আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের জয়, রশীদ হলের টিভিরুম এবং আমরা



তারিখঃ ১১-০৩-১১ সময়ঃ ১২.৩০ স্থানঃ ২০৪ নং রুমের সামনের বারান্দা নাইম ভাইঃ নামাজে যাবা? আমি সাপ্তাহিক নামাজী। আজ শুক্রবার। চিন্তা করছি থাক না যাই। তিন সপ্তাহে একবার গেলেই ত অন্তরে মোহর মারা থেকে বেঁচে গেলাম। মনে পড়ল গত সপ্তাহে যাওয়া হয়নাই (এবং ৫৮ এর কথা)।

নামাজ না পরার কারনেই কি? রিস্ক নিলাম না। নামাজ শেষে খেলা দেখতে কমন রুমে। কেবল দর্শক আসছে। প্রথমেই বিপত্তি LCD টা নষ্ট, খেলা দেখতে হবে আগের বস্তাপচা টিভিটাতে। কি আর করা? চেয়ারে না বসে বসলাম সামনের ম্যাটে।

যথারীতি টিভিরুমে ০৭ ব্যাচের উপস্থিতিই বেশি। প্রতিদিনের দর্শক বুলবুল নাই। শুরু হলো কথা। টম বলল বুলবুল নাকি ফ্লাডলাইট দেখতে চট্টগ্রাম গেছে। ৮ম ওভার, রাজ্জাক বোলিংএ।

উইকেট পড়ার সাথে সাথে কান ফাটানো চিৎকার। ২ উইকেট পরার পর ৩ নাম্বারটা পরতে একটু দেরি হচ্ছে। সাজু আগে থেকেই বলছিল সে হিসু করলেই নাকি উইকেট পরবে। পাঠালাম শালারে হিসু করতে। ততক্ষণে বাবু, জিয়া, মাসুম আর সামি ও চলে এসেছে।

কিন্তু তাদের সামনে বিরাট পরীক্ষা। এতক্ষণ ভাল বোলিং করেছে বাংলাদেশ। এখন যদি খারাপ বোলিং করা শুরু করে তাহলে ওদের খেলা দেখা হবেনা। জনমত গঠন হয়ে গেল এই থিওরির পেছনে। সবাই রাজি।

সাজু হিসু করে ফিরে আসলো আর কি আজব সাথে সাথে ইংল্যান্ড এর ৩ নাম্বারটা গেলো। সাজুতো পুরা হিট। ইতকান ওরে কোলে নিয়েই নাচল। বাবুরাও qualified। কিন্তু আরতো আউট হয়না।

বিকেলের নাস্তা করে আসলাম ক্যান্টিন থেকে। সাজু বেশি করে পানি খাইল। ভালো একটা জুটি হচ্ছে। আমাদের নাইম ভাই বলল এই ওভারে ৬ হবে নাইলে আউট। বাবু কইলো সুইপ করতে গিয়া ক্যাচ দিবো মরগান।

হইলও তাই। এইবার আমার পালা। ইতকানের ওজন ৭৫ হইব। আমার টেনে টুনে ৫০। কিন্তু ঐযে আছেনা একটা বস্তু adrenalin, ক্যামনে জানি ইতকানরে কোলে কইরা ফেললাম।

আমি কইছিলাম এই ওভার এ আউট হবে না, কিন্তু আল্লার কসম নিজের ভবিষ্যৎ ভুলবানী ভুল হবার পর এত খুশি কেউ কোনদিন হয়নাই। এরপর আর কি, বাকি সবাই আসে আর যায়। ছোটভাই অমি কইল বোল্ড না হইলে নাকি ওর ভালো লাগেনা। তার ইচ্ছাও পূরণ হইল। বাকি আছে খালি রানআউটটাই।

শেষে তাও হইলো। হাফটাইমের পর আবার যাইতাছি। আজম ভাই কইল জিতব নাX। ( আমি কইলাম তামিম ৫ ওভার টিকে গেলে আমারাই জিতুম। শুরু হইলো তামিম এর মাইর।

দেখতে দেখতে ৫০। জিতুম আমরাই। তামিম আউট হয়ে গেল। জুনায়েদ নেমে একটা ৪ মারলো। সবাই সিদ্দিক সিদ্দিক বলে চিৎকার।

ইঙ্গিত রাশেদের দিকে। ওর একটা ডাকনাম সিদ্দিক(সবসময় হাউসফুলের সিদ্দিকের মত ওর দাঁত বের হয়ে থাকেতো তাই)। কিন্তু ঝাক কইরা ৩ উইকেট গেলগা। একটু ভয় পাইল সবাই। রাকিবুলরে গালাগালি হইতাছে সমানে।

আমি মিস করতাছি সৌরভ, রাশু আর সাইরাজরে। একটু পর সাইরাজ আইল। একটা জুটি হচ্ছে সাকিব আর কায়েসের। আবার থেওরি। এইবারের থেওরির নাম Fixed Position Theorem. যে যার জায়গায় আছো সেখানে থাকো।

এদিকে কমেন্ট্রি চলছে। ....কিছুটা ঠুকে দিয়েছিলেন..... মাপা লেন্থের বল... গুটি গুটি পায়ে আরও একটি রান...। খবরের সময় বিটিভি চেঞ্জ করে স্টার স্পোর্টস এ দেয়া হইছে। তারপর থেকে আর উইকেট যায়নাই। তাই স্টার স্পোর্টস চেঞ্জ করা যাবেনা।

পেটে ছুচা ডন মারতাছে কিন্তু fixed position theorem এর আওতায় পরে খাইতে পারতাছিনা। ড্রিঙ্কস ব্রেকের সময় রিস্ক নিয়ে গেলাম খাইতে। যা সন্দেহ করছিলাম তাই, ঝাক কইরা ইমরুল আউট । টেনশনে গোল্ডলিফ আর বেনসন টানার হার বেড়ে গেল। গুটিকয়েক অধূমপায়ীর মধ্যে পল্লবের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।

চোখের পলকে ৮ উইকেট নাই। সিজনাল সাপোর্টাররা চলে গেল, আমরা পরে রইলাম কিসের আশায় কে জানে। চিল্লায়ে ক্লান্ত, ম্যাট একটু ফাঁকা বলে শুয়ে পরলাম, সাথে সাথে মাহমুদুল্লাহ রিভার্স সুইপ করে চার মারল। একটু পরে শফিউলের চার আর ছয়। বুঝে গেলাম আর উঠা যাবেনা।

কথা বন্ধ রাখছি ৭টা পরার পর থেকেই। একটা একটা রান হয় আর একজন একজন দর্শক বাড়ে। আস্তে আস্তে জয় এগিয়ে আসে। শফিউল চার মারে, সবাই লাফায়, আমি শুয়ে শুয়ে মানুষের পারা খাই। মনে মনে প্রার্থনা করছি আল্লাহ তুমি সব পারো।

পেছন থেকে একজন রেডিও থেকে শুনে আগেই বল করার আগেই বলে দিচ্ছে এই বলে কি হবে। বড় ভাই একজন দিল তারে রাম ধাওয়া। জুনিয়রটা চুপ। কিন্তু মাহমুদুল্লাহর winning চার মারার খবরটা আর চেপে রাখতে পারল না। এইবার আর ধাওয়া না, সেই বড়ভাইই পারলে তারে চুমা দেয়।

এইবার আমি ৬০ বলের নিরবতা ভেঙ্গে দিলাম চিৎকার, ভোকাল কর্ড মনে হয় দুই-একটা ছিঁড়ল। টিভিরুমে তখন ঈদের কোলাকুলি। সবাই চিল্লাচ্ছে। নাঈম ভাইয়ের চোখে পানি। গেলাম T.S.C . মিছিল করে হলে ফেরার পর বইসা আছি।

পল সুজন (এ আবার cricpaul freak) আইসা কইলো "ভাইয়া ১১ জন এতজন মানুষকে এত আনন্দ দিতে পারে! এদের তো মাঠে জান দিয়ে দেয়া উচিত। " আমি আর কি বলব। Quarter final এর সুখস্বপ্ন নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.