আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘মুক্তিকামী মানুষের বাতিঘর বেলাল মাহমুদ’

বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার প্রতি শ্রদ্ধা জানায় পুরো বাংলাদেশ।
এই কবির কফিনে ফুল দেয়ার পর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “বেলাল মোহাম্মদের মতো মানুষদের জন্মের সাথে সাথে একটি জাতির উদ্ভাস ঘটে। যখনই কোনো জাতির মুক্তির আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়,  বেলাল মোহাম্মদরা তখন বাতিঘর হিসাবে কাজ করেন। ”
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে জাতির জনকের স্বাধীনতা ঘোষণা ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসা বেলাল মোহাম্মদ মঙ্গলবার ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।


মঙ্গলবারই উত্তরার বাসায় তার প্রথম জানাজা হয়। রাতে মরদেহ রাখা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমঘরে।
বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে বেলাল মোহাম্মদের কফিন নেয়া হয় তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল বাংলাদেশ বেতারের শাহবাগ কার্যালয়ে। সেখানে এক সময়ের সহকর্মীরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পৌনে ১১টার দিকে সেখানে হয় তার দ্বিতীয় জানাজা।


এরপর বেলাল মোহাম্মদের কফিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হয় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।  
শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের শুরুতেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার জানানো হয়। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর।
রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বেলালের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এরপর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ ও সাংসদ এ এন মাহফুজা খাতুন বেবী মওদুদ, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।


শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ মিনারে জড়ো হন মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও।
এফডিসি মহাপরিচালক পীযূষ বন্দোপাধ্যায় বলেন, “উনি সাহসী এবং বিবেকবান মানুষ ছিলেন। সারাজীবন বাঙালি চেতনা ধারণ করে গেছেন। দেশ গঠনে তিনি যে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন জাতি তাকে সারাজীবন স্মরণ রাখবে। ”
সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, “তার অবদান ঐতিহাসিক।

স্বাধীন বাংলা গঠনে স্বাধীন বাংলা বেতারের ভূমিকা বলার অপেক্ষা রাখে না। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী প্রত্যেকটি মানুষ তাকে আজীবন স্মরণ রাখবে। ”
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, বেলাল মোহাম্মদ যা বিশ্বাস করেছেন, তা অর্জনের জন্যই সংগ্রাম করে গেছেন আজীবন।
“মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস তার সাথে কাজ করেছি। একই সাথে এতো সরল ও দৃঢ়চেতা মানুষ কম দেখেছি।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে কাউকে মাথা তুলতে দেব না- এই অঙ্গীকার করলেই তার আত্মা শান্তি পাবে। ”
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহ সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। আজ যখন এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তিনি চূড়ান্ত বিচার দেখে যেতে পারলেন না। ”
বেলাল মোহাম্মদের নিজের হাতে গড়া সন্দ্বীপ  হাই স্কুলের পক্ষ থেকেও শহীদ মিনারে তার কফিনে শ্রদ্ধা জানানো হয়। স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তির টাকা দিয়ে তিনি এই স্কুল গড়ে তোলেন।


পরিবেশ ও বন মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী কল্যাণী ঘোষ, রফিকুল আলম, রেজাউল করিম, ফকির আলমগীর, নমিতা ঘোষ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের পক্ষ থেকে মফিদুল হক, ইতহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষে শাহরিয়ার কবির, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, টেলিভিশন শিল্পী সংস্থা এবং বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বেলাল মোহাম্মদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
দীর্ঘ দিনের সহকর্মীকে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গান গেয়ে শ্রদ্ধা জানান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীরা। এরপর এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে এই যোদ্ধার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানায় উপস্থিত জনতা।
শহীদ মিনারের অনুষ্ঠান শেষে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বেলালের মরদেহ নেয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে। সেখানে আরেক দফা জানাজা শেষে শেষ ইচ্ছা অনুসারে তার মরদেহ দান করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে।


পরিবারের পক্ষ থেকে বেলাল মোহাম্মদের ভাতিজি জামাই ইঞ্জিনিয়ার কামাল আহমেদ এ মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন।
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১০ সালে তাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়। পরের বছর বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান কবি বেলাল।
তার জন্ম ১৯৩৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মুছাপুর গ্রামে। ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম কমিটির প্রথম সদস্য ছিলেন তিনি।
১৯৬৪ সালে দৈনিক আজাদীর উপসম্পাদক হিসেবে যোগ দেন বেলাল। ওই বছরই রেডিও পাকিস্তানের চট্টগ্রাম কেন্দ্রে স্ক্রিপ্টরাইটার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বেলাল মোহাম্মদ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রে কর্মরত ছিলেন। ২৬ মার্চ বেলাল মোহাম্মদ ও তার সঙ্গীরা মিলে কালুরঘাটের বেতার স্টেশনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন, যেখান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করা হয়।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.