যতোবার আমি শান্তি খুঁজেছি, ঠিক ততোবার আমার মাথায় শুধু একটি চিন্তাই এসেছে। সেটা হচ্ছে একটা ড্রিল মেশিন দিয়ে মাথার খুলিটা ফুটো করে দেওয়ার চিন্তা।
২০০২ সালের কথা । আমরা তখন সবেমাত্র ক্লাস টেন এ উঠেছি । বৈশাখ মাসের কোন এক শুক্রবার সকাল ।
ঝম ঝম করে নামলো বৃষ্টি । আর যায় কোথায় ?? বন্ধুদের সবার মুখের ৩২ টা দাত বের হয়ে গেল । স্যার এর বাসায় পড়ছিলাম ,পড়া ওইদিন ওইখানেই সমাপ্তি । কোনোমতে স্যার এর বাসা থেকে বের হয়ে সাইকেল টা নিয়েই দে ছুট । বাসা থেকে শুকনো কাপড় একটা ব্যাগ এ নিয়ে সোজা স্কুল মাঠের উদ্দেশ্যে সাইকেল চালালাম ।
সাইকেল তো নয় , যেন একটা হেলিকপ্টার । মাঠে যেয়ে দেখি ৩০ টা বান্দর একটা বল নিয়ে দাপাদাপি করতেছে । যাই হোক , ফুটবল খেলা শুরু হল । এক এক সাইডে ১৬ জন করে
বৃষ্টির বেগ আরও বাড়ল । আর সাথে আমাদের বাঁদরামিও ।
খেলার মাঝে টেনে রাম আছাড় খেলো কয়েকজন । এ একে ল্যাং মারছে , ও ওইদিকে কারন ছাড়াই মাটিতে গড়াগড়ি দিচ্ছে । ভাবছিলাম খেলা টা জমবে । কিন্তু এক ঘণ্টার মাঝেই আমাদের টিম ৩ খানা গোল খেল । যদিও খেলা শেষ হবার কোন নির্দিষ্ট সময় ছিল না , এবং আমার সু !বন্ধুদের উৎসাহে খেলাটি অনন্তকালের পথেই যাত্রা করেছিল ।
২ ঘণ্টায় ৮ গোল খেয়ে ভুত হয়ে গেলাম ।
বল মাঝ মাঠে ,ঠিক এমন সময় , আমাদের টিম এর বিশাল পালোয়ান চমন , তেড়ে দৌড় দিল একটা । বিপক্ষ টিম এর আরেক জাম্বু রিফাত ও দিলো দৌড় । দুই পাশ থেকেই দুই জাম্বুর পা অবতরন করলো বল টির উপর । বলটি সাই করে শুন্যে উঠে মাঠের পাশের মসজিদদের কাঁচের জানালার উপর নিজের রাগ টা দেখাল ।
ঝন ,ঝন ,ঝন । জানালা ভেঙ্গে খান খান । আগেই বলেছি শুক্রবার এর কথা । দুর্ভাগ্য কিনবা সৌভাগ্যক্রমে ঠিক ওইসময় আজান হচ্ছিল । আল্লাহু আকবর এর আল্লাহু পর্যন্ত বলার সাথে সাথেই আজান থেমে গেল ।
আমরা তো বুঝলাম কেস খারাপ । সাথে সাথেই মাঠ টা খালি হয়ে গেল । যে যেদিকে পারিল ঝাড়িয়া দৌড় দিল ।
আমি আর আমার এক বন্ধু উল্টা দিকে দৌড় দিছিলাম । মোটামুটি সবাই ই তাদের সাইকেল যেখানে রাখা ছিল ওইদিকে গেছিল ।
সবাই নিজেদের সাইকেল এর লক খুললো । এরপর পুকুরে গোসল করবে বলে একে এক যেতে লাগলো । আমি ভাবলাম আমার ও যাওয়া উচিৎ । আমি আমার সাইকেলের কাছে পৌঁছুতে পৌঁছুতে ওদের সবার ই সাইকেল খোলা শেষ । ঠিক যেই সময় আমি আমার সাইকেল খুলতে যাব , ওইসময় দেখি মসজিদ এর মুয়াজ্জিন সাহেব সাথে তার এক চ্যালা নিয়ে আমাদের দিকে আসছেন ।
এটা দেখে আমি আমার সাইকেল টা না খুলে বন্ধুদের সাথে যেয়ে আড়াল হলাম ।
ভাবছিলাম , মুয়াজ্জিন আমাদের দল টাকে ধরতে আসবে । কিন্তু কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে উঁকি মেরে দেখি উনি আমার সাইকেল টা কাধে করে নিয়ে যাত্রা করেছেন উল্টো দিকে । মানে আমার সাইকেল আটকাইছেন ! আমার তো চক্ষু চড়কগাছ !!! দৌড় দিয়ে কাছে যেতেই উনি আমাকে আমার কাপড়ের ব্যাগ টা দিয়ে দিলেন । ভাবখানা এমন যে তুমি তোমার কাপড় নিয়ে বাড়ি যাও বাপু , তোমার সাইকেল আমার কাছেই থাক।
আল্লাহর অশেষ দয়া তে ওই এলাকার ই এক বন্ধুর আবির্ভাব হল । বন্ধুকে আবার হুজুর চিনেন । তো ওই বন্ধু হুজুর কে বলল- হুজুর ,আমরা টাকা তুলে জানালার কাচ ঠিক করে দিব , আপনি সাইকেল টা ছেড়ে দিন । অনেক গুঁতোগুঁতির পর হুজুর অবশেষে আমার সাইকেল খানা ছাড়ল
( বিঃ দ্রঃ জানালার কাঁচ টা পরের দুই বছর ও ভাঙা ছিল )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।