বাংলাদেশের গ্যাসের উপর নির্ভর করেই ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করছে ভারত। এমনই খবর দিয়েছে সে দেশের বহুল প্রচলিত বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়- ‘মূলত বাংলাদেশের গ্যাসের উপর নির্ভর করে প্রতিটি ৩২৬ মেগাওয়াটের মোট ২টি ইউনিট গড়ে তোলা হবে। হাসিনা-মনমোহন চুক্তির ভিত্তিতে এই প্রকল্পর কথা ভাবা হয়। ’
‘বাংলাদেশ হয়ে যন্ত্র এল ত্রিপুরায়’-শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটি ছিল এদেশে ভারতের ফ্রি ট্রানজিট সুবিধা কার্যকর হওয়া সম্পর্কিত।
এর শুরুতেই জানানো হয়, পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির সরঞ্জামের প্রথম কনভয় বুধবার বাংলাদেশ হয়ে ত্রিপুরায় পৌঁছেছে। মোট ৪টি ট্রাকে আখাউড়া সীমান্তে এসে পৌঁছায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩৬০ টন যন্ত্রপাতি। ১২০ চাকার ওই ৪ টি ট্রাককে সহর্ষে স্বাগত জানান চেকপোস্টে হাজির হাজার দুয়েক ত্রিপুরাবাসী। প্রতিবেদনে বলা হয়- ‘এই প্রথমবারের মত বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধা পাওয়বন্দর ও সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতে কোনও প্রকল্পের যন্ত্রাংশ নিয়ে আসা হল। ’
জানা গেছে, অয়েল অ্যাণ্ড ন্যাচারাল গ্যাস কমিশন (ওএনজিসি), ত্রিপুরা সরকার ও ইনফ্রাষ্ট্রাকচার লিজিং অ্যাণ্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস-এর যৌথ উদ্যোগে ২০০৮ সালে তৈরি ‘ওএনজিসি ত্রিপুরা পাওয়ার কম্পানি’ (ওটিপিসি) এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ করছে।
ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুধীন্দ্র কুমার দুবের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার দাবি করেছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই এ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি চালু করা হবে। পত্রিকাটির আগরতলা সংবাদদাতা তার এই প্রতিবেদনে আরো জানান, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিশালাকার সব যন্ত্রাংশ আশুগঞ্জ থেকে প্রায় ১শ কিলোমিটার দুরবর্তী ত্রিপুরার পালাটানায় নেয়ার জন্য বিগত ৩ মাস ধরে পরিকাঠামো গড়ার কাজ করা হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশে ১৬টি বাইপাস ও ত্রিপুরায় ৮টি বাইপাস তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে ৩টি জেটি ও ৩টি পার্কিং লটও তৈরি করা হয়েছে।
অপর একটি সূত্রে জানা গেছে- ওই পালাটানা বিদুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ‘ওভার ডাইমেনশনাল কার্গো’ বা ওডিসির আওতায় (শুল্ক ছাড়া) কমপে ৮৬ জাহাজ পণ্য আসছে।
এর মধ্যে ৫টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করা হয়েছে। প্রথম দফায় গত ৯ মার্চ ভারতীয় এবিসি কোম্পানির একটি জাহাজ ১৪০ টন ওজনের বিশাল ২টি ‘টারবাইন’ নিয়ে কলকাতা থেকে আশুগঞ্জে আসে। এমভি সাইকা নামের জাহাজটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি কলকাতার খিদিরপুর নৌবন্দর ছেড়ে আসে। পরবর্তীতে ১২ মার্চ এমভি মোস্তাদির-২ ও এমভি সোনালী ১৬ মার্চ, এমভি হেংগিং-২ নামের অপর একটি জাহাজ ২০ মার্চ ও আরও একটি জাহাজ ২৪ মার্চ আশুগঞ্জ নৌবন্দরে পণ্য খালাস করে।
এর আগে গত বছরের ৩১ মে আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে কলকাতা থেকে আগরতলায় পণ্য পরিবহনের চুক্তি করে বাংলাদেশ।
গত বছরের জানুয়ারিতে নয়াদিল্লি সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের যৌথ ইশতেহারের আলোকে বাংলাদেশ সরকার মে মাসে আশুগঞ্জকে ৫ম বন্দর ঘোষণা করে। আশুগঞ্জে আন্ত:মহাদেশীয় ট্রানশিপমেন্ট কেন্দ্র চালুর ঘোষণাও দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সরকার ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (আইডব্লিউটিটি) চুক্তিতে এক সংযোজনীর মাধ্যমে আশুগঞ্জ দিয়ে ত্রিপুরায় ভারতীয় কার্গো ট্রান্সশিপমেন্টের অনুমোদন দিয়ে আশুগঞ্জকে দ্বিতীয় ট্রানশিপমেন্ট পয়েন্ট ঘোষণা করে।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় পণ্যবোঝাই ট্রেইলার চলাচলকে সড়ক অবকাঠামোর তি ও স্বাধীনতা-সার্বভৌত্বকে উপোর পাশাপাশি আর্থিকভাবেও বড় তির কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেজ্ঞরা। তাছাড়া এই ট্রানজিট বাংলাদেশকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারে; এমন শঙ্কাও রয়েছে।
হাসিনা-মনমোহন চুক্তির পর থেকে বিরোধী দলও অনবড়ত এমন অভিযোগ করে আসছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।