-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। 'বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশন'-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং আজীবন সভাপতি ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের দাবার জগতে পরম সম্মানিত 'দাবাগুরু' হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন তিনি।
দাবার জগতে তাঁর অবদানের স্মারকস্বরূপ ১৯৮০ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকায় 'কাজী মোতাহার হোসেন ইন্টারন্যাশনাল রেটিং চেস্ টুর্নামেন্ট' শুরু করা হয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় করাচিতে দাবা খেলবার জন্য নিমন্ত্রিত হয়ে গিয়ে পুরো নয় মাস আটকা পড়েছিলেন সেখানে। তাঁর দাবাখেলার সঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন কথাশিল্পী শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, সতীশচন্দ্র আড্ডী, কিষাণলাল প্রমুখ। দাবাখেলা ছাড়াও তিনি ১৯৫১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত লন্ টেনিস প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন।
(ঢাকা কার্জন হলে অনুষ্ঠিত সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন অধিবেশনে ডঃ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও ডঃ কাজী মোতাহের হোসেন)
কর্ম জীবনে কাজী মোতাহার হোসেন ১৯২১ সালে ঢাকা কলেজে ছাত্র থাকাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ডেমনেস্ট্রেটর হিসেবে চাকরি শুরু করেন এবং একই বিভাগে ১৯২৩ সালে একজন সহকারী প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান।
১৯২৬ সালে কাজী আব্দুল ওদুদ, সৈয়দ আবুল হোসেন ও আবুল ফজলের সাথে তিনি "মুসলিম সাহিত্য সমাজ" গড়ে তোলেন। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি কিছুকাল 'শিখা' নামক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি বাংলা একাডেমির একজন প্রতিষ্ঠাতা। কাজী মোতাহার হোসেনের নিজ উদ্যোগে ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যানে এম.এ কোর্স চালু হয় এবং তিনি এই নতুন বিভাগে যোগ দেন। তিনি গণিত বিভাগেও ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন।
১৯৫১ সালে তিনি পরিসংখ্যানে একজন রিডার ও ১৯৫৪ সালে অধ্যাপক হন। ১৯৫৭ সালে মাওলানা ভাসানী আয়োজিত কাগমারী সাংস্কৃতিক সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বাংলা বানান ও লিপি সংস্কার কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৬১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি পরিসংখ্যান বিভাগে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন।
১৯৬৪ সালে স্থাপিত পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউটের তিনি প্রথম পরিচালক। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে অনারারী (Professor Emeritus) অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়।
(নওয়াজ শরীফের সাথে কাজী মোতাহার হোসেন)
কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৬০ সালে পাকিস্তান সরকার অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনকে সিতারা-ই-ইমতিয়াজ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৬৬ সালে প্রবন্ধসাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং ১৯৭৯ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে বিজ্ঞান ও কলা বিষয়ে অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে ডি.এস.সি ডিগ্রি দ্বারা সম্মানিত করে।
১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু সরকার তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপকের মর্যাদা প্রদান করে। ১৯৭৯ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা, বাংলাদেশ সরকার, ১৯৮০ সালে বাংলা একাডেমীর সম্মানসূচক ফেলোশিপ, মুক্তধারা সাহিত্য পুরস্কার, বিদ্যার্ণব উপাধি, ১৯৮১ সালে শেরে বাংলা জাতীয় পুরস্কার, ভাসানী পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে শেরে বাংলা জাতীয় স্মৃতিসংসদ স্বর্ণপদক এবং ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রীড়া স্বর্ণপদক লাভ করেন। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স অ্যানেক্স ভবনটির নামকরণ করা হয় 'কাজী মোতাহার হোসেন ভবন'।
(১৯৫৫ সালে ঢাকার বর্ধমান হাউজে শিল্পী আবদুল আলীম, ওস্তাত আলাউদ্দিন খাঁ এর সাথে কাজী মোহাতার হোসেন)
সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনে কাজী মোতাহার হোসেন নিজের মধ্যে একজন দেশপ্রাণ বাঙালি, উদারমনা মুসলমান এবং সত্ ও আদর্শবান ব্যক্তিত্বকে লালন করেছেন। মৃত্যুর কিছুদিন আগে কাজী সাহেব বলেছিলেন, "জন্মদিন যেমন আনন্দের দিন মৃত্যুদিনও তেমনই আনন্দের দিন।
সুতরাং শোক করা উচিত নয়। " ৮৪ বছর বয়সে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে ১৯৮১ সালের ৯ অক্টোবর শুক্রবার পবিত্র ঈদ-উল-আযহার সকালে মৃত্যুবরণ করেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় মনীষী কাজী মোতাহার হোসেন। অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী তাঁকে সমাহিত করা হয় ঢাকার বনানী গোরস্থানে তাঁর স্ত্রীর কবরের পাশে।
বাংলাদেশের শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি-ক্রীড়া ও বিজ্ঞানচর্চার সর্বজনশ্রদ্ধেয় মনীষী কাজী মোতাহার হোসেনের আজ ১১৬তম জন্মদিন। জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।