আনন্দবতী মেয়ে আমি হাওয়ায় উড়াই চুল,চোখের ভেতর ছলাৎ ছলাৎ মনের ভেতর নীল ঘাসফুল
কতোটা পথ অতিক্রম করলে
আমি আবার মানুষ হবো ?
একজন শুদ্ধ মানুষ !
প্রিয় এ কবিতা হারিয়ে গেছে । যে বয়সে মানুষ প্রেমের কবিতায় স্বপ্ন আঁকে সেই সতেরো বছর বয়সে আমি পরিপূর্ণ মানুষ হবার চিন্তা করতাম । যথেষ্ট আবেগী আমি , এখনও । তাইতো ভালো বন্ধু পেয়েছি জীবনে । যদিও আমায় দেখে সবাই ভাবতো খুব অহঙ্কারী , যেই না মিশেছে অমনি সব ভুলের মরণ হয়েছে ।
পরের দিন রায়হান স্যারের ক্লাশে অনেক ছেলে - মেয়ে । আমার পাশে নাসিমা , অন্য পাশে নাহার । আমরা ছিলাম "এন কিউব"। রোল কল হচ্ছে এমন সময় আমার কোলে একটা কাগজের গোল্লা । আমি ধরার আগেই ছোঁ মেরে নাসিমা নিয়ে নিলো ।
অবাক দৃষ্টি ! কি হলো কিচ্ছুই বুঝলাম না । ক্লাশ শেষ হবার পর একটা রাগত স্বর :
ওই কোন বান্দোরে এই কাজ করসে রে ? শালা সামনে আয় । মেয়ে দেখলেই প্রেম করতে সাধ জাগে , না ?"
----"এই নাসিমা কি হলো রে ? এসব বাজে কথা বলতে হয়না , ছিঃ !"
একটা ছেলে (পরে জেনেছি তার নাম হিরণ ) আমায় প্রেমপত্র দিয়েছে তাই নাসিমার এতো রাগ । ও যে অসম্ভব রাগী এটা সবাই জানতো , এতে আমারও লাভ হয়েছিলো কেউ আমায় ঘাটাতো না । ওই ঘটনার পরে ক্লাশের বেশ কিছু ছেলেও ক্ষেপে গেলো ।
ওদের কথা হলো আমরা সবাই বন্ধু । ওসব প্রেমপত্র আর কখনো কাউকে দেয়া যাবেনা । সেদিনই বন্ধুত্ত্ব হলো শওকত (কিপ্টুস নং এক , পুরো কলেজ জীবনে একমাত্র সৌভাগ্যবতী আমি-ই যে পাঁচটি টাকার খাবার খেয়েছিলাম , সবাই কে অবাক করে দিয়ে ), আব্দুল আহাদ মিনার (বোন নেই বলে আমায় দিদি ডাকলো , আমার বাপি - মামনি কে বাপি - মামনি ডাকতো । বর্তমানে সে ওয়ার্কাস পার্টির নেতা , শামসুল হক মিন্টু (খুব শান্ত - শিষ্ট এবং গুছানো ছেলে ), কাইয়ূম (মজার ছেলে , আমি দিনে তাকে কতোটা মারলাম তার হিসাব করতো ), আবুল (স্মাইলিং ফেস ), বদরুল (প্রচন্ড রাগী , রাগলে মুখ লাল হয়ে যেতো । অদ্ভূত এই যে রাগের সময় আমি দাঁড়ালে রাগ শেষ , জমসেদ (দুষ্টুমি করতো যথেষ্ট বোঝা যেতো না ), বুরহান খুব ভালো , সৎ ছেলে আওয়ামী রাজনীতি করে , কিন্তু নিজের
কোনো স্বার্থ কাজ করে না , এমন নেতায় দেশ ভরলে দেশ আজ কোথায় থাকতো ।
বয়সে বড়ো , কিন্তু আমাদের বন্ধুত্ত্বটা অনেক আন্তরিক এখনও, তপন, শাহাবুদ্দিন (বর্তমানে ডাঃ ), মাহবুবুর রহমান বেলাল সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু আমার , লোক আমাদের কতোবার যে প্রেমিক জুটি আখ্যা দিয়েছে আর কতোবার বিয়ে করিয়েছে , তবুও আমাদের বন্ধুত্ত্বের নির্ভেজাল ভালোবাসায় কোনো দাগ পড়েনি ,জাহাঙ্গীর শান্ত প্রকৃতির কিন্তু হাসতো প্রাণখোলা , গুলজার মজাদার একটা ছেলে যার সাথে থাকলে অনেক কষ্ট মিলিয়ে যায় , সত্যবাবু আমার মনিপুরী বন্ধু যার হাসিটা খুব সহজ ভালোবাসার আর তার মুখে আমার নামটা শুনতে খুব ভালো লাগতো ।
বেলালের সাথে বন্ধুত্ত্বটা হলো একেবারে নাটকীয়তায় । রসায়ন ক্লাশে বিশ্বজিৎ স্যার রোল কল করছেন , যেই আশি নম্বর এলো , স্যার জানতে চাইলেন এই নম্বরের ছেলেটা কে ? এখন পর্যন্ত তাকে তিনি দেখেননি । যেই নাম জানলাম বললাম , "স্যার ওকে তো দেখি সারাদিন আড্ডাই মারে । বাজে , বদমাশ ছেলে ।
সায়েন্স এর ছাত্রই শুধুই নামে , কাজে নয় । " সেদিন তো গেলো । পরেরদিন সবাইকে আমাদের বাসায় আসতে বললাম , ২৮ আগষ্ট ছিলো আমার জন্মদিন । ভেবেছিলাম কলেজে ওঠার পর প্রথম জন্মদিন আর বাপি - মামনির সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দেবো । নাসিমা , পপি , লিলিসহ কয়েকজন মেয়ে এসেছিলো ।
আর চা' বাগানে বাপির সহকর্মীরা । রাত ৯টা বেজে গেলো কেক তখনো কাটা হয়নি বন্ধুরা আসবে । নাসিমাই বললো ওরা কেউ আসবে না । বেলাল কে কেউ কিছু বললে সবাই তাকে নাকি পরিহার করে । শুনে মনটা এতোটাই খারাপ হলো যে আমি কাঁদতে পারিনা বলেই কেমন অস্থির লাগছিলো ।
বাপি - মামনি সামলে নিলো । আর আমার পরে এতোটাই রাগ উঠলো (রাগলে আমি এখনও মারাত্মক হয়ে যাই রীতিমতো সবাই ভয় পায় ) যে পরের দিন কলেজ গিয়েই ধরলাম মিন্টু কে এভাবে আমায় অপমান করা কি তাদের উচিত হয়েছে ? তখনই জানলাম সেদিন স্যারের ক্লাশে বেলাল কে অমন বলায় সবাই একযোগে আমায় বয়কট করেছে । চরম রাগ তখন মাথায় , গেলাম বেলালের সামনে জানতে চাইলাম স্যারকে যা বলেছি তা কি ভুল ছিলো ? আর এই বলার জন্য সবার সামনে একজন বন্ধুকে অপমান করতে পারলো কি করে ? সে একটু থতোমতো খেলো :"আমি তো তাদের যেতে না করিনি ! ওরা আমার জন্য না গেলে আমি কি করতে পারি ?" তখন আমি বললাম , "বন্ধু হয়ে আমন্ত্রণ করেছিলাম বন্ধুকে , ক্লাশের জন্য সম্পর্ক যে গড়তে পারেনা তার কাছে বন্ধুত্ত্বর দাবী করাই বৃথা । আর কোনোদিন তোমার ভালো - মন্দে এই নীলাঞ্জনা নিজেকে জড়াবে না " ---- বলে সরে তো এলাম । বিকেলে বাসায় এলাম ।
ও মা সন্ধ্যায় দেখি সবাই এসেছে । জীবনের দ্বিতীয় সারপ্রাইজ । প্রথমটি ছিলো প্রাথমিক বৃত্তি পাবার পর বাসায় ফিরে আচমকা পার্টি । সেদিন বন্ধুরা বলেছিলো বাপি - মামনিকে :"আঙ্কেল - আন্টি নীলা কে নিয়ে চিন্তা করবেন না । প্র্যাক্টিক্যাল সন্ধ্যায় শেষ হলেও ওকে দিয়ে যাবো ।
" সত্যি এরপর থেকে আমরা কখন যে "তুই" এ চলে এসেছি , নির্ভর করে গেছি আর শুদ্ধ ভালোবাসায় বন্দী হয়েছি । মনে নেই । বেলাল কম মার খায়নি , আমিও খেয়েছি হাত মুচড়ে ধরতো । বাপিকে বলতাম হাত ব্যথা ওই বেলালটা ব্যথা দিয়েছে বাপি । বাপিও বলতো :"তুই দিস কেন ? তোরও তো হাত চলে , না মারলে কেউ কি সাধে মারে ?" বাপির বুকে মাথা রেখে বলতাম "কি করবো রাগ উঠলে ?"
বন্ধু তোর মনে আমায় রাখিস
কি রাখবি ?
স্বার্থহীন ভালোবাসা দিলাম
কে , কি বলে ? কি এসে যায় !
পুরোনো দিন হবে যখন
এই সময়গুলো
ব্যস্ততায় ডুববি
তখনও জানিস এই আমি তোরই কথা ভাবছি
সেই বাস-এ বসে লেখা এই রাফ লেখাটা এভাবে সত্য হয়ে যাবে , তখন ভাবিনি ।
আমি এখনও তাদের ভুলতে পারিনি । আমি চাই ও না ভুলতে ..........
নীলাঞ্জনা নীলা
ক্রমশ------
ল্যুভেন - লা - ন্যুউভ , বেলজিয়াম
০৪ - ০২ - ১০ ইং
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।