আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাচন : ২০০১ , ২০০৮ , যুদ্ধাপরাধের বিচার , নির্বাচন : ২০১৪

একটা গাড়ী খুজছি , ব্যাক টু দ্য ফিউচারে যাওয়ার গাড়ীটা খুজছি / তথ্যের অংক , যুক্তির জ্যামিতি

সম্প্রতি নিজামী মুজাহিদ এবং সাঈদীর আটকের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এ বিষয় টিকে ডিনাউন্স করেছেন এবং এগুলোকে রাজনৈতিক খেলা বলেছেন। এই বিষয় নিয়ে আওয়ামী পন্থী মানুষ বেশ ক্ষিপ্ত , দল নিরপেক্ষরাও কিছুটা অস্বস্তিতে আছেন। তবে কেন বেগম খালেদা জিয়া হঠাৎ এটা বললেন ? সেজন্যেই একটু পেছনে তাকানো যাক। জামাতের সাথে এক টেবিলে বসা এবং জামাতের আইডিয়া (কেয়ারটেকার সরকার) অ্যাডপ্ট করে রাজনীতির মাঠ গরম করার প্রথম উদাহরন টা দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেটা ৯৬ তে।

মাত্রই ৯৪ এর জাহানারা ইমামের সাড়া জাগানো গণ আদালতের স্মৃতি তখনো তাজা। প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান শেলী দায়িত্বে থাকা কালেই গোলাম আযম তার নাগরিকত্ব ফিরে পায়। যাইহোক এরপর ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ছিলো ক্ষমতায়। এই সময়টায় দেশ চালাতে গেলে কিছুটা ভুলভ্রান্তি হবেই , তবে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বাজে পারফর্ম করে আইন শৃংখলা এবং ধর্মানুভূতির ইন্ডিকেটরে। বায়তুল মোকাররম মসজিদে পুলিশ ঢুকিয়ে দেয়া , টুপি দাড়ি মানেই রাজাকার আখ্যায়িত করা , হাসিনার সেই সময়কার এপিএস "ন" আদ্যক্ষরের ডাক্তার , নামটা মনে নেই , পেপারে এসেছিলো - তার হুজুরদের রক্ত বইয়ে দেয়ার হুমকী , মোফাজ্জল মায়ার ছেলে দিপু , আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছেলে , প্রতিদিন লাশ ,প্রতিদিন ডাকাতি , গেন্ডারিয়ার আওয়ামী নেত্রীর ছেলের লাশ ১০ টুকরো করা এগুলো পেপারে ডেইলী হেড লাইন হয়ে উঠতে থাকে।

সেই সময় থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন টপিক ঢুকে পড়ে : "ইসলামী মূল্যবোধ "। খুবই সেনসিটিভ। এতটাই সেনসিটিভ যে ২০০১ অক্টোবর ইলেকশনে হারার পর এখনকার অর্থমন্ত্রী মুহিত ইন্জ্ঞিনিয়ার্স ইন্সটিউটে " ইলেকশন রেসাল্ট রিভিউ " তে সরাসরি হাসিনা কে বলেছিলেন টুপি দাড়ি নিয়ে ব্যংগ করার বিষয়টা মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। আওয়ামী লীগের অনেকেই মুখ লুকিয়ে বিষয়টা মিডিয়ার কাছে স্বীকার করেছিলেন। বিষয়টা এতটাই হ্যামার করে আওয়ামী লীগকে যে সাবেক ঢাকার মেয়র হানিফ যিনি ৯৬ এর আগে পল্টনে ক্ষমা চাওয়ার মত করে বলেছিলেন সাধারন মানুষের উদ্দেশ্যে :"আমাদেরকে (আওয়ামী লীগ) আরেক বার সুযোগ দিন "।

সেই হানিফ ২০০১- ২০০৬ এর বিএনপির শাসনামলে চ্যানেল আইর ৩য় মাত্রার কোন এক পর্বে বলেছিলেন (আমার নিজের দেখা সেই অনুষ্ঠান) আওয়ামী লীগের নীতিমালা থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতা শব্দটা বাদ দিতে। এমনকি এই ২০০৮ নির্বাচনের আগেও আওয়ামী লীগ খুব সতর্ক ভাবে অসাম্প্রদায়িকতা শব্দটা ব্যবহার করেছে , ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি নয়। আর ৯৬ এর আগে হাসিনার তসবি , হিজাব এগুলো সিম্পলী লাফিং স্টক। মূলত টুপি দাড়ির প্রতি আওয়ামী বিদ্বেষ ইসলামীক গ্রাউন্ডের দলগুলোকে এক করে ফেলে , সবাই পলিটিকাল পোল হিসেবে বিএনপিকে সাপোর্ট জানায়। যাইহোক দিন পেরুতে পেরুতে এখন ২০১০।

যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়েছে বলেই আমি বিশ্বাস করি। তবে ঠিক যেভাবে বলা হয় যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আমার সেটা মনে হয়না। কারন ২০০৮ ভোটের ক্যাম্পিং এ গ্রামান্চ্ঞলে আওয়ামী লীগের মূল ইস্যু ছিলো চালের দাম , তাদের সময় চালের দাম ছিলো ১০ টাকা - এটা মানুষকে মনে করিয়ে দেয়া। (যদিও শাহ এ এম এস কিবরিয়া রিসার্ভ রেখে গিয়েছিলেন মাত্র ১৭২ কোটি ডলার যেটা সাইফুর রহমান রেখে গিয়েছিলেন ৪০০+ কোটি ডলার - এগুলো গ্রামের মানুষ বোঝেনা)। সেখানে তারা ওয়ার ক্রাইম ইস্যু তোলেন নি।

কারন গ্রামের সাধারন মানুষ এগুলো নিয়ে বোদারড নয়। তাহলে কাদের জন্য এই ইস্যু। শহরান্চ্ঞলের ইয়াং জেনারেশন , যাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ প্যাশন , ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলেও জামাতকে বিশ্বাস করেনা এমন শ্রেনী। ঠিক এদের জন্যই ইন্টারনেট বেস ডিজিটাল বাংলাদেশের ঢোল পেটানো হয়েছে ইলেকশনের আগে। গ্রামের মানুষ এসব বোঝেনা , আসল কথা সব গ্রামেতো এখনো ইলেক্ট্রিসিটিই পৌছে নি।

কারন এদের সংখ্যা ছিলো প্রায় ১.৫ কোটি! বিশাল ভোট ব্যাংক। মূলত এরাই যুদ্ধাপরাধের বিচার চায় , আওয়ামী লীগ চায় ২০০১ এর ৬৭ সিটের তিক্ত অতীতের সম্ভবনাকে মাটি চাপা দিতে। জামাতকে শায়েস্তা করতে। ঠিক এখানেই জামাত-শিবিরের পক্ষ থেকে নুলা মুসা , নুরা মিয়ার মত রাজাকার ইস্যু তুলে আনা হয়। খোদ হাসিনা , সাজেদা এটা স্বীকার করে ফেলেছেন মিডিয়ার সামনে।

নুলা মুসার জন্য বা নুরা মিয়ার মত ২/১ জনের জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচার আটকে থাকতে পারেনা। বিচার শুরু হয়েছে , শেষও হবে। তবে সমস্যা হচ্ছে দুটো - রোগী যদি খারাপ ডাক্তারের কাছে যায় ঐ ডাক্তার ২ টা কাজ করবে- ১. পুরোপুরি সুস্থ্য করবেনা যাতে আবার রোগীকে আসতে হয় । ২.নিজের কোন অযোগ্যতা বা রোগ থাকলে সেটা ধামাচাপা দেবে। ঠিক সেটাই আশংকা - আওয়ামী লীগ এখন যুঅবি করবে জামাত এবং বিএনপির গুটিকয়েককে টার্গেটে রেখে।

মূলত বিএনপির দিকে হাসিনা কাদা ছুড়ে মারবে এটা নিশ্চিত। বিএনপির লাস্ট টার্মের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শাহজাহান মিয়া কে রাজাকার বানিয়ে ফেলা হয়েছিলো জোর করে যদিও তার পরিবার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচুর সাহায্য করেছে ! কোন সন্দেহ নেই প্রচন্ড প্রতিহিংসা পরায়ন , গ্রাম্য টেম্পারামেন্টের হাসিনা বিএনপিকে ফাসানোর চেষ্টা করবে যদিও তার নিজের বেয়াই রাজাকারের ঔরশজাত ছেলে এবং সব মিডিয়াকেও হাসিনা সংগে পাবে। একমাত্র পথের কাটা "আমার দেশ" আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুলের ৭১ এর গোমর ফাঁস করার পরই সম্ভবত হাসিনা "আমার দেশ" কে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সম্ভবত প্রচন্ড এনভিয়াস হাসিনার ছোবল দেয়া মানসিকতার কারনেই খালেদা জিয়া হার্ড লাইনে যাচ্ছেন এই ইস্যুতে। এর আগ পর্যন্ত জেড ফোর্স অধিনায়ক জিয়ার চরিত্রহননের চেষ্টা (যেরকম ১টি সামুতেই হয়েছিলো এবং যেটার প্রাপ্য প্রত্যাঘাতটা আমি নিজেই ফিরিয়ে দিয়েছি ) করে ওয়ার্ম আপ করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

এখন পর্যন্ত যুঅবি ইস্যুতে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদকেই কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে , বাকিরা অতি উৎসাহী - কথায় বলে ফাকা কলসী বাজে বেশী । যেমন কামরুলের বাবার বাড়ী ইসলামী ব্যাংকের লোনে করা , সেই চেচায় ইসলামী ব্যাংক সিজ করার জন্য , অন্যদেরকেও মীর কাসিম টাকা দিয়ে ম্যানেজ করতে পারবে হয়তো। সবমিলিয়ে - আমি বলবো নিজামী - মুজাহিদদের কে হাল্কা মামলায় আটকানো হয়েছে কারন সরকার সরাসরি যুঅবি ইস্যুতে আটক করতে গেলে পাবলিক রিঅ্যাকশন নিয়ে আশংকায় ছিলো। মহিউদ্দীন খান আলমগীর ও এরকমটাই বলেছেন সিডনীতে। তাই অনেকটা অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে অপারেশন করার মত খুব ট্রিকিলি নিজামী - মুজাহিদদের কে আটক করা হয়েছে।

তবে এটা তাদের প্রাপ্য বলেই আমি মনে করি। এরা এরশাদের মতই বিশ্ব বেহায়া স্রেফ। এত গালি খেয়েও রাজনীতি থেকে অবসর নেয়না। যাইহোক - যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়েছে , শেষ হবে কখন আমি নিশ্চিৎ নই। তবে আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে বিএনপিকে কাদা ছুড়ে মারতে চাইলে পরের টার্মে অনেক আওয়ামী রাঘব বোয়ালের ৭১ এর গোমর সামনে চলে আসবে এবং বিএনপিও একই ধরনের প্রতিশোধ নেবে।

ইসলামী মুল্যবোধের টপিকটা ২০০১ এ ফ্রেশ ছিলো , ২০০৮ এ কাজে আসেনি। যুঅবি টপিকটা ২০০৮ এ ফ্রেশ , ২০১৪ তে কাজে আসবেনা। যুঅবি ইস্যু টা মীমাংসিত হওয়ার পর জামাত নতুনভাবে পথ চলবে। তখনকার জামাত ভারমুক্ত হবে। সেসময়কার রাজনীতির ডাইমেনশন বিচার করেই সম্ভবত খালেদা জিয়া এই বক্তব্য দিয়েছেন।

কারন সম্ভবত হাসিনা তখন সম্ভবত ১ ঘরে হয়ে যাবেন। জাপা থাকার সম্ভাবনা নেই হাসিনার সাথে , এরশাদ দুধের মাছি। জামাত মাত্র খাওয়া যুঅবি মারের দগদগে ঘা ভুলবেনা। নির্বাচন ২০১৪ এর ইকুয়েশন আওয়ামী লীগের জন্য খুবই টাফ হবে মেলানোটা। সবমিলিয়ে আমার ধারনা : যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়ে গেছে আনঅফিসিয়ালী , তবে এটা সুস্থ সবল স্প্রিন্টারের মত ফিনিসিং লাইন টাচ করবে এটা আমার বিশ্বাস হয়না।

হয়তো ল্যাংচাতে ল্যাংচাতেই শেষ হবে। তবুও যারা ৭১ এর প্রতিশোধ চান , তারা প্রতিশোধ নিন , জমে থাকা আর্তনাদ শেষ হয়ে যাক। নতুন ভোরের বাংলাদেশে সবাই সজীব নিঃশ্বাস নেবো একসাথে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.