আনন্দবতী মেয়ে আমি হাওয়ায় উড়াই চুল,চোখের ভেতর ছলাৎ ছলাৎ মনের ভেতর নীল ঘাসফুল
একটা কষ্ট কুঁড়ে কুঁড়ে খায় । কেন আমি এমন ? কেন অন্য বন্ধুদের মতো হলাম না ? আবার চিন্তা করি আমার এমন হবারই কথা ছিলো । একই নিয়মে সব কিছু চলছে ? তাইতো যখন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম , থার্টি ফার্ষ্টে কেন খোকন বন্ধুকে ফিরে পেলাম প্রায় পনেরো বৎসর পরে ? এরপর থেকেই তো শুরু হলো বন্ধুদের নিয়ে আমার জীবনীর একাংশ ।
আবার অনেক কাঠ - খড় পুড়িয়ে অবশেষে কমলগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয় । যেদিকে চোখ যায় সব মেয়ে ।
কোনো বন্ধু নেই । ইব্রাহীম স্যার স্কুলের হেডস্যার ছিলেন । তাঁর মেয়ে নামটা হয়তো মুন্নী , ভুলে গেছি । সে - ই আমার প্রথম বান্ধবী ওই স্কুলের । সে পরিচয় করিয়ে দেয় মাধবীর সাথে ।
দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে সবার নাম ভুলে গেছি । আসলে ক্লাশ ই তো করা হয়নি ওখানে । মাধবীকে মনে আছে তার বেশ কিছু ঘটনার সাক্ষী আমি । মাধবী ছিলো খুব ডেয়ারিং টাইপ । স্কুল পিকনিক - এ গেছি শমশেরনগর চা' বাগানের বড়ো বিল - এ ।
মাধবীর তথাকথিত প্রেমিক কে দেখি ওখানে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । আমরা বিশেষ করে আমি তো ভয়ে একেবারে কাঠ । আরেকদিন তো রাস্তায় আমাদের রিক্সা থামিয়ে দিলো । এসব দেখে আমার চক্ষু তো চড়ক গাছ । টেষ্ট পরীক্ষার শেষ দিন মাধবীর বাসায় নিমন্ত্রণ ছিলো ।
বাসায় বলেও গেলাম আঙ্কেল আমায় দিয়ে যাবেন । মাধবীর বাবা ছিলেন কমলগঞ্জ থানার দারোগা । খাওয়া শেষে সবাই মিলে গল্প । বিকেল শেষে গোধূলী বেলা --- আঙ্কেল আমায় দিয়ে আসবেন , এমন সময় থানা থেকে খবর এলো আঙ্কেলকে তখুনি যেতে হবে । অপেক্ষায় রইলাম কোনো খবর নেই ।
অবশেষে পরিচিত রিক্সায় করে রওয়না দিলাম কমলগঞ্জ থেকে শমশেরনগরের উদ্দেশ্যে । বাসার সামনে গিয়ে দেখি ৫/৭ টি মোটরসাইকেল দাঁড়ানো , কি ব্যাপার ? সিকদার আঙ্কেল চিৎকার করে বললেন : "নীলা এসেছে দাদা , নীলা এসেছে । " হায়রে ভালোবাসা , হায়রে আদর ।
শুনেছি মাধবী পালিয়ে বিয়ে করেছে অন্য আরেক ছেলের সাথে । যদিও তাকে আমি তেমন পছন্দ করতাম না ।
কিন্তু তার সাহস টা আমায় অনেক সাহসী হতে সাহায্য করেছিলো । জীবনের অনেক পথে একা চলেছি কোনো স্পর্শ ছাড়া ।
ওই সময় আরো কিছু বন্ধুর কথা না বললেই নয় । যদিও সমবয়সী নয় । কুমকুম আপার ভাইয়ের মেয়ে নিপু একেবারে ছোটো থেকে আমায় বান্ধবী বলে ডাকতো ।
স্কুল থেকে ফেরার সময় জানালায় মুখ বের করে বলতো :"ও বান্ধবী । " সবার কাছে বলতো তার বান্ধবী নাকি সবচেয়ে সুন্দর । সিকদার আঙ্কেলের ছোট মেয়ে রূপা'র ও বান্ধবী ছিলাম । কি সুন্দর করে ডাকতো : "দিদিভাই । " রূপা আমার ছেলের নাম দিয়েছিলো নিলয় ।
আলট্রাসনোর অনেক আগে বলেছিলো : "দিদিভাই আমার ভাগ্নে হবে আর নীলাঞ্জনার ছেলে তাই নাম কিন্তু নিলয় হবে । " বয়স কতো তখন রূপার আট / নয় । চা' বাগানের সব পিচ্চিরাই ছিলো আমার বন্ধু । গোল্লাছুট , দাঁড়িয়াবান্ধা কতো খেলেছি ওদের সাথে । বন্ধু বলেই তো ।
আমার খুব প্রিয় বন্ধু ভারতী । এক বৎসরের জুনিয়র । কতো সুখ - দুঃখের সঙ্গী । কোথাও যাবো ভারতী , মন খারাপ ভারতীর কাছে চলে যেতাম । আমাদের বাসাটা ছিলো পূর্ব - পশ্চিম ।
গরমের দিনে প্রচন্ড গরম । ভারতীদের মাটির ঘরে চলে যেতাম । চা' বাগানের কড়া নিয়ম ভেঙ্গেছিলো আমার মামনি - বাপি । কোনো ছোটো - বড়ো ভেদাভেদ - এ বড়ো হইনি । সেই ভারতী আর আমরা মাধবকুন্ড বেড়াতে গেলাম ।
তখন মাধবকুন্ড যাওয়া মানেই এক থেকে দুই কিলোমিটার হেঁটে ঝর্ণার কাছে পৌছাতে হতো । একবার তো ওখানে গিয়ে শ্যাম্পু করলাম । ভারতীর অনেক লম্বা চুল তাই শ্যাম্পু করলো না । বড়ো মাইক্রো ভাড়া করা হতো পুজার সময় । আমি আর ভারতী সামনের সিট সবসময় ।
ছোটো বোন মৌ খুব ক্ষেপতো । কলেজ যেতাম একসাথে । রাস্তা দিয়ে যাবার পথে কিছু ছেলে নীলাঞ্জনা গান গেয়ে ভীষন বিরক্ত করতো । একদিন তো মেজাজ গরম হয়ে গেলো । কলেজ থেকে ফেরার পথে ভারতী কে বললাম :"চলতো একটু টাইট দিয়ে আসি ।
" ও তো ভয়ে কাঠ । "নীলা থাক না কুকুরের কাজ কুকুরে করে । " আমার জেদ আবার একটু বেশী "তুই তবে থাক আমি যাবোই । " অবশ্য পিছু পিছু এলো ভারতী । ঢুকলাম ফার্মেসীতে , বললাম :"একটা প্যারাসিটামল দাও তো ।
" ঔষধ হাতে নিয়ে বললাম সেই ছেলেকে "এই যে প্রতিদিন আমায় দেখেই গান ছেড়ে গান গাও , কেন ?" জীবনে হয়তো ভাবেইনি এভাবে কোনো মেয়ে এসে প্রশ্ন করবে । ওদিকে ভারতী আমায় খামচে ধরে আছে । "শোনো আর কোনোদিন যদি কোনো মেয়েকে বিরক্ত করতে দেখেছি তোমার বোন আছে না তার সাথেও ঠিক অমন ব্যবহার করাবো । " শমশেরনগরের সবচেয়ে খারাপ ছেলেদের এভাবে থ্রেট দিয়েছি মাধবীর সাহস থেকে । মামনি শুনে ভয়ে অস্থির ।
আর বাপি পিঠ চাপড়ে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলো "ঠিক করেছিস নীলমনি । যে যেমন তার সাথে তা - ই করতে হয় । " তবে এরপর থেকে আর কোনোদিন কোনো মেয়েকে তারা বিরক্ত করেনি ।
এই ভারতীর ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার - এ বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেলো । কতো চেষ্টা বিয়ে ভাঙ্গানোর ।
ঠিকানা জোগাড় করে আমি , নিত্য সঙ্গী ভারতী এবং আমার চলমান ডায়েরী রানা সিলেট গেলাম ছেলে মানে হবু বরকে বোঝাতে একটি বৎসর পর বিয়েটা হোক । হায়রে ভুল ঠিকানা সব হিসেব উল্টে দিয়ে ভারতী আমার কষ্ট - আনন্দের সঙ্গী পরের বাড়ী চলে গেলো । আমি দুই দিন না খেয়ে ছিলাম সেই দুঃখে । যেদিন আবার এলো বুঝলাম ওর বর নিশেন্দুদা অনেক ভালো মানুষ । রানা আজোও তাই বলে :"তোদের কথায় নেচে গেলাম সিলেট ঠিকই , ভাগ্য ভালো যে বিয়েটা ভাঙ্গেনি নয়তো জীবনভর অপরাধী থাকতাম ।
" আর সত্যি ভারতী এখন অনেক সুখী । সিলেট শহরে হালদারপাড়ায় নিজেদের শান্তির নীড় । দুই মেয়ে । বড়ো মেয়ের হবার সময় সিলেট গেলাম রক্তের দরকার । রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না ।
কি যে ভাগ্য প্রার্থনায় রক্তের প্রয়োজন ও মিটে গেলো । আমি নাম দিয়েছিলাম ভাষা । যদিও সেই নাম এখন আমি ছাড়া আর কেউ ডাকেনা । মেয়েটা অনেক বড়ো হয়ে গেছে । দেশ থেকে আসার আগে ২০০৯ সালের আগষ্টে ভারতীর সুখের নীড়ে দুই দিন ছিলাম , অনেক বৎসর পর দুই বান্ধবী একসাথে ঘুমালাম , গল্প করে ।
যদিও গল্পগুলো তখন অন্য পথে পা রেখেছে ।
--------নীলাঞ্জনা নীলা
ক্রমশ------
ল্যুভেন - লা - ন্যুউভ , বেলজিয়াম
২১ - ০১ - ১০ ইং
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।