আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ও আমার বন্ধু , আমার নির্ভেজাল ভালোবাসারা(প্রাথমিক স্কুলের সহপাঠী , বন্ধু)

আনন্দবতী মেয়ে আমি হাওয়ায় উড়াই চুল,চোখের ভেতর ছলাৎ ছলাৎ মনের ভেতর নীল ঘাসফুল

বন্ধুর পথে বন্ধু তোর হাত ছিন্ন করে অন্ধকার রাত জাগিয়ে তোলে রক্তিম প্রভাত । আমার প্রথম স্কুল ময়মনসিংহের মিশনারী স্কুল । আমার ওই স্কুলের তেমন স্মৃতি নেই । শুধু মনে আছে একজন ম্যাডাম তবে বিদেশী ছিলেন চোখে ভাসে । সেই মিস কে সবাই ভয় পেতো কিন্তু আমি তাঁর অনেক আদর পেয়েছিলাম ।

ক্লাশে কাঁদতাম বাপির জন্যে আর তখুনি আমাকে মিস কোলে নিয়ে ঘুরতেন । আরেকটা দৃশ্য চোখে ভাসে আমি জল খেতে যেতাম টিউবওয়েলে একটা মেয়ে আমাদেরই ক্লাশের মাথায় ঝাঁকড়া চুল ,ভাসা ভাসা চোখ আমাকে কল চেপে দিতো । সবচেয়ে যা কষ্টের কখনোই তার নাম জানতে চাইনি । কিন্তু মেয়েটি আমার পাশে পাশেই থাকতো । আরেকটা মজার ব্যাপার হলো ফেসবুকে এসে পেয়ে গেলাম আমাদেরই ক্লাশের বিপুল কে ।

আমাকে চিনতে পেরেছে , আমি পারিনি । এই বন্ধুটাকে ফেসবুকে পেয়ে কি যে ভালো লেগেছে । ছোটবেলার কথা মনে নেই , তবে গেলোবার দেশে যাবার পরে ওর সাথে দেখা , আনন্দ-আড্ডা ভুলবো না কোনোদিন । যাক অবশেষে ময়মনসিংহের পাট চুকিয়ে বাপির বুকে ফিরে আসা । আহ্ , কি যে অনুভূতি , বাপির কোলের ওম ।

কানিহাটী চা' বাগানের সবুজে গড়াগড়ি । ওদিকে বাপি - মামনির চিন্তা কোথায় ভর্তি করানো যায় আমায় । সব চিন্তার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে শমশেরনগর রামচিজরাম সরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া দ্বিতীয় শ্রেণীতে । বাপির হাত ধরে স্কুলের দ্বোরে । আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক জসীমউদ্দীন স্যার আমায় নিয়ে গেলেন ক্লাশে , পরিচয় পর্বের পর আমার আসন হলো প্রথম সারিতে ।

স্যার চলে যাবার পরই সবগুলো চোখ আমায় ঘিরে ধরলো । গীতা (চরম ভয়ংকর দুষ্টু ) , বিথী (অহঙ্কারী ) , ফাতেমা (যার মাধ্যমে আড়ি শব্দের সাথে পরিচয় , এখন পর্যন্ত জানা হলোনা কেন সে আমায় আড়ি দিয়েছিলো , খুব কেঁদেছিলাম ) , স্বপন ( চাপা দুষ্ট ) , পারভেজ , শান্ত শ্যামলী ( সার্বক্ষণিক সঙ্গী ) , মেরী (টিফিন থেকে শুরু করে কলম কাগজ অদল - বদল করা সঙ্গী ) , প্রদীপ ( শান্ত - ভদ্র ) , দুষ্টের শিরোমণি চা' বাগানের শ্যামলী । সময়ের দ্রুততায় আরো কিছু নাম হারিয়ে গেলো ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক থেকে । ওখানেই জানলাম ভাষাগত সমস্যার এবং ধর্মের জন্য কতোটা অত্যাচারিত হওয়া যায় । গীতা ছিলো নেত্রী দুষ্ট দলের ।

আমি সিলেটি হয়েও ওখানকার ভাষা বলতে পারতাম না । তাই স্যার চলে গেলেই আমার আসন হতো মাটিতে , তাও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হতো আমায় । চোখ থেকে নিঃশব্দে গড়িয়ে যেতো বিন্দু । আর সম্পূর্ণ ক্লাশ অট্টহাসিতে ফেটে পড়তো , যেনো আমি এক হাস্যকর জীব । এর চেয়ে জঘণ্য প্রশ্ন : "ওই তুই কুন (কোন) ধর্মের বে ? ক সাইন (বলতো) ? কইলে পরে সিট দিমু ।

" আমার উত্তর : "মানব ধর্ম । " আর আমি শিখেছিলাম আমার মামনির থেকে । খুব ছোটবেলা থেকে এখনো মন্দির - মসজিদ - গীর্জা - প্যাগোডা দেখলেই হাত উঠে আসে , মাথা নুয়ে প্রনাম করি । আমার এ উত্তরে সন্তুষ্ট হয়না ওরা । আবার প্রশ্ন : " হিন্দু না মুসলমান ? মানব ধর্ম কিতাবে (কি রে ) ? কইরে না কিতার লাগি ?" একই উত্তর আবারো ।

শাস্তিও দীর্ঘ হয় স্যার না আসা পর্যন্ত । বাসায় ফিরেই মামনিকে জিজ্ঞাসা আমি কি হিন্দু , না মুসলমান ? মামনিরও সেই একই উত্তর । পরেরদিন আবারো সেই একই প্রশ্ন ক্লাশে । তবে সেদিন বাঁচিয়ে দিলো শান্ত শ্যামলী । বিথীর টাইটেল চন্দ , আমারও ।

তার মানে আমি হিন্দু । নিঃসঙ্গ সময় টিফিন এর পর খেলার সময়টুকু । কেউ নিতো না তাদের দলে । একা দাঁড়িয়ে শুধু দেখেই যেতে হতো । আমার খুব প্রিয় বন্ধু মেরী যে আমার সাথে বেশী মিশতো ।

খুব ভালো একটি মেয়ে । তবে মজার ব্যাপার হলো একবার আমি একটা কলম নিয়ে গিয়েছিলাম দাদু আমাকে কিনে দিয়েছিলো । মেরী বললো আমার কলমটা ওকে দিয়ে ওর একটা বলপেন নিতে । চাইবার সাথে সাথেই দিয়ে দিলাম । বাসায় ফিরে সেই কলম দিয়ে লিখছিলাম মামনি বললো সেই কলম কোথায় ?বললাম যখন তা ভালো করেছি কিন্তু কখনো কেউ যদি ভালোবেসে দেয় সে যা-ই হোক দিতে নেই ।

সেই কথাটা আমি এখনো মেনে চলি । তাইতো দোলনদার দেয়া একটা পাতা আমার কবিতার ডায়েরীতে এখনো আছে । তবে সেরা সময় ছিলো ক্লাশ ফাইভের বৃত্তির কোচিং এর দিনগুলো । প্রদীপ , স্বপন , আমি , শ্যামলী , বিথী, পারভেজ -- এই কয়জন । তবে একদিন ঠিকই অঘটন ঘটলো ।

জসীমউদ্দীন স্যার আমাদের অঙ্ক দিয়ে নামাজ পড়তে গেলেন । কিছুক্ষণের মধ্যেই অঙ্ক করা ও শেষ । স্বপন বললো পাশের জঙ্গলে বেতফল আছে । আমার শত না সত্ত্বেও সবাই মিলে গেলাম । সত্যি এমন মধুর ফল জীবনে আর কোনোদিন খাওয়া হয়নি ।

হাতে করে ফল নিয়ে এসে দেখি স্যার বসে আছেন । ভয়ে কুঁকড়ে গেলো সবাই , আমি ছাড়া । দৃঢ় বিশ্বাস , আমায় তো জোর করে নেয়া হয়েছে । অথচ স্বপন দোষ দিলো আমার । জীবনের প্রথম বেতের দাগ , ফুলে ঢোল সঙ্গে সঙ্গেই ।

হাত কাউকে দেখাইনি , জীবনের প্রথম গোপনীয়তা শেখা । ভোর পাঁচটায় জসীম স্যারকে দেখে আঁতকে ওঠা । স্যার আমায় জড়িয়ে ধরে বললেন : "নীলাঞ্জনা মা , ভুল করে ফেলেছি রে মা । " অবাক হয়ে ভালোবাসায় নত হলাম । এই স্যার , আশিক স্যার , বুড়ি আপার যে ভালোবাসা পেয়েছি , তাই হয়তো রেকর্ড করলাম সম্পূণ সিলেটের মাঝে প্রাথমিক সমাপণী পরীক্ষায় প্রথম হয়ে আর মেধাবী গ্রেডে বৃত্তি পেয়ে ।

নাহ্ বন্ধুত্ত্ব কি তা তখনো বুঝে উঠতে পারিনি । শুধু এখনো শান্ত শ্যামলী , মেরী আর আড়ি পাতানো ফাতেমাকে মনে পড়ে । হ্যা , স্বপন , পারভেজ আর শান্ত প্রদীপকেও । প্রদীপ এখন ফার্মেসী চালায় , কবিতাও লিখে । দুষ্ট শ্যামলী সিলেট , বিথী শমশেরনগরেই আছে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা হয়ে , স্বপন শমশেরনগরে , অন্যরা কোথায় , জানিনা ।

জানতে ইচ্ছে করে গীতা ওরা সবাই মিলে কেন এমন করেছিলো ? বন্ধুত্ত্ব কি তা বুঝলাম আরো অনেক পরে , থাক পরেই নয় বলবো সে কথা .......... নীলাঞ্জনা নীলা ক্রমশ----- ল্যুভেন-লা-ন্যুউভ,বেলজিয়াম

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.