পারিবনা পারিবরা এই কথাটি বলিও না আর একবার না পারিলে দেখ শতবার। আমি কিছুই পারিনা চেষ্টায় আছি কিছু পারার কিছু করার যদি খোদা থাকে সাথে। কেউ ফেবুতে ক্যাচাল করতে চাইলে fb.com/kalochita
শম্পা ইসলাম: রাহেলা বেগম (৩৫)। একজন এনজিওকর্মী। থাকেন নাখালপাড়ায়।
মোহাম্মদপুরের অফিসে যেতে তাকে প্রতিদিন ফার্মগেটের প্রধান ওভারব্রিজ পার হতে হয়। তিনি বলেন, অন্য কোন উপায় না থাকায় বাধ্য হয়েই এই ওভারব্রিজের ওপর দিয়ে পার হই। একে তো পথচারীদের ভিড় তার ওপর হকারদের উপদ্রব। হকারদের পণ্যের পসরা ওভারব্রিজের বেশির ভাগ জায়গা দখল করে রাখে। এমন অবস্থা হয় যে, পাশাপাশি দু’জন হাঁটা যায় না।
পথ চলতে হয় ঠেলাঠেলি করে। এভাবে চলতে গিয়ে গত ডিসেম্বরে আমার মোবাইল ফোনটি খোয়া গেছে। অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে ভয়ে গা ছমছম করে। তিনি বলেন, তেজগাঁও সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের পাশের ওভারব্রিজটি সন্ধ্যার পর ভাসমান পতিতাদের দখলে চলে যায়। এ সময় তারা নানা রঙের বোরকা পরে মুখ ঢেকে বিক্ষিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।
শাহবাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বারডেম হাসপাতালের মাঝামাঝি ফুটওভারব্রিজ। এর নিচ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন ১০-১২ জন। এদের একজন আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, এই ওভারব্রিজের ওপর দিয়ে পারাপারের কোন পরিবেশ নেই। ১৫ দিন ধরে পিজি হাসপাতালে এক রোগী নিয়ে আছি।
প্রথমে ওভারব্রিজের ওপর দিয়ে রাস্তা পার হতাম। পরে দেখলাম ওভারব্রিজের ওপর দিয়ে পারাপার নিরাপদ নয়। এখানে দিনের বেলায় বখাটে ও নেশাখোররা আড্ডা দেয়। আর রাতে তো কি হয় তা মুখে বলা যাবে না।
সূত্র জানায়, রাজধানীতে ৪৯টি ফুট ওভারব্রিজ রয়েছে।
দু’-একটি ওভারব্রিজ ছাড়া বাকিগুলো দিয়ে পথচারীরা রাস্তা পার হন না। এসব ওভারব্রিজ এখন বখাটে ও ভাসমান পতিতাদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। শেরাটন হোটেলের সামনের ওভারব্রিজটি সন্ধ্যার পর ভাসমান পতিতাদের দখলে চলে যায়। রাতভর অনৈতিক কার্যকলাপের নানা চিহ্ন লেগে থাকে সেখানে। ফলে দিনের বেলায় কোন পথচারী ওভারব্রিজটি পার হতে বিব্রতবোধ করেন।
এ ছাড়া পথচারী মহিলাদের ওভারব্র্র্র্র্র্র্র্র্রিজ পার হওয়ার সময় বখাটেরা ফেলে রাখা জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী দেখিয়ে নানা রসালো উক্তি করে।
মিরপুর ১ নম্বর ওভারব্রিজের ওপর যত্রতত্র মলমূত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়। রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝামাঝি ফুট ওভারব্রিজটি দিয়ে দিনের বেলায় লোকজন তেমন যাতায়াত করে না। এখানে রাতে চলে মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপ।
মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের ফুট ওভারব্রিজে হকার ও ভিক্ষুকদের উৎপাতে পথচারীরা অতিষ্ঠ।
ওভারব্রিজের মাঝখানে ২-৩ জন হকার নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে। এদের পাশ দিয়ে একজন করে পথচারীরাও হেঁটে যেতে কষ্ট হয়। ব্রিজের মাঝখানে বসে থাকে বিকলাঙ্গ ভিক্ষুক মিন্টু। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া লোকজনকে ধরে ভিক্ষা চায় সে। অনেকে বাধ্য হয়ে তাকে ২-৫ টাকা দিয়ে যাচ্ছে।
মিন্টু থাকে লালমাটি গুদারাঘাট এলাকায়। এখানে প্রতিদিন তার আয় হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এই ওভারব্রিজে বসে ভিক্ষা করে দুই বোন সাথি ও তানি। এরা পথচারীদের পা জড়িয়ে ধরে। টাকা না দিলে পা ছাড়ে না।
ওরা থাকে মিরপুর ১৩ নম্বর ঝুট পট্টিতে। এই ওভারব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুল মালিক। তিনি বলেন, এদের জ্বালায় ওভারব্রিজে উঠতে ইচ্ছা করে না। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েদের দিয়ে ভিক্ষা করানো এদের বাবা-মায়েদের পেশা। এদের বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা নেয় না।
রাজধানীর টিকাটুলিস্থ ফুট ওভারব্রিজটি বখাটে ও মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল। এ ওভারব্রিজ দিয়ে পথচারীরা চলাচলে নিরাপদ বোধ করেন না। এই এলাকায় বেশ কয়েকটি স্কুল রয়েছে। স্কুলের ছাত্রীরা ওভারব্রিজ দিয়ে পারাপারের সময় বখাটেরা প্রায়ই তাদের উত্ত্যক্ত করে। কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী তাবাসসুম মীম বলেন, এখানকার বখাটেদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোন অ্যাকশনে যায় না।
থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ বখাটেদের ধরে নিয়ে ছেড়ে দেয়। গত মাসে পুলিশ এক বখাটেকে গ্রেপ্তার করে একদিন পরই ছেড়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে সূত্রাপুর থানার ওসি নজরুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
রাজধানীর মগবাজার, মৌচাক, ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ, মিরপুর, নিউ মার্কেট, আসাদগেট, সায়েন্স ল্যাব, শ্যামলীসহ বিভিন্ন এলাকার ওভারব্রিজগুলো ব্যবহার না করে পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হন। ওভারব্রিজগুলোতে দিনের বেলায় ভিক্ষুকদের উপদ্রব ও রাতে অপরাধীদের ভয়ে এবং অপরিচ্ছন্ন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে পথচারীরা ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে চান না।
সূত্র মতে, মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর দ্বাদশ শিডিউলে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করলে ৫ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রতিদিন হাজার হাজার পথচারী ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তা পার হলেও কাউকে জরিমানা করার নজির নেই ডিএমপি ট্রাফিক পুলিশের।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, ওভারব্রিজগুলোতে মলমূত্র ও বিভিন্ন নোংরা জিনিসপত্র ছড়ানো ছিটানো থাকে। এ কারণে পথচারীরা পারাপারে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। বয়স্ক ও অসুস্থ লোকজনের এসব ওভারব্রিজে উঠতে অনেক সমস্যা হয়।
এ কারণে তারা ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করেন না। এসব দিক বিবেচনায় ফুট ওভারব্রিজের পরিবর্তে জেব্রাক্রসিং চালু করা যেতে পারে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেন, পুলিশ দিনের বেলায় পথচারীদের ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। এ কারণে অনেক জায়গায় পথচারীরা সেগুলো ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, ফুট ওভারব্রিজের নিচ দিয়ে পারাপার বন্ধ করে দিলে লোকজন ওগুলো ব্যবহারে বাধ্য হবে।
সূত্র
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।