আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাচন কমিশনের ভ্রান্তি

সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিলে নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা ছিল, তা পরিত্যাগ করার ঘোষণা যেমন আকস্মিক তেমনি অভাবনীয়ও বটে। বাংলাদেশ এমন এক রাষ্ট্র, যেখানে সব ক্ষমতা একটি কেন্দ্রস্থলে কুক্ষিগত। দেশের একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকেও আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী হিসেবে গণ্য করতে পারি না। মূলত সে কারণেই এখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতির পুনঃপ্রবর্তনের আন্দোলন জনপ্রিয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
আমরা মনে করি, এ দেশে আরও কিছুকাল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা অধিকতর উত্তম বলে বিবেচিত হতে পারে।

কিন্তু এটাও বড় সত্য যে নির্বাচনকালীন সরকারের ধরন নিয়ে বিতর্ক যা-ই থাকুক, নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রস্তুত করার বিকল্প নেই।
বাস্তবে আমরা বহু ক্ষেত্রে দেখি যে আইনে যথেষ্ট এখতিয়ার প্রদান করা সত্ত্বেও ইসি পারতপক্ষে তা অনুশীলন করে না। যেমন দুই প্রধান দলের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিবিরুদ্ধ একটা অশুভ আঁতাত আছে এবং ইসি তাদের তাঁবেদার হয়ে থাকতেই আপাতত অভ্যস্ত বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। প্রতিবছর দলগুলোর নিরীক্ষিত আয়-ব্যয় ইসির কাছে জমা পড়ার কথা। দুই বড় দল তা দিয়েও থাকে।

কিন্তু ইসি তা গোপন করে রাখে। মিডিয়ার কাছে প্রকাশে তারা কুণ্ঠিত। আইনে আছে, নির্বাচনের পরও প্রার্থীদের দেওয়া আয়-ব্যয় ও হিসাবপত্রে গরমিল হলে ইসিকে তার তদন্ত করতে হবে, মামলা করতে হবে। কিন্তু নির্বাচিত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কমিশন পারতপক্ষে ঘাঁটাতে চায় না।
এবার ইসি নিজের ক্ষমতা খর্ব করার প্রস্তাব দিয়ে প্রমাণ করল যে তারা এখতিয়ারের প্রয়োগে ভীত।

প্রার্থিতা বাতিলের বিধান তুলে দেওয়ার পক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ যে যুক্তি দিয়েছেন তা অত্যন্ত দুর্বল। তিনি বলেছেন, যে বিধান প্রয়োগ করা যাবে না, তা রেখে লাভ কী? বিধান প্রয়োগের প্রশ্ন তখনই আসে যখন সেটি লঙ্ঘিত হয়। এত দিন বিধান লঙ্ঘিত হয়নি বলেই হয়তো প্রয়োগের প্রশ্ন আসেনি। কিন্তু বিধানটি একবার তুলে দেওয়ার পর ইসি শত চেষ্টা করেও তা পুনঃস্থাপন করতে পারবে না। মাত্র পাঁচ মাস আগে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা চেয়েছে কমিশন।

এটি কি স্ববিরোধী নয়?
সরকারি দল যেখানে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা দিতে সংকল্পবদ্ধ, যেখানে তারা কমিশনকে আরও ক্ষমতাবান করতে প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে সেখানে কোনো পক্ষের দাবি ছাড়াই ইসির এই প্রস্তাব বিনা মেঘে বজ্রপাতের শামিল। এই উদ্যোগ নির্বাচন কমিশনকেই বিতর্কিত করবে না, সরকারকেও বেকায়দায় ফেলবে। প্রতিপক্ষ ভাববে, সরকারের নির্দেশেই ইসি এই পদক্ষেপ নিয়েছে। খেলার মাঠের শৃঙ্খলা রক্ষায় রেফারির হাতে লাল কার্ড থাকতেই হবে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.