আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাধীন দেশের স্বাধীন পতাকা এবং মূল নকশাকার

২ মার্চ। জাতীয় পতাকা উত্তোলন দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বাংলাদেশের পতাকা সম্পর্কে কিছু জরুরি তথ্য এখানে উল্লেখ করছি।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্ত।

সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক, বৃত্তের লাল রং উদীয়মান সূর্য, স্বাধীনতাযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার এই রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারিভাবে গৃহীত হয়।
বাংলাদেশের পতাকা আয়তাকার। এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০:৬ এবং মাঝের লাল বর্ণের বৃত্তটির ব্যাসার্ধ দৈর্ঘ্যের পাঁচ ভাগের এক ভাগ, পতাকার দৈর্ঘ্যের ২০ ভাগের বাঁ দিকের নয় ভাগের শেষ বিন্দুর ওপর অঙ্কিত লম্ব এবং প্রস্থের দিকে মাঝখান বরাবর অঙ্কিত সরল রেখার ছেদ বিন্দু হলো বৃত্তের কেন্দ্র।
পতাকার দৈর্ঘ্য ১০ ফুট হলে প্রস্থ হবে ৬ ফুট, লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে ২ ফুট, পতাকার দৈর্ঘ্যের সাড়ে ৪ ফুট ওপরে প্রস্থের মাঝ বরাবর অঙ্কিত আনুপাতিক রেখার ছেদ বিন্দু হবে লাল বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু।


পতাকা ব্যবহারের মাপ
ভবনে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপ হলো ১০ ফুট বাই ৬ ফুট, ৫ ফুট বাই ৩ ফুট এবং ২৫ ফুট বাই ১৫ ফুট। মোটরগাড়িতে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপ হলো ১৫ ইঞ্চি বাই ৯ ইঞ্চি এবং ১০ ইঞ্চি বাই ৬ ইঞ্চি। আন্তর্জাতিক ও দ্বিপক্ষীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য টেবিল পতাকার মাপ হলো ১০ ইঞ্চি বাই ৬ ইঞ্চি।
পতাকার ব্যবহারবিধি
বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সরকারি ও বেসরকারি ভবন, বাংলাদেশ কূটনৈতিক মিশন ও কনস্যুলেটে পতাকা উত্তোলন করতে হবে। শোক দিবসে পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

পতাকা অর্ধনমিত রাখার ক্ষেত্রে প্রথমে পতাকা শীর্ষস্থান পর্যন্ত ওঠাতে হবে। তারপর অর্ধনমিত অবস্থানে রাখতে হবে। দিনের শেষে পতাকা নামানোর সময পুনরায় শীর্ষস্থান পর্যন্ত উঠিয়ে তারপর নামাতে হবে।
সরকারের অনুমতি ছাড়া জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা যাবে না। জাতীয় পতাকার ওপর কিছু লেখা অথবা মুদ্রণ করা যাবে না।

এমনকি কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষে কিছু আঁকা যাবে না।
অবমাননার শাস্তি
জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় প্রতীক অবমাননা করার সর্বোচ্চ শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা একসঙ্গে উভয় দণ্ড। ২০১০ সালের ৪ জুলাই এ সংক্রান্ত আইনের সংশোধনী-২০১০-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
স্মৃতি এমন এক জিনিস যা ফিরে ফিরে মাথায় আসে।

স্কুলজীবনের কথা মনে পড়ে। যখন জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সাথে সাথে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হত। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া শেষে জাতীয় পতাকাকে সালাম প্রদর্শন করা হত। এরপর শপথ পাঠ করা হত। শপথের কথাগুলো এখনও কানে বাজে।

ভীষণ দুঃখ এবং পরিতাপের বিষয় এই, আমার দেশের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে ইতিহাস সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়া হচ্ছে। স্বাধীনতার এত বছর পর এই ২০১৪ সালে দাঁড়িয়ে আমাকে এই কথা লিখতে হচ্ছে। এ যে কী লজ্জার, কি ঘৃণার তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। স্বাধীনতার এত্ত বছর পরও স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে তর্ক চলে। বাংলাদেশের পতাকার ডিজাইনারকে নিয়েও বিভ্রান্তি হয়!
চলতি বছরের ২ মার্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় চতুর্থ জাতীয় পতাকা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘জয়ধ্বনি’র বর্ণাঢ্য আয়োজনে এই উৎসব পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকের মধ্যে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবু নারায়ণ দাশ। ৩ মার্চ, ২০১৪ বাংলাদেশের জাতীয় পত্রিকা ‘দৈনিক বর্তমান’-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখান থেকে কিছু কথা উল্লেখ করতে চাইছি। জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাশ বলেছেন, ‘১৯৭০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি যে পতাকাটি তৈরি করা হয়েছিল, তাতে সবুজ রং দেয়া হয়েছিল।

এই সবুজ বাংলার চিত্র আর লাল রংটি দেয়া হয়েছিল সংগ্রাম ও জীবনের প্রতীক হিসেবে। আর মাঝে মানচিত্রটি সোনালি রং দিয়ে আঁকা হয়েছিল এই সোনার বাংলার প্রতীক হিসেবে। ’
পতাকার মধ্যখানে মানচিত্র আঁকার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলা আলাদা করে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বোঝাতে মানচিত্রটি দেয়া হয় এবং স্বাধীনতার পর মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। পতাকা সঠিকভাবে তুলে ধরা জাতির কর্তব্য। কিন্তু মানচিত্র থাকায় পতাকাটি আঁকা অনেক কঠিন এবং বিকৃত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

তাই সহজ করে পতাকা আঁকার জন্য মানচিত্রটি সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ’
এবার আসি নিজে যা লিখছিলাম তাতে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার মূল নকশাকার শিব নারায়ণ দাশ। কিন্তু এই কথাটি ক’জন জানেন? ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর, জাতীয় পত্রিকা ‘দৈনিক প্রথম আলো’-তে প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বিষয়ক আরেকটি লেখা। সেখান থেকে ক’টি লাইন উল্লেখ করছি, ‘বিজয়ের পর ১৯৭২ সালে শিবনারায়ণ দাশের ডিজাইন করা পতাকার মাঝে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রং ও তার ব্যাখ্যা-সংবলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয় পটুয়া কামরুল হাসানকে।

কামরুল হাসান আমাদের জাতীয় পতাকার যে রূপ দিয়েছিলেন, সেটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। ’
শুধুমাত্র মূল পতাকার নকশা থেকে মানচিত্রটি সরিয়ে ফেলেই একজন জাতীয় পতাকার নকাশার হতে পারে? কিন্তু তাই তো হয়েছে। নকশাকার কামরুল হাসান-কে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশাকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কোথাও নেই নকশাকার শিব নারায়ণ দাশের নাম! কোন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তাঁকে ডাকা হয় না। এখন পর্যন্ত কোন সম্মাননা তাঁকে প্রদান করা হয়নি! তবে আমরা এগুলো আশা করি কিভাবে? যেখানে ইতিহাস থেকে জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাশের নাম মুছে ফেলা হয়েছে, সেখানে তাঁকে ভুলতে কি দোষ?
ছোটদের কথা দূরে থাক; এখনকার তরুণ প্রজন্মের ক’জন জানে শিব নারায়ণ দাশের নাম? হাতেগোনা ক’জন হয়তো জানতে পারে।

আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য দেয়া হোক। নির্ভুল বলতে সম্পূর্ণ নির্ভুল; একটি বা দুটি অর্ধসত্য যেন না হয়। ।

সোর্স: http://prothom-aloblog.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.