সংঘর্ষ অব্যাহত মুয়াম্মার গদ্দাফির দেশে। আর এই গোলাগুলিতে নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে সে দেশের মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ। ঠিক যেভাবে ২০০১ সালে আফগানিসত্মানে ধ্বংস হয়েছিল বামিয়ানের বুদ্ধ। পরবর্তীকালে ইরাকে বা হাল আমলের মিসরেও দেখা গিয়েছে একই ছবি। লিবিয়ার বিভিন্ন প্রানেত্ম ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অজস্র প্রত্নস্থল।
যার মধ্যে আকাকাস পর্বতের গুহা, গ্রিক প্রত্নড়্গেত্র সিরিন বা রোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংসাবশেষসহ বেশ কয়েকটি ইউনেস্কোর ‘হেরিটেজ সাইট’ও রয়েছে। আকাকাস পর্বতের গুহায় মিলবে নব্যপ্রসত্মর যুগের অসংখ্য জিরাফ, হাতি ও কুমিরের দেওয়ালচিত্র। এর পরবর্তীকালে লিবিয়া হয়ে ওঠে গ্রিক ও রোমান সভ্যতার অংশ। গ্রিক আমলে সে দেশ ছিল পিউনিক সাম্রাজ্যের অধীন, পরে জুলিয়াস সিজার নাম দিয়েছিলেন লেপটাস ম্যাগনা। লিবিয়া তখন শুধু রাজনৈতিকভাবেই গুরম্নত্বপূর্ণ নয়, বাণিজ্যের অন্যতম পীঠস্থান।
সে দিনের গুরম্নত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র ওয়েই নাম বদলে এখন ত্রিপোলি। এ ছাড়াও, কিছু জায়গায় এখনও খনন বাকি রয়েছে। ষষ্ঠ শতকে ইসলামি শাসনের সময়ও বেশ কিছু স্থাপত্য গড়ে ওঠে লিবিয়া ও তার আশপাশে। এর মধ্যে আজিলার আতিক মসজিদ প্রাচীনতম। কিন্তু এ সবই এখন ধ্বংসের মুখে, বলছেন, ইতালীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ সাবিনো ডি লার্নিয়া।
তার নেতৃত্বেই ১১ সদস্যের একটি দল লিবিয়ার আকাকাস ও মেসাক অঞ্চলে প্রত্ন-অভিযানে গিয়েছিলেন। মূল উদ্দেশ্য ছিল হেরিটেজ গুহাগুলো নিয়ে গবেষণা করা। ইতালিয়ান-লিবিয়ান আর্কিওলজিক্যাল মিশনের অনত্মর্গত ছিল এ অভিযান। কিন্তু আচমকাই শুরম্ন হয় গদ্দাফি-বিরোধী আন্দোলন। আর তা থেকে গৃহযুদ্ধ।
এর মধ্যে কিভাবে আটকে পড়েছিলেন, তা জানিয়েছেন লার্নিয়া নিজেই। বললেন, ওই অঞ্চলে আটকে ছিলাম বেশ কয়েক দিন। বিমানবন্দর কয়েকশ’ কিলোমিটার দূরে। দেশের যা অবস্থা, তাতে অনেকটা ঘুরে সেখানে পৌঁছতে হতো। অতঃপর কি করলেন? একটা টুইন ওটার বিমানে (ওজন ও আকারে ছোট) চেপে মধ্য লিবিয়ার সেবা বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রত্নতাত্ত্বিকদের দলটি।
সেখান থেকেই বেরিয়ে যান দেশের বাইরে।
ওই প্রত্নতাত্ত্বিকরাই জানিয়েছেন, গাদ্দাফি বাহিনীর নির্বিচারে গুলি-বোমার আঘাতে কিভাবে ড়্গতিগ্রসত্ম হচ্ছে প্রত্নসামগ্রী ও উৎখনন ড়্গেত্রগুলো। বেশ কিছু তো নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখেও। একই কথা জানিয়েছেন লন্ডনে লিবিয়ান স্টাডিজের প্রধান অধ্যাপক পল বেনেট। প্রায় ৩০ বছর লিবিয়ায় কাটিয়েছেন তিনি।
বেনেটের কথায়, শুধু পিউনিক বা রোমান সাম্রাজ্যের নিদর্শন নয়, লিবিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরের তলায় ছড়িয়ে রয়েছে অজস্র নিদর্শনও (প্রত্নবিজ্ঞানের ভাষায়, আন্ডারগ্রাউন্ড আর্কিওলজিক্যাল সাইট)। পাশাপাশি দেশ-বিদেশের প্রত্নবিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ১৯৫১ সালে ইতালির শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর লিবিয়ায় কোনও প্রত্ন অভিযান বা গবেষণা চালানো হয়নি। গত দশক থেকেই এ কাজ শুরম্ন হয়েছিল। আসতে শুরম্ন করেন বিদেশী গবেষকেরাও। এ মুহূর্তে কমবেশি ২০টি বিদেশি অভিযান চলছিল।
সব বন্ধ।
ফের কি শুরম্ন হবে অভিযান? বলতে পারছেন না কেউই। ফ্রান্সের পইতিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ ভিনসেন্ট মিশেল জানিয়েছেন, আগামী মাসেই ভূমধ্যসাগর উপকূলে গ্রিক ধ্বংসাবশেষ নিয়ে গবেষণা করতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ অবস্থায় তা বাতিল। ফের হবে কি-না, তা নিয়েও দ্বন্দ্বে তিনি।
এ সবই না হয় ভবিষ্যতের কথা। কিন্তু যে দামি সম্পদের ওপর বোমা পড়ছে, তার কি হবে? নষ্ট হলেও কি তা পুনর্গঠন সম্ভব? এছাড়াও আশঙ্কা রয়েছে সংগ্রহশালা লুট হয়ে যাওয়ার। অতীত বলছে, ইরাক যুদ্ধের সময় সে দেশের বিখ্যাত সংগ্রহশালাগুলো লুট হয়েছিল। আর সামপ্রতিককালে মিসরের প্রত্নসামগ্রী লুট থেকে মমির মাথা কাটা তো টাটকা স্মৃতি।
ভারতের বিভিন্ন প্রত্নতত্ত্ববিদ বলছেন, দেশের প্রত্নসম্পদ লুট আটকানো সম্ভব।
পশ্চিমবঙ্গের প্রত্নতত্ত্ব দপ্তরের উপ-অধিকর্তা অমল রায় জানালেন, দু’ভাবে প্রত্ন উপাদান সংরড়্গণ সম্ভব। এক, যদি যাবতীয় তথ্য ঠিকমতো নথিবদ্ধ করা থাকে। দুই, সংগ্রহশালার দামি জিনিসগুলো সিন্দুকে ভরে যদি মাটির তলায় রেখে দেয়া হয়। তবে, এ ড়্গেত্রে সংশিস্নষ্ট দেশের সরকারের উদ্যোগী হওয়া একানত্ম প্রয়োজন বলে অমল রায় মনে করেন। ভারতের পুরাতত্ত্ব সংরড়্গণের সূত্র জানাচ্ছেন, ঠিকমতো তথ্য মিললে আগের মতো করে দেয়া সম্ভব প্রত্নসামগ্রীটিকে।
যেমনটা হচ্ছে সেই বামিয়ানে। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সংরড়্গণ সরাসরি যুক্ত রয়েছে সেই কাজে। এমন কি হবে লিবিয়ায়? জানতে চায় ইতিহাসের ছাত্ররা।
-আনন্দবাজার পত্রিকার সৌজন্যে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।