আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ও আমার বন্ধু , আমার নির্ভেজাল ভালোবাসারা(মাধ্যমিক স্কুলের সহপাঠী , বন্ধু !)

আনন্দবতী মেয়ে আমি হাওয়ায় উড়াই চুল,চোখের ভেতর ছলাৎ ছলাৎ মনের ভেতর নীল ঘাসফুল

শমশেরনগর এ.এ.টি.এম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় - এ শুরু হলো শিক্ষাজীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় । প্রথম ক্লাশ মওলানা স্যার নিতে এলেন । যাঁকে আমি কোনোদিনও সম্মান করতে পারবো না । পরে আসছি সে প্রসঙ্গে । ওখানে আমার একমাত্র বন্ধু শান্ত শ্যামলী ।

মেয়েটাকে নিয়ে সবাই এতো হাসাহাসি করতো , খুব খারাপ লাগতো আমার । এই স্কুলে বেশীদিন থাকা হয়নি আমার । কারণ মওলানা স্যার প্রতিদিন আমার ভাষা নিয়ে বিদ্রুপ করতেন । আমার বড়ো মামা বৃত্তি পাবার পর একটা ডিজিটাল ঘড়ি প্রেজেন্ট করে ,যার ডায়ালে একটা কার্টুন আঁকা ছিলো । সেই ঘড়ি নিয়ে যতোটা কৌতুকের শিকার হয়েছি , ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি ঝরে পড়তো বইয়ের পৃষ্ঠায় ।

আর একবার আমার মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়েছিলো । আমার এক মাসীর বিয়েতে গিয়েছিলাম ,সেখানে কারা জানি আমার মাথায় কি রঙ ঢেলে দেয় । এরপরে মাথার সব চুল পড়া শুরু হলো আর মাথার চামড়া ফেঁটে ফেঁটে রক্ত । কোনোভাবে চুল ফেলে দেয়া হয় । তো স্কুলে স্কার্ফ পড়ে গিয়েছি স্যার সবার সামনে খুলে দিলেন ।

লজ্জ্বায় বসে পড়লাম মাটিতে । এখনো ভেবে পাইনা কেন এমন করেছিলেন উনি । তবে প্রেম শব্দটা শুনলাম ক্লাশ সিক্সে । আমার বাপির বন্ধুর ছেলে দিলুদাকে নিয়ে গীতা , শ্যামলী , বিথী আমায় এসে বললো দিলুদা নাকি আমায় ভালোবাসে । আমিও সহজভাবেই বললাম , আমিও তো দাদাকে ভালোবাসি ।

তারা বললো : "নীলা তুই তবে চিঠি লিখ । " কিন্তু ভেবে পেলাম না ভালোবাসলে চিঠি লিখতে হবে কেন ? বলেই ফেললাম এ কথা তো সামনেই বলা যায় , লিখতে হবে কেন ? এতোটাই বোকা যে তাদের বুদ্ধির কাছে মাথা নামিয়ে তাদের ভাষাতেই প্রথম প্রেমপত্র । স্কুল শেষ হবার পর বেড়িয়ে পোষ্টাফিসের রাস্তায় চিঠি ছুঁড়ে দিতো গীতা । ভাগ্য ভালো যে কোনোদিন দাদার হাতে পৌঁছায়নি তার বোকা বোনটির এসব লিখিত পত্র । তবে পড়েছিলো ছোট মামার হাতে ।

তারপর বাপির হাতে । না বাপি বুঝেছিলো তার নীলমনকে ফাঁসানো হয়েছে । আর ওটাই সত্যি । তাই ভুল করেও বা কারুর যুক্তিতে কখনো প্রেম করিনি । অতো স্বাধীন জীবনকে বেড়ি পড়ানোর ইচ্ছে জেগেছিলো একবার , সেটা অন্য ঘটনা ।

ক্লাশ সেভেন-এ চলে এলাম মামনির স্কুল শমশেরনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে । প্রথম ক্লাশ মামনির । রোল কল হচ্ছে , বলে ফেললাম - ইয়েস মামনি । ভ্রূ কুচকে মামনি জিজ্ঞাসা করলো : "মামনি কে ?" থমকে গেলাম , বললাম ভুল হয়ে গেছে । সবাই মুখ চেপে হাসলো ।

মনোয়ারা মনি , ঊষা , তারাবতী , শেফালী , সবচেয়ে দুষ্টু এবং মজার মেয়ে নামটা রেহানা । আহ্ , সময়ের রেলগাড়ী কোথায় নিয়ে গেলো সবাইকে । তবে সেখানে সবচেয়ে ভালো বন্ধুত্ত্ব হয়েছিলো কুমকুম আপার সাথে । আমার সিনিয়র , তবুও আমায় খুব বুঝেছিলো কখনো বন্ধু , কখনো বড়ো বোন হয়ে । এতো ভালোবাসা ছিলো বলেই মধ্যে একবার বিশাল ঘটনা ঘটে গেলো ।

আবার মিথ্যে প্রেম ঘটিত । কুমকুম আপার চাচাতো ভাইয়ের কাছেই ভালো করে ব্যাডমিন্টন খেলা শিখি । প্রতিদিন রুহুল ভাই , আমি , কুমু আপু খেলা করতাম । একবার কুমু আপুর ফুফাতো ভাই বাবলু ভাই বেড়াতে এলেন । আমি কবিতা লিখি সেই ক্লাশ টু থেকে ।

তাই সাদা কাগজ পেলেই লিখে ফেলতাম কবিতা । তো এমনি এক কবিতা পড়লো বাবলু ভাইয়ের হাতে । সেই কবিতা হাত বদল হয়ে গেলো বাবলু ভাইয়ের মায়ের হাতে । তারপর সোজা আমার বাপির কাছে । সেইবার বাপি এতোটাই রেগে গেলেন , অথচ তখনো প্রেম কি সেটাই বুঝিনি ।

শুধু একটাই প্রশ্ন করেছিলাম : চিঠি লিখলে নাম থাকে , এখানে বাবলু ভাইয়ের নাম কোথায় ? দীর্ঘ অনেক বৎসর প্রিয় কুমু আপুর সাথে কথা বলিনি । অনেকটাই নিঃসঙ্গতা এবং কষ্ট নিয়ে দিনগুলো কেটে যাচ্ছিলো । আহ্ প্রিয় বন্ধু ছাড়া জীবনযাপন সত্যিই বড়ো যন্ত্রণাদায়ক । আর আমি এমনই ছিলাম যে মিথ্যের সাথে বসবাস আমার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা । একবার সরে গেলে নিজেকে আর হাজার কষ্ট হলেও সেখানে নিয়ে যেতে পারতাম না ।

সেই আমি এখন আর নেই , তাই হয়তো আমাকেই হারাতে হয় , ভুল না করেও শাস্তি পেতে হয় । আবার ভালোবেসে কাছে টানলেও সেই ভালোবাসা কে খেলা বলে সরিয়ে দেয়া হয় । তবে স্কুলে জাতীয় সঙ্গীতের সময়টা সত্যিই আনন্দায়ক । নাম মনে করতে পারছিনা আমাদের ক্লাশেরই একটা মেয়ে যার কন্ঠে ছিলো না সুর , প্রায় প্রতিদিনই তাকে ডায়াসে ডাকা হতো । আমি তো প্রতিদিন থাকতামই , ওর জন্য্ খারাপ লাগতো , বেচারী ওই কন্ঠে গান গাইতো -- প্রতিদিন নীরব হাসির স্ট্যাচু বান্ধবীটি ।

আর আমাদের হেড স্যারের পিরিয়ডে এমন কেউ নেই যে কাঁপেনি । ঈশ্বর কৃপায় বেতের পিটুনী একদিনই খেয়েছিলাম । স্যারের মতে : "হিদল - হুকুইন(সিদল - শুটকি)জিগুইনতে খায় , হিগুইনতের মাথাত কুন্তা থাকেনা "। দুষ্টু বান্ধবী রেহানা বলেই ফেললো :"ও স্যার আফনের বাসাতই তো বেশী বেশী হিদল - হুকুইন রান্ধা হয় , মন্নাফ (পিয়ন) তো হক্কল দিনই বাজারো যায় । " আর কোথায় যায় ! পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে ।

একচোট হবার পর খুব বড়ো মুখ করে স্যার বললেন আমার দিকে চেয়ে :"এইটার মাথা অখনো ঠিক আসে । ইগুর মা - বাপ শিক্ষিত্ , ইগুর বাড়ীত হিদল - হুকুইন রান্ধা হয়না । এই ক সাইন তুই "? কাঁপতে কাঁপতে উত্তর উল্টাপাল্টা । জীবনের দ্বিতীয় এবং শেষ বেত -- আবার হাত ফুলে ঢোল । কুমু আপার বান্ধবী বহ্নি এবং শিখা আপু খুব ভালো বন্ধু ছিলো আমার ।

জীবনের প্রথম কেক বানিয়ে খাইয়েছি , যদিও সেই ঘটনা আরেক প্রান্তের । ময়মনসিংহ ভারতেশ্বরী হোমসে সুযোগ পেয়েও ভর্তি না হয়ে জীবনকে সাজিয়েছিলাম শ্রীমঙ্গলের বি.টি.আর.আই স্কুলে । কারণ মামনির স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ ছিলোনা । বাপির আর আমার স্বপ্ন ডাক্তার হবো । আহ্ , এই ডাক্তারি আমার জীবনে বড়ো দাগ , অনেক কষ্টের দাগ ।

নাহ্ , এখন আর কোনো স্বপ্ন দেখিনা আমার কোনো প্রিয়জন ডাক্তার হোক কখনো । নীলাঞ্জনা নীলা ক্রমশ---------------

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.