সরোজ মেহেদী
আমাদের স্বত্ত্ব
কিরে গ্রীষ্মের ছুটিতে দেশে যাবি না । না ভাবছি পুরো লন্ডন শহর ঘুরে দেখব । দেশে যাবার প্লেন ভারা নেই কিভাবে বলি । মেরি । বল ।
ওরা আসবেনা ? চারটায় আসার কথা । দেখতো কয়টা বাজে । দশ বাজে । এখন ও আসেনা কেন্ কিছু জানস্ । মনে হয় ভিয়ার জন্য অপেক্ষা করতাছে ।
ওর আবার কি হইছে । কি জানি । আমি ও আ্যন্ডি মেরি ভাল বন্ধু । ডিকো বারবারা , নিকোলাস ভিয়া , ইউনোলা আলভিস , আমি ও মেরি একসাথে যুক্তরাজ্যের ওয়েস্টল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি । থাকি ব্রিকল্যান্ডে ।
ব্রিকল্যান্ড থেকে ভার্সিটি বেশি দূরে নয় । যতায়াত ভারা প্রতিদিন তিন টাকার মত । প্রায় বিকেলে আমরা একসাথে আড্ডা দেই । ঘুরে বেড়াই । বাধ্য শ্রোতার মত শুনি ওদের দেশের কথা ।
মেরিতো কথায় কথায় বলবে আমরা পৃথিবীর শাসক তাই আমাদের কুর্নিশ কর । মর্কিনীদের ঔদ্ধত্য আর অবিচার এর জন্য কোন অনুশাচনা নেই ওর মধ্যে । অষ্ট্রেলিয়া নিয়েতো ইউনোলার গর্বের শেষ নেই । ভিয়ার চোখে জার্মানিই সেরা । হিটলারকে মহান বলতে কোন লজ্জা নেই ওর ।
বারবারার মুখে ফেনা উঠে , নিউজিল্যান্ড , নিউজিল্যান্ড চিৎকারে । আমি দেশকে নিয়ে কি বলব ভেবে পাইনা । নিম্ন আয়ের ছোট্ট দেশ । কি থেকে কি বলে আবার ওদের হাসির পাত্র হই ।
আমরা সপ্তাহে দুয়েক দিন স্যান্ড-ল্যাকে ঘুরতে যাই ।
বিকেলটা আড্ডা মেরে রাত হলে বাসায় ফিরি । ল্যাকটা ছিমছাম । পরিষ্কার । সান বাধানো ঘাট । ওরা আমাদের দেশে আসতে চায় ।
ভাবি এসে যদি নাক ছিটকায় । মানুষের ঘিন্জি , গাড়ির জ্যাম , ছড়ানো ছিটানো ময়লা , কি দুর্গন্ধ , সামনেই বলে বসবে তোরা যে এত গরীব আগেতো জানতাম না । তারপর রুটিন করে সকাল বিকাল খোটা । নাহ ওদের আনা যাবেনা . . .
স্যান্ড ল্যাকের আড্ডাটা আজ বেশ জমেছে । স্নিগ্ধ বিকাল ।
বসন্তের শেষ লগন । বাতাসে দুলে উঠে প্রান । কথার খই ফুটাচেছ একেকজন । মেরি বলে উঠে এখানে কি-ইবা আছে । অথচ আমাদের নিউইয়র্ক শহরটা ঘুরে দেখতেই কয়েক মাস লাগে ।
বারবারা যোগ দেয় , আর আমাদের দেশের সবুজ ঘাস মারিয়ে পথে উঠতেই পর্যটক ভুলে যায় পৃথিবীর সব দু:খ । সুযোগটা হাতছারা করেনা ভিয়া , আমি দানিয়ুবের তীরে বেড়ে উঠেছি । কোন মানুষ যদি দানিয়ুবের তীরে একরাত কাটায় তবে তার জীবনে আর প্রকৃতি দেখার কোন অপূর্নতা থাকেনা । ইউনোলা চেচিয়ে উঠে কি নেই বল আমাদের । আমরা পৃথিবীর ক্রিকেট পরাশক্তি , উন্নততর দেশ ।
খোচাটা মেরিই প্রথম দেয় আমাকে কিরে তুই কিছু বলছিস না যে. . . সবাই ঝেকে ধরে । আমতা আমতা করতে করতে ভাবি মহাস্হান গড় , কোটবাড়ি , কক্সবাজার , এসব তো আমাদের আছেই । পদ্মা , মেঘনা , গোমতি , যমুনার কথাতো পৃথিবী জানেই । . . . তবে এবার গলা চড়িয়ে বলে উঠি , তোরা কি জানিস আমাদের একটা রক্তাত্ত্ব স্বাধীনতা আছে । আছে নিরস্ত্র বাঙ্গালির সশস্ত্র হানাদার রুখে দেয়ার ইতিহাস ।
আমাদের আছে স্ব-ভাষার জন্য রক্ত দেয়ার একমাত্র স্বত্ত্ব । আর মেরি তোদের সবচেয়ে উচু ভবন সিয়ার্স টাওয়ার তো আমরাই বানিয়েছি , এই তো সে দিন বারবারাদের্ করলাম হোয়াইটওয়াশ । অতিথীপরায়ন জাতি হিসেবে আমাদের ধারে কাছে আর কে আছে বল দেখি তোরা…?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।