আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লুকিং ফর্‌ আ ""সুপারস্টার""

কালো রঙের আর্তনাদের মাঝেও খুজি একরাশ রঙিন জীবন..একমুঠো আনন্দ...

"সুপারস্টার"... শব্দ টা শুনলেই মনে হয় বাংলাদেশের স্বনামধন্য এক উপন্যাসিকের কোন বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি চলচ্চিত্রের নতুন নায়িকা!!!... আমরা এই সুপারস্টারকে কত সাধ্য- সাধনার পর খুঁজে আনি দেশের কোন এক প্রান্ত থেকে... তাকে নিয়ে রচিত হয় এক নতুন মিডিয়ার জগৎ... যেখানে চারপাশে থাকে শুধু আলো আর আলো!!! কত আকাঙ্ক্ষিত এই জগৎ হয়ে উঠে সেই "সুপারস্টার" এর কাছে...। হবেই বা না কেন!! কত কাঠ খড়ই তো তাকে পুড়াতে হয় এই বিজয় আখ্যা পেতে! প্রথমে রেজিস্ট্রেশন... তারপর বেশ এক চোখ- জুড়ানো... মন- মাতানো সাজে প্রাথমিক পর্যায়ের বিচারকদের সামনে হাজির হওয়া... তারপর এক এক করে জীবনে পুঞ্জীভূত "প্রতিভা" গুলো উগড়ে দেওয়া!! কেউ গান করে... কেউ নেচে... কেউ অভিনয়ে... কেউ বা আবার এক পা দু' পা র‍্যাম্প দেখিয়ে বিচারক মণ্ডলীর কাছে থাকা সোনার চাবিটি পায়, যা নিয়ে পরের ধাপে যেতে হয়... তারপরই এক অজানা জগৎ... কত শত মেক-আপ্‌ আর জাঁকজমক নিজের উপর চাপিয়ে চলতে থাকে একের পর এক সেশন্‌... সেখানে তাদের হাঁটতে শিখায়!! ... বলতে শিখায়!!... খেতে শিখায়!!... আরও কত কিছুই যে আছে...!! সে এক অন্যরকম কারখানা!! আমরা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের বদৌলতে তার কিছু দেখতে পাই... এভাবেই দিনে দিনে তৈরি হয় আমাদের দেশের "সুপারস্টার"... আর বিজয়- মুকুট পরে প্রবেশ করে তার তারা ঝলমল জগতে!... আর পিছনে ফিরতে হয়না... মেধা থাকুক না থাকুক!! সেটা কে দেখে! ঘষে- মেজে চেহারাটাকে আর একটু ফুটিয়ে তা দিব্যি ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর উপযোগী করে নেওয়া যায়!!... আর একের পর এক নাটক আর বিজ্ঞাপনের অফারের সাথে যোগ হয় চিত্র জগতের হাতছানি!!!... কত শান্তির জীবন!!... পুতুলটি সেজে কিছু গৎ- বাঁধা ভঙ্গী আর চোখে মুখে সেই অভিনয়ের চাটুলতা... আর ডিরেক্টরের আদেশে আউড়ে যাওয়া কিছু সংলাপের বুলি... ব্যাস!!, পেয়ে গেল তারকাখ্যাতি আমাদের "সুপারস্টার" !! এখন আর কে তাকে ছুঁতে পায়?? সে হয়ে যায় স্বপ্নরাজ্যের রাজকন্যা... মাটিতে তাদের পা ফেলতে মানা...! কত মানুষের স্বপ্নকন্যা হয়ে বিচরণ এই সুপারস্টারের... আর তার মেধা?? কে যায় দেখতে?? রূপটা তো আছে... আর তা নিয়ে তো তার বাবা মাও আর চিন্তা করেনা... মেয়ের তারকাখ্যাতির সাথে নিজেদের সুযোগটাও নিয়ে নেয়... দিব্যি এক জীবন!! "লাইট-ক্যামেরা- একশন" এর জীবন...। আর "ব্যাটে বলে" মিলে গেলে "নকশা"-র প্রথম পাতায় মডেল হয়ে করে ফেলা বেশকিছু ফটোসেশন..আর কিছু ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি.... এক বছর কাটলেই যদিও মুকুটটা আরেক "সুপারস্টার" কে দিতে হয়... তবুও সেই খ্যাতিটা কিন্তু বেশ পোক্ত হয়ে যায়... তাই চিন্তার কিছু থাকেনা... এভাবেই দিন যেতে থাকে... ব্রান্ডেড কস্‌মেটিক্স এর ছোঁয়ায় সেই সুপারস্টার সাঁজাতে থাকে নিজের "ক্যারিআর"। আর মাঝে কারা যে "স্ক্যান্ডাল" নামক বস্তুটি দিয়ে তাকে জড়িয়ে ফেলে...তারও অজানা! তবে মনে মনে এই সান্ত্বনা যে পত্র পত্রিকায় আলোচনার খাতিরে খ্যাতিটা আরেক ধাপ বাড়িয়ে নেওয়া...। "সুপারস্টার" বানানোর কারখানা থেকে এক এক করে সপ্নকন্যা আসছে... আর ছড়িয়ে পড়ছে আলোর জগতে... এখানে বলি আরেক "সুপারস্টার" এর কথা... তার কাছে আলোর জগতটা কল্পনার রাজ্য... সে জানেনা কিভাবে নিজের রূপে গুণে মানুষের মনে জায়গা করতে হয়... আসলে সময়টা যে পেয়ে উঠা হয়না তার!... নিজের পরিবারের দায়ভার ঘাড়ে নিয়ে... হয়তো বাবার উপর খরচের বোঝাটা কমাতে তাকে নেমে পড়তে হয়েছে জীবনের যুদ্ধে... সে গ্রাম থেকে শহরে আসা সেই মেয়েটি যে আজ নিজেই ঝাঁপিয়ে পড়েছে জীবিকা অর্জনে...ধরি সে হয়তো আজ কোন গার্মেন্টস কর্মী... তার কাছে জীবনটা কি ততটাই ঝলমলে?? মনে হয় না... সে কল্পনা করেনা কোন ল্যাটেস্ট ফ্যাশনের পোশাকের বা জাঁকজমক কোন সাজের...।

তার কাছে নিজেকে সাজিয়ে নেওয়া মানে অনেক সকালে উঠে কাজে ছুটার আগে লাল ফিতে দিয়ে রুক্ষ চুলের একটা বেণী... আর একটু কাজলের আলতো ছোঁয়া... আর যদি একটু বেশি হয় তবে সাথে ঐ টিপটা আর কানের ছোট সোনালি রং পালিশ করা দুলটা... যা সে কিনেছিল হয়তো কোন লেইস-ফিতা ওয়ালার থেকে অনেক দরদাম করে!! এইতো হয়ে গেল! এর বেশি কিছু হয়তো তার কল্পনাতেও নেয়...। তার চিন্তাতে থাকে "...এইবার বেতনটা সময় মত পাব তো??..." "বোনাস কি এবার পাবনা??" "বাড়িতে টাকা সময় মত না পৌঁছালে ??"... তার জগতে থাকে তার পরিবারের চিন্তা... আর মাস শেষে নিজের জন্য কিছু রেখে যখন বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় পুরো উপার্জন... তখনই ফেলে শান্তির নিঃশ্বাস!... আর ভাবে টাকা কয়টা পেয়ে কত উপকারই না হবে বাবার...। বাবা হয়তো দোকানের দেনা শোধ করে হাতে কিছু পাবেন...তা যদি মার হাতে দেয় তবে মাও কিছু ভালমন্দ প্রয়োজন মিটিয়ে নিবেন... অথবা ছোট বোনের অনেক দিনের বায়না করা লাল জুতো যদি এবারো না হয় তবে যাওয়ার বেলায় এক জোড়া নিয়ে যেতে হবে... সাথে মার জন্য সস্তা কোন শাড়ি, যদি খরচে কুলিয়ে উঠে...। তার জগত এমনই... আর সে নিজেই তার জগতের স্বপ্ন কন্যা। নিজের কাছেই নিজের "সুপারস্টার"...।

তাকে কেউ বানায়নি... সে নিজেই নিজেকে শক্ত করে গড়ে নিয়েছে...ধরেছে সংসারের হাল....। আলোর জগৎ তার কাছে তখন দেখা দেয় যখন সে দেখে তার পরিবারের মুখে এক চিলতে হাসি...তার কাছে এটাই শান্তির জিবন...তার চাওয়াও হয় পাওয়ার মত ছোট... । জীবন সংগ্রামে তার টিকে থাকার প্রতিদিনের যুদ্ধ এভাবেই চলতে থাকে...। এমন করেই সমাজে দুই ধরনের "সুপারস্টার" আসছে... একজন আমাদের নিজদের তৈরি ...আর এক জীবন যুদ্ধে লড়ায় করে যাওয়া নিজেকে তৈরি করে নেওয়া... কি অদ্ভুত!! কত বিচিত্র তাদের দুজনের জীবন... । একজন স্বপ্ন দেখায়... আর একজন স্বপ্ন দেখে... ।

একজন টিকতে চায় খ্যাতির দৌড়ে ...আর একজন পেটের তাগিদে... একজনের কাছে জীবন হল আলোকজ্জল প্রহর...আর একজনের কাছে যুদ্ধ ক্ষেত্র..।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.