ইদানিং কাওকে পেলেই শুধু জিজ্ঞেস করি অতীত পরিবর্তন এর সুযোগ পেলে কি করতেন? প্রায় সবাই তেমন কিছু করতে চায়নি? কয়েকজন ছিল যারা অতীতের নির্দিস্ট কোন মুহূর্তে যেতে চেয়েছে শুধু হারানো প্রিয়জনের জন্যে। অর্থাৎ, কিছু অপরিবর্তন যোগ্য অতীত ব্যতীত কেও ই অতীতের জন্যে খুব একটা চিন্তিত না।
কিন্তু আমি তাহলে এমন কি করে হলাম??? আমার জীবনের সবচাইতে শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে আমার অতীত। প্রায় প্রতিটা মুহূর্ত ই আমার মনে হতে থাকে যদি অতীতে যেতে পারতাম!!আমার চিন্তা শুধুই যে ইমোশোনাল তা না। এর পিছনে আমার বেশ কিছু নিজস্ব ব্যাখ্যা ও আছে।
প্রথমত, যখন ছোট ছিলাম আমার সবকিছু নিয়েই আমার মা বাবা চিন্তা করত। আমার কাজ ছিল শুধু খাওয়া দাওয়া, ঘুম। জগত সংসারের কোন কিছুই স্পর্শ করত না। আমার সামান্য দুঃখ কস্টেও আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হবার মত অনেক মানুষ ছিল। সবচাইতে বড় কথা, আমার দুঃখ কষ্টের কারন গুলো ও ছিল খুব সাধাসিধে।
সামান্য একটা খেলনা, না খেতে চাওয়ার আবদার।
দ্বিতীয়ত, যখন ছাত্র ছিলাম তখন আমার একটাই কাজ ছিল লেখাপড়া করা। আমার লেখাপড়ার সীমানা ও খুব ছোট ছিল। অল্প কয়েকটা মাত্র বই। এরপরে কিছু গল্পের বই পরতে গেলেও ছিল অনেক বিধি নিষেধ।
পরীক্ষা তে পাস করা বা ভাল করার টেনশন ছিল, শিক্ষকদের বেতের বাড়ির ভয় ও ছিল কিন্তু জটিলতা ছিল না। ক্যাডেট কলেজে পড়ার কারনে আমি গর্ব করে বলতে পারি নিঃসন্দেহে আমার ছাত্র জীবন ছিলো বাইরের বড় অংশের ছাত্র দের চেয়ে অনেক বেশি রোমাঞ্চকর, আনন্দঘন এবং বন্ধুবেস্টিত। প্রকৃত পক্ষে, আমার জীবনের সবচাইতে বড় পাওয়া আমার কয়েক জন বন্ধু আমি আমার ক্যাডেট জীবনেই পেয়েছি।
তৃতীয়ত, আমার প্রতিটি কাজ ই অভিভাবক কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় চিন্তা চেতনার ব্যাপ্তি খুব ই সীমিত ছিলো। সীমিত চাহিদার জন্যে আমার মাঝে অপ্রাপ্তির চেয়ে প্রাপ্তি ছিলো অনেক বেশি।
জীবন ছিল অনেক সাধারন। ইচ্ছে হলেই অনেক কিছু করে ফেলা যেত যা এখন ঠিক সম্ভব হয়ে উঠে না।
চতুর্থত, শিশুদের নিষ্পাপ এনিম্যাশনের বদলে এখন প্রেম ভালোবাসা অথবা খুন ডাকাতির থ্রিলার জটিলতার মুভি বেশি দেখা হয়। এখনের আমি সাধারন কারনে র কস্ট পাই না। আমার জানার সীমানার পরিধি বেড়ে যাওয়ায় আমার চাহিদা গুলো এখন শুধুই খেলনা বা খাওয়া না খাওয়ায় আবদ্ধ নেই।
সুখের জন্যে বৈষয়িক প্রাপ্তির পিছনে ছুটতে ছুটতে আমি ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। আমার জীবন এখন অনেক জটীল, পঙ্কিলতাই পরিপুর্ন।
শৈশবে দেখেছিলাম পিটারপ্যানের কার্টুন। পিটারপ্যান রুপকথার সেই চরিত্র যার রাজ্যের কারো বয়স বাড়ে না। তারা সবসময় হৈ হুল্লর করে আনন্দে দিন কাটায়।
সোনালি অতীতের জন্যে আজকাল খুব পিটারপ্যান এর রাজ্যে যেতে ইচ্ছে হয়। ডঃ ফস্টাসের মত মাঝে চিৎকার করে উঠি টাইম স্ট্যান্ড স্টিল। মনে হয় যদি ফিরে পেতাম আমার সেই অতীত কে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।