ছোটবেলা থেকে পড়াশোনার কোনো লক্ষ্য ছিলনা। এস.এস.সি আর এইচ.এস.সি সায়েন্স হবার কারনে চরাচরিত বাংলা সমাজের আশাস্বরুপ হয় ডাক্তার না হয় ইন্জিনিয়ার হতে হবে। এইচ.এস.সি তে বায়োলজী ছিলো ফোর্থ সাবজেক্ট। মহা বিরক্তিকর ব্যাপার কারন এইটা ছাড়া মেডিকেলে পরীক্ষা দেয়া যাবেনা। আমি আবার কোনো কিছুর ছবি আকতে না পারলেও অ্যামিবার ছবিটা ভালো আকতাম কারন একমাত্র এই মালেরই নিজের কোনো আকার নেই, গোল করে যা আকা হবে তাই সঠিক
এইচ.এস.সির পর গেলাম ইনি্জনিয়ারিং কোচিং করতে।
মেডিকেলে পরীক্ষা দেবার ইচ্ছা ছিলোনা তাই কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই পরীক্ষা দেই এবং যথারীতি রোল খুজে পাওয়া যায়নি। কোচিং এ ক্লাস করতাম না মানে দুই একদিন ক্লাস করে বুঝতে পারলাম মহাকঠিন এক যুদ্ধ। বইয়ের সবচেয়ে কঠিন কঠিন অংক যেগুলো ইন্টারে স্কিপ করে এসেছি সেগুলো নিয়ে থিসিস করার মত ব্যাপার। যাক সে কথা, বুয়েটে ফর্ম জমা দিলাম। আসলো সেই ক্ষন।
ভর্তি পরীক্ষার দিন।
পনেরো বছর আগের কথা, স্মৃতি অস্পষ্ট। সম্ভবত বুয়েটের আর্কিটেকচার বিল্ডিং এ সিট পড়েছিলো পরীক্ষার। আধাঘন্টা আগে গেলাম। রুমের দরজা লাগানো তাই দরজার সামনে অপেক্ষা করছিলাম।
আমার পাশে সুন্দর একটা মেয়ে। মনটা আমার বেশ প্রফুল্ল, মাঝে মাঝে মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছি। মেয়েটা হঠাৎ বললো 'তোমার রোল কত?' আমি রোল বলার পর মেয়েটা বললো 'আরে আমিতো তোমার আগের রোল, ভালোই হলো'। মেয়েটা ছিলো অনেক স্মার্ট। আমার বেশভূষা ভালোনা, মানে ছোটকাল থেকেই আমার জামাকাপড় বা স্মার্ট গেটাপের উপর চরম উদাসীনতা।
এই প্রথম নিজেকে ব্লগের ভাষায় মনে মনে 'তেব্র দিক্কার' দিলাম নিজের ড্রেসাপের জন্য। মেয়েটা বিভিন্ন প্রশ্ন করছিলো আমার সাথে ফ্রি হবার জন্য, যেমন 'কোথায় বাসা, প্রিপারেশন কেমন' এগুলো। আমরা কথা বলছি আর আমার মনে কল্পনার ডানা মেলতে শুরু করেছে। মনে মনে ভাবছি দুইজন দুই ডিপার্টমেন্টে চান্স পেলে আমার সদ্যপ্রসূত প্রেমের কি হবে, বিকালে ঘুরতে যাবো কোথায়, আমাকে পছন্দ করবে কিনা, এইসব (তখন তো ডিজুস আমল শুরু হয়নি, তাই ভাবনাগুলো খুব সাধারন মানের ছিলো ) পরীক্ষা হলে ঢোকার আগে আমাদের খুব ভাব হয়ে গেলো। মেয়েটা একদম গদগদ ভাব, আমিও মনে মনে ভাবছি গুল্লি মারি পরীক্ষার, বিরোধী দলের দেশ বাচানোর মত আমার একতরফা প্রেম (আমি ১০০%, মেয়েটার আচরন ৩০%) বাচাতে হবে।
দুজন কথা বলছি আর আমি ফাকে ফাকে ঝকঝকে জ্যামিতি বক্সে নিজের চেহারা দেখছি।
স্হান পরীক্ষার হল। পাঠকদের বলে নেই, পরীক্ষার হলে আমার দেখাদেখি করার সাহস কখনই ছিলোনা। আড়চোখে পাশে বা সামনে তাকাতে গেলে মনে হত সবাই আমাকে দেখছে। যাক, পরীক্ষা দিচ্ছি।
মেয়েটা সমানে লিখে যাচ্ছে। আমি অনেক কিছু পারছিনা। কোনো সমস্যা নেই, মুগ্ধ হয়ে সামনের মেয়েটাকে দেখছি আর ভাবছি পরীক্ষা শেষে বের হয়ে কি বলব। ভাবছি পরীক্ষাটা যেনো অনন্তকাল হয়। শেষের দিকে অনেকে খাতা দিয়ে চলে যাচ্ছে, টিচাররা একটু বিজি, মেয়েটা ঘাড়ঘুরিয়ে জিগ্গাসা করম 'কেমন হচ্ছে, পারছ সব?' আমি লাজুক হাসি দিলাম।
মেয়েটা বলল 'আমি এই এই কোস্চেন পারছিনা, একটু হেল্প করো' সৌভাগ্যবশত (!) আমি অ্যান্সারগুলো পেরেছিলাম, তাকে বলে দিলাম (পারলেতো পুরা খাতাটাই দিয়ে দেই )। সম্ভবত ১২ নম্বরের ৩/৪টা উত্তর ছিলো। একেবারে শেষে ৫ মিনিট বাকি। সব সাহস এক করে বললাম 'আমাকে একটা অ্যান্সার বলতে। মেয়েটা বলল আমিও পারিনি।
তার মুখ দেখে মনে হলো না জানার আর আমাকে না বলতে পারার দুঃক্ষে সে মারা যাবে। তখন মনে হলো যাক, প্রেমটা মনে হয় আর ঠেকানো গেলোনা।
পরীক্ষা শেষ। দুজন একসাথে বেরিয়ে আসছি। হেটে যাবার সময় মেয়েটা বললো 'তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো?' আমি বললাম কেনো রাগ করব।
মেয়েটা বলল 'তুমি আমাকে যেটার অ্যান্সার বলতে বলেছিলে আমি অ্যান্সারটা পেরেছি, কিন্তু কম্পিটিশনের এক্সাম, তাই তোমাকে বলিনি' আমি ঠায় দাড়িয়ে থাকলাম। মেয়েটা দেখাহবে ,আসি বলে চলে গেলো।
আমার প্রেম হাওয়াই মিঠাই হয়ে গেলো। দুই মিনিটে হাওয়া
পরিশিষ্ট: রেজাল্ট বের হলো। মেয়েটার রোল মাঝামাঝি পজিশনে ছিলো আর আমার রোল নিচের দিকে।
অবশ্য বুয়েটে পড়াও হয়নি, জানিনা মেয়েটা পড়েছিলো কিনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।