আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ও আমার বন্ধু , আমার নির্ভেজাল ভালোবাসারা (বি.টি.আর.আই.স্কুলের সহপাঠী , বন্ধু ! )

আনন্দবতী মেয়ে আমি হাওয়ায় উড়াই চুল,চোখের ভেতর ছলাৎ ছলাৎ মনের ভেতর নীল ঘাসফুল

দীপু নাম্বার টু সিনেমা সবাই দেখেছেন । ওই দীপুর মতোই স্কুল বদল আমারও । শমশেরনগর থেকে শ্রীমঙ্গল বি,টি,আর,আই উচ্চ বিদ্যালয় । নতুন স্থান , নতুন বন্ধু এবং নতুন জীবন । এক দাদুর বাসায় আমার থাকার ব্যবস্থা হলো ।

বীনা সম্পর্কে আমার পিসি , কিন্তু তুই - তুকারি করেই এখনো সেই বন্ধুত্ত্বই প্রাধান্য পাচ্ছে । প্রথম যেদিন ওখানে যাই রাতে ঘুরতে বের হই । সত্যি তখন অপূর্ব সুন্দর ছিলো বি,টি,আর,আই । সেদিন বেড়াতে গিয়ে দেখি পুরোটা রাস্তা জুড়ে ফুল আর ফুল । ইস্ দেখেই কান্না পেয়ে গেলো ।

এতো নিষ্ঠুর কিভাবে হয় মানুষ , এভাবে ফুল ছিঁড়ে ? আমি তুলতে গেলাম , বীনা চিৎকার করে উঠলো । কি ব্যাপার ! ওই ফুল ধরা মানেই ভালোবাসি স্বীকার করা । জীবনে কতো অদ্ভুত কথা শুনলাম , কতো কিছু যে জানলাম । হায় , শুধু নিখাঁদ ভালোবাসাই পাওয়া হলোনা । তবে নিখাঁদ ভালোবাসা পেতে হলে খাঁটি মানুষ হওয়াও চাই ।

এখন মনে হয় আমি অশুদ্ধ একজন মানুষ । আমার একজন প্রিয় মানুষ তার নাম বলা যাবে না কারণ কিছু কিছু একেবারে নিজস্ব রাখা চাই । সে বলেছিলো আমি নাকি প্রেমের অভিশাপ , বাসবদত্তা । মেনে নিয়েছি এ কারণে আমাকে ভালোবেসেছে যারা তারাই দূরে সরে গেছে । নীলা পাথরও বোধ হয় এতোটা ভয়ঙ্কর সুন্দর নয় ,আমি নিজেকে তাই মনে করি ।

যাই হোক । প্রথমদিন ক্লাশ শামসুল হক স্যারের অঙ্ক । খুব গরম স্যার । মজার ব্যাপার হচ্ছে সব রাগী স্যাররাই আমার খুব প্রিয় , আমায় খুব ভালোবাসতেন । হরিপদ স্যার কে দেখলে কেন যে খুব ভালো লাগতো জানিনা , অনেকের থেকেই আমার উনাকে অনেক ব্যক্তিত্ত্বসম্পন্ন মনে হতো ।

শুনেছি স্যার কিছুদিন আগে এই পৃথিবী থেকে চলে গেছেন । তবে আমি আমার জীবনে সবচেয়ে বাজে একজন শিক্ষিকা কে পেয়েছিলাম যিনি প্রেরণা তো দিতেই পারেন না , বরং খাটো করতেই পছন্দ করেন । তার নাম রীতা ম্যাডাম । আমার চতুর্থ বিষয় ছিলো ইলেকটিভ ম্যাথ , আমি তার বোঝানো কিছুই বুঝতাম না । তাই বারবার প্রশ্ন করেই যেতাম ।

একদিন আমাকে বললেন আমি যেনো এই বিষয়টা বদলে খাদ্য ও পরিপুষ্টি বিষয় নেই । বোকার মতো বদলে ফেললাম । তবে বদলে ভালোই করেছিলাম , এখন অনেক ধরণের রেসিপি নিজে নিজেই তৈরী করতে পারি । তবে খুব ভালো কিছু বন্ধু পেয়েছিলাম সেখানে । জয়শ্রী সানা মুক্তি , মুন্নী , দিলারা , পাঁপড়ী , সোমা , রানী , সালমা , জি.এম.ফারুক , উত্তম , কামরুল , খোকন , মিরাজ , মিজান , রিয়াজ , অঞ্জন, আব্দুল আওয়াল দুলাল , মহিউদ্দীন , সুজন , রঞ্জিত এবং আরো অনেক ।

বন্ধুরা স্মরণশক্তি আমার সাথে বিশ্বাসঘাত করছে । ক্ষমা করে দিস তোরা । আমি আর অঞ্জন ছিলাম নতুন ওখানে । প্রতিদিন দল বেঁধে যাওয়া , আবার বাসায় ফিরে আসা । সত্যি আমার জীবনের বন্ধুত্ত্বের শুরু ওখান থেকে ।

আবার কঠিন বাস্তবতাও ওখানেই । কিছু মানুষের ভুল চিন্তা-ধারণায় সম্মানটুকুও চলেই যাচ্ছিল । তবে মিথ্যে কি চাপা থাকে ? শামসুল হক স্যারের অঙ্ক ক্লাশ সেটা কি কেউ ভুলতে পারবে ? প্রতি রাতে সব ছাত্র - ছাত্রীদের বাসায় যেতেন স্যার , দেখতেন আমরা কি আদৌ পড়ালেখা করছি ? স্যারের বড়ো মেয়েটা রুমী বড়ো ভালোবাসতো আমায় । আন্টি বলে ডাকতো , সেই মেয়েটা ২০০৯ সালে ওপারের দেশে চলে গেলো । শীতের বিকেলে বাসার সামনে ব্যাডমিন্টন খেলা , কখনো মুক্তির বাসায় গিয়ে কাঁচা আমের চাটনী ।

সোমার মা ছিলোনা , খুব খারাপ লাগতো ওর জন্য । খুব হাসি - খুশী মেয়ে ছিলো । পাঁপড়ি প্রতিদিন গাড়ী থেকে নেমেই আমায় জড়িয়ে গাইতো : "নীলাঞ্জনা নামে ডেকোনা , নীল চোখ নোণা জলে ভরেছে । " কি লাজুক ছেলে অঞ্জন এখন পুলিশ অফিসার , যাকে নিয়ে সবাই মজা করতো । একমাত্র আমিই তাকে নিয়ে কৌতুক করিনি ।

অঞ্জন বলতো :"আচ্ছা নীলাঞ্জনা সবাই আমায় এমন করে ক্ষেপায় কেন ?" স্বান্তনা দেয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিলোনা । খোকন , মিজান ওরা কতো যে মার খেয়েছে শুধু আমার হাসির জন্য । আউয়ালের পবিত্র কোরান তেলওয়াৎ দিয়ে শুরু হতো স্কুল । চমৎকার সুরের ঝঙ্কার ছিলো মুক্তির গাওয়া :"আমার সোনার বাংলা "। সুজনের খাড়া খাড়া চুল , মহিউদ্দীনের লম্বা পা , রঞ্জিতের হাত শাহ্ - আলম স্যারের বেতের পিটুনীতে ঝুঁকে যাওয়া , কামরুল রাগলেই পুরো মুখ লাল হয়ে যেতো আর তোতলাতো , দুষ্টের শিরোমণি মেধাবী ফারুক , ছোট্ট - খাট্টো ছেলে মিরাজ হঠাৎ করে সবার চেয়ে লম্বা হয়ে যাওয়া , শান্ত , চুপচাপ রিয়াজ , পাজির পা ঝাড়া , কিন্তু বন্ধু অন্তপ্রাণ উত্তম -- কি মারটাই না মারতাম ।

আমিও যে খাইনি , তা নয় হাত ধরলে আর ছাড়ানো যেতো না । চোখের জল পড়লে তবেই ছাড়া পেতাম । মুন্নীর বাসায় প্রায়ই যেতাম । বীনা আর আমি যে কি আনন্দ করেছি , একাত্মা ছিলাম । কতো দুষ্টুমি , কে বলবে বীনা আমার পিসী ছিলো ? দিলারার হাসিমুখ কখনো ভার দেখিনি ।

সালমা -- ছোট্ট গড়ন , হাতের আঙুলগুলো ছিলো লম্বা , আমরা সবাই ওর হাত ধরতাম খুব নরম হাতের অধিকারী , হাসি-খুশী । গাম্ভীর্যে ভরা রানী , হাসিটুকুও মেপে মেপে দিতো । কিশোরী মূহুর্তে প্রেম শব্দটা হয়তো সবার মনেই আঁচড় দেয় । আমি হয়তো আসলেই অন্যরকম , প্রেমের সুযোগ পেয়েও করা হলো না তখন । অদ্ভুত এই চরি্ত্রের জন্য ।

নাহ্ সে নিয়ে কোনো আফসোস ও নেই । একদিন মুক্তি এসে বললো , আমায় নাকি একজন ভালোবাসে । আমি বললাম ভালোই তো বাসুক । ও কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো :"কে সেটা তো শোন। তোর ভাগ্য তো অনেক ভালো জীবনে কোনো মেয়ের দিকে চায়নি , ভালোবাসা তো দূরের ব্যাপার ।

বাবুদা তোকে প্রপোজ করেছে । নীলাঞ্জনা তোকে বাবুদা ভালোবাসেরে । " নিস্পৃহ কন্ঠে বললাম ভালোই তো । আমি কি করবো ? মুক্তি তো ক্ষেপে আগুন । বলেই ফেললাম পড়ালেখা করতে এসেছি , প্রেম করতে নয় ।

আর ওদিকে প্রতিদিন হাসুদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতো বাবুদা , বাবুল , বাবন । উফ্ কি যে যন্ত্রণা , রাগ এবং লজ্জ্বা । এখনো বুঝে পাইনা কেন যে মাথা হেট হয়ে যেতো । একদিন সন্ধ্যায় অফিসার্স ক্লাব - এর পার্টি থেকে আমার জন্য খাবার নিয়ে এলো বাবুদা -- পরের দিন সবাই মিলে কি ক্ষেপানো । এতো রাগ উঠলো যে মুক্তিকে বলেই ফেললাম : এমন যদি আর কখনো হয় , আমি কিন্তু সবাইকে বলে দেবো ।

তোর বাবুদাকে বলে দিস । বাবুদা এর জন্য এখনো আমার ওপর ক্ষেপে আছেন । একটা কথা জানতে ইচ্ছে করে , কেন আমার প্রতি তার রাগ এখনো ? আমি তো তার ভালোবাসা নিয়ে কখনো খেলা করিনি , তবে ? শুধু ভালোবাসিনি বলে এমন ব্যবহার , খেলা করলে কি করতেন ? এরই মাঝে অ্যাক্সিডেন্ট করলাম মোটরসাইকেল থেকে । সুভাস মামার সাথে শমশেরনগর যাচ্ছিলাম । জীবন বদলে গেলো , টেষ্ট পরীক্ষা দেয়া হলোনা ।

বি.টি.আর.আই স্কুল কতৃপক্ষ মাধ্যমিক পরীক্ষা আমায় দিতে দেবেনা কোনোভাবেই । আর আমি দিবোই । বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে শেষ পর্যন্ত অনেক ঝামেলা করে স্কুল বদল আবার । কমলগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয় - এ আগমন । খুব কষ্টে সব ছেড়ে , প্রিয় বন্ধু , প্রিয় স্যার , আনন্দ - কান্না আবার নতুন বন্ধু , নতুন পরিবেশ ।

আবার নিজেকে তৈরী করা অন্য রূপে , অন্য ভাবে । সেটা নয় পরেই বলবো , পরের ভাগে । --------নীলাঞ্জনা নীলা ক্রমশ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.