নদী সাগরের টানে ছুটে যায়। পুরুষ নারীর প্রেমে হাবুডুবু খায়। নারীও কম যায় না সেও সুযোগ বুঝে ঘর ছাড়ে। প্রজাপতি ফুলের গন্ধে বাগানে ওড়াওড়ি করে। মৌমাছি মধু সংগ্রহে ফুলের সুধা পান করে।
বন্ধু বন্ধুর টানে কাছে আসে। বন্ধুর বিপদে ছুটে যায়। বাড়িয়ে দেয় সহযোহিতার হাত। এভাবে প্রেম আর ভালবাসার মাঝেই পৃথিবীর সবকিছু আবর্তিত হচ্ছে। ভালবাসা আছে বলেই এখনো পৃথিবী টিকে আছে।
হত্যা, খুন, গুম, অবিশ্বাস, প্রতারণা যেভাবে বিশ্রী কটু গন্ধ ছড়িয়ে দিচ্ছে চারিদিকে। ঠিক সে রকমভাবে জাড়িয়ে আছে ভালাবাসও। ভালবাসা আছে বলেই এখনো নদীতে জোয়ার আসে। পুকুরে শাপলা-শালুক ফোটে। বাগানে ফুল ফোটে।
বসন্তকালে প্রকৃতিতে যৌবন আসে। গাছের ডালে কোকিল ডাকে।
এই ভালবাসার রঙ আর ঢঙ বড়ই বৈচিত্র। বড়ই বর্ণিল। বড়ই স্বপ্নিল।
আপনার কাছে যা ভালবাসা লোকের কাছে তা নির্লজ্জতার বহিঃপ্রকাশ। আপনি যে জিনিসকে অমৃত সুধা মনে করেন ধর্মের কাছে তা পাপ। এভাবে মানুষের সাথে ধর্মের, মানুষের সাথে সমাজের, ধর্মের সাথে ভালবাসার পাল্টাপাল্টি লড়াই চলছে। চলবে কিয়ামত অবধি। সে লড়াই কখনো প্রকাশ্য আর কখনোবা অপ্রকাশ্য।
ভালবাসার লড়াই আর কাড়াকাড়ির ভেতর সময়ের কাটা সামনের দিকে এগিয়ে চলে। মানুষ ভালবাসার সময়ের সাথে নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলে। ভালবাসার সাগরে সিঞ্চন করে। এভাবে ভালবাসাকে সাথে নিয়েই মানুষের জীবন এগিয়ে চলে। ভালবাস ছাড়া কেউ চলতে পারে না।
তাই আমিও ভালবাসার হাত ধরি। আমাকেও ভালবাসার হাত ধরতে হয়। আমিও ভালবাসার জন্য হা করে থাকি। যে রকম সাহারা মরুভূমি এক ফোটা বৃষ্টির জন্য কাতর হয়ে আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। দয়িতা যেভাবে তার প্রবাসী স্বামীর পথ চেয়ে থাকে।
স্বামীর জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। প্রতি সন্ধ্যায় সাজগোঁজ করে তার ভালবাসার জমিনকে প্রস্তুত রাখে প্রাণের প্রতিধনের জন্য।
আমিও কারো একটু ভালবাসা পাবার জন্য অপেক্ষা করি। এক ফোটা ভালবাসার জন্য মাঝে মাঝে আমার বুকের ভেতর কেমন জানি করে। তখন আমার শরীরের প্রতিটি রক্তকণিকা টগবগ করে ফুটতে থাকে ভালবাসার জন্য।
শুধুই ভালবাসার জন্য। মনে হয় এখনি বুঝি অগ্নিলাভার মতো আমি ভালবাসার বিষ্ফোরণে শেষ হয়ে যাবো। কিন্তু আমি কারো ভালবাসা পাই না। আমার ভালবাসার তৃষ্ণা কেবল বেড়েই চলে। কেউ ভালবাসার পেয়ালা হাতে আমাকে আমন্ত্রণ জানায় না।
আমার ভালবাসার তৃষ্ণা মেটে না। কিন্তু মাঝে মাঝে ছোট বড় অনেকে কেন জানি অপ্রত্যাশিতভাবে ভালবাসার পরশ নিয়ে আমার কাছে আসে। কাশফুলের ¯িœগ্ধ পরশ নিয়ে আমার পাশে বসে। আমাকে সময় দেয়। আমাকে নিয়ে ঘুরতে যায়।
আমাকে নিয়ে নাস্তা করে। আমাকে নিয়ে চা পান করে। আমার সাথে গল্প করে। মনের কথা বলে। সত্যিই তখন আমার খুব ভাল লাগে।
আমি তখন বিধাতার পায়ে লুটিয়ে পড়ে এ নেয়ামতের শুকরিয়া জানাই। কিন্তু পরক্ষনে আবার ভয় লাগে তাদেরকে হারানোর। অনেকে আবার হারিয়েও যায়। এ পর্যন্ত হাতের করে গুনে গুনে অনেকের নাম বলতে পারব যে কারা কারা আমার ভালবাসার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। এক সময় তারা আমাকে পাগলের মত ভালবাসত।
আমিও তাদের জন্য প্রস্তুত থাকতাম। এখন সেসব কথা মনে হলে আমার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। তারা আমাকে মনে রেখেছি কিনা জানি না; আমি তাদেরকে এখনো মনে রেখেছি। আমার বুকের মাঝে তাদের জন্য ভালবাসা লালন করছি। তাদের কথা ভাবি।
মনের ক্যানভাসে তাদের মায়াবী মুখের ছবি আঁকি। দু’হাত তুলে আমার পরম প্রিয় বিধাতার কাছে দোয়া করি।
আমি সে সব বন্ধুকে স্বরণ করি, তাদের জন্য দোয়া মাগি তাদের জীবন ধন্য। কারণ, তাদের কথা মনে করে অন্তত আমার মত এক পাপী এক সাধারণ মানুষ দোয়া করছে। কিন্তু আমার কথা কেউ কি কখনো ভেবেছে, স্বরণ করে মন খারাপ করেছে, দোয়া করেছে।
হায়! আমি যদি এমন একজন মানুষ হতে পারতাম, যাকে অন্তত একজন মানুষ হলেও স্বরণ করবে, ভাববে। আমার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে দু’হাত তুলে দোয়া করবে; তাহলে আমার জীবন কতই না ধন্য হত। হয়তো করে কিন্তু আমি তা জানতে পারি না।
ভালবাসার সংজ্ঞা কার কাছে কেমন তা আমি জানি না। শাব্দিক অর্থ কি তাও আমি বলতে পারব না।
আমার কাছে ভালবাসা একটা আপেক্ষিক বিষয়। কেউ যদি আমাকে ভালবাসার শক্তির কথা জিজ্ঞেস করে আমি বলবো ‘সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গকে’ আমি ভালবাসার শক্তি হিসেবে বুঝি। ভালবাসার বন্ধন বলতে আমি চীনের মহাপ্রাচীনকেই বুঝি। যা শত বোমার আঘাতেও টলে না। ভালবাসার অবগাহন বলতে বুঝি আটলান্টিক মহাসাগরের অবারিত জলধারাকে।
ভালবাসার আবেগকে সুনামির সাথে তুলনা করি কিংবা পাহাড়ের নিচে লুকিয়ে থাকা অগ্নিলাভাকে।
আমার একটা গুণ হচ্ছে আমি মানুষকে প্রাণভরে ভালবাসতে পারি কিন্তু আমার সেই সেই ভালবাসার মানুষদেরকে আমি বেঁধে রাখতে পারি না। বিধাতা হয়তো এই যোগ্যতা আমাকে দেইনি তাই বলে আমার দুঃখ নেই। তবে তিনি যে আমাকে মানুষকে ভালবাসার জন্য একটা মন দিয়েছেন তার জন্য হাজার শুকরিয়া জানাই। তবে কায়মনোবাক্যে আমি আমার সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাকে অনুগ্রহবশে আমার ভালবাসার মানুষদেরকে বেঁধে রাখার সে যোগ্যতা দান করেন।
তাহলে কতই না ভাল হতো।
আমি অপাদমস্তক একজন আস্তিক মানুষ। এই আশায় দিন গুজরান করি যে সৃষ্টিকর্তা আমার মনে এত ভালবাসার আগুণ জ্বেলে দিয়েছেন, নিশ্চয়ই এ আগুন নির্বাপিত করার ব্যবস্থা তিনিই করবেন। অপরূপা মনোহারিনী চক্ষু শিতলকারী মায়াবিনী কোনো এক জীবন সঙ্গিনীর ব্যবস্থা তিনি করে দিবেন।
হে আমার ভালবাসার রমণী, তোমাকে আসতেই হবে আমার কাছে।
তোমার জন্য গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, বকুল, শিউলির পুষ্পমালিকার বাগান তৈরী করে রেখেছি। চাঁদনি রাতে শিশিরভেজা সকালে তুমি সেই বাগানে হেঁটে বেড়াবে। মালা গাঁথবে আমার গলে পরাবে বলে। তোমার জন্য ঘষে মেজে প্রস্তুত করে রেখেছি আমার ভালবাসার জমিন। ভালবাসাই হচ্ছে জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট মূলধন।
যার কাছে এ মূলধন আছে তার জীবন অনেক বেশি সার্থক অনেক বেশি তাৎপর্যময়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।