আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্ডার থেকে আপডেট-১।

পাওয়ার অব পিপল স্ট্রংগার দেন দি পিপল ইন পাওয়ার। http://mhcairo.blogspot.com/

আপনাদের সকলের ভালবাসায় আমি শিক্ত, অনুপ্রেরনায় আমি অনুপ্রানিত, আপনাদের উদ্দেশ্যে কিছু লিখতে পেরে আমি গর্বিত। প্রথমেই আমি দুঃখ প্রকাশ করছি, কারণ আপডেট জানাতে বেশ বিলম্ব হল। আমরা সকাল সকালেই কায়রো থেকে বর্ডারের উদ্দেশ্যে রওনা হই। কায়রো থেকে প্রায় ৮০০ কি.মি. দূরত্বের মিশর লিবিয়ার সিমান্ত, নাম সাল্লুম।

পথি মধ্যে জরুরি ভিক্তিতে এটিএন এর ব্রেকিং নিউজের জন্য গাড়ি থামিয়ে রাস্তার পাশেই আমরা ২০ মিনিটের একটি ভিডিও করি। আর এতেই ঘটে যায় বিপত্তি। স্থানিয় কিছু লোকজন বিষয়টি শহজ ভাবে মেনে নিতে না পেরে তারা সেনাবাহিনির নিকট খবর পৌছায়, পরে সেনাবাহিনি আমাদের তাদের কেম্পে নিয়ে যায়। পরে এক মেজরকে বিষয়টি স্পষ্ট বুঝাতে পারাতে এবং ভিডিও ফুটেজ গুলো দেখে আপত্তিকর কিছু না পাওয়াতে আমাদের সম্মানের সাথেই ছেড়ে দেয়। এখানে আমাদের প্রায় ১.৩০ মিনিট সময় কেটে যায়।

ফলে নির্দিষ্ট সময়ের থেকে অনেক দেরি করে আমরা আমাদের কাঙ্খিত স্থানে পৌছাই। পৌছানোর পর যেই পরিস্থিতি আমাদের নজড়ে পড়ল তা ভাষায় বলা সম্ভব হবে না। কিছুলোক পুর্ব থেকেই জানত যে আজ সাংবাদিক আসবে, তাই তারা অপেক্ষা করছিল তাদের মনের কথা বলতে। আমরা বর্ডারে পৌছে সেখানে প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশী পাই। মুন্নি সাহাকে দেখে তারা চিনে ফেলে।

এবং আনন্দে আত্নহারা হয়ে মুন্নুসাহা মুন্নুসাহা বলে শ্লোগান দিতে থাকে। মুহুর্তের মধ্যে সমস্ত বাঙালি আমাদের তিনজনকে ঘিরে ফেলে। কয়েকজন উচ্চ কন্ঠে কড়া ভাষায় বলতে থাকে আমরা মারা যাচ্ছি আর আপনারা আসছেন আজকে। আমরা সরকারি লোক নই, আমাদের অনেক আইন মেনে চলতে হয় এই সব বললে তারা বুঝ মানে, এবং তাদের মধ্য থেকেই কিছুলোক এই বলে তাদের বুঝায় যে এরা আসছে টিভি চ্যানেলের পক্ষ থেকে, এদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করা ঠিক হবে না। তারা আমাদের তিনজনকে টেনে তিনদিকে নিয়ে যায়।

সবারই একটা রিকুয়েষ্ট, ভাই আমার কথা একটু শুনেন, ভাই আমার কথা একটু শুনেন। তবে তাদের ব্যাবহারে আমার মোটেও ভয় লাগে নি, তাদের আচরনে কোন ব্যাথাও লাগে নি। তাদের পরিস্থিতিঃ মিশরের সিমান্তে লিবিয়ায় প্রবেশগামি ইমেগ্রেশন অফিস। পাশাপাশি কয়েকটি বিল্ডিং রিফিউজিদের তত্বাবধায়নের জন্য আইওএম তাদের অফিস বানিয়েছে। বিল্ডিং এর একটি বড় কক্ষে দেখলাম কমপক্ষে ৫০০/৭০০ বাংলাদেশী ফ্লোরিং করে শুয়ে আছে।

বাকি প্রায় ৪৫০০ বাংলাদেশি বিল্ডিং এর বাহিরে বিল্ডিং এর গা ঘেসে পাটি বিছিয়ে একেকটি কম্বল কয়েকজনে মুড়ু দিয়ে বসে আছে। তাদের মুল অভিযোগ: ১) আমরা গত ২৩ তারিখ এখানে এসেছি, কিন্তু খাবার পাচ্ছি মাত্র তিনদিন ধরে। ২) কোন টয়লেটের ব্যাবস্থা নেই। ৩) দেশের সাথে যোগাযোগ নেই। ৪) খাবারের জন্য লড়াই করে তাদের চোখের সামনেই মারা গিয়েছে কয়েকজন।

৫) বাংলাদেশে খবর দেয়া হচ্ছে যে, বর্ডার এলাকায় বাংলাদেশীরা ভাল আছে। এই খবর কে দিচ্ছে কেন দিচ্ছে এটা তারা জানতে চায়। ৬) তাদের সামনেই কয়েকজন না খেয়ে মারা গিয়েছে, অথচ সরকার বলছে তারা ষ্টোক করে মারা গিয়েছে। ৭) ভারতের লোকজন ২/৩ দিনেই চলে গিয়েছে অথচ আমরা কেন এতদিন কষ্ট করছি। ৮) সরকারে পক্ষথেকে কোন রিপোর্টার না এসেই তারা কেন উল্টা পাল্টা খবর প্রকাশ করছে।

৯) কিছুলোক পরে এসে আগে চলেযচ্ছে, তাদের কেহ কেহ বলছে, এম্বাসির লোকজনকে টাকা দিয়ে অনেকে পরে এসেও আগে চলে যাচ্ছে। ১০) বাংলাদেশ থেকে কেন কোন বিমান কিংবা জাহাজ আসছে না। ১১) আমরা কেন আইওএম জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সাহায্যের মুখাপেক্ষি হয়ে বসে থাকব? আমাদের কি সরকার নেই? ১২) আমরা পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয়, এম্বাসি কোথাও ফোন দিয়ে কাউকে পাইনা, তাহলে কে শুনবে আমাদের কথা?? এই সময় তারা সরকারে বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকে। স্বরাস্ট্র মন্ত্রিকে অশ্রাব্য ভাষায় কেহ গালিগালাজও করতে থাকে। এদের অধিকাংশকেই এ্যাম্বাসির লোকজনের উপর বেশ রাগান্বিত দেখা যায়।

এবং তারা সুযোগ পেলে এ্যাম্বাসির লোকজনকে লান্ছিত করবে বলেও আমার সন্দেহ হয়। আমার মনে হল বিষয়টি নিয়ে দূতাবাসের লোকজনও একটু চিন্তায়ই আছে। এই সমস্ত বিষয় সহ আরো অসঙ্খ বিষয় নিয়ে চড়ম হৈচৈ বেধে যায়। সবাই আমাদের টানাটানি শুরু করে আর বলতে থাকে, দয়া করে একবারদেখে যান আমি গত দশ/১২ দিন ধরে কোথায় পরে আছি। এই বর্ডারে এসে এখন পর্যন্ত কেহ গোসল করতে পারে নি।

সাময়িক কয়েকটা টয়লেটের ব্যাবস্থা করা হলেও তা লোকসংখার অনুপাতে অনেক কম। একপর্যায় আমরা কেরামাতউল্লাহ সাহেবকে হারিয়ে ফেলি। কিন্তু আমি ও মুন্নি দি কোথাও মুভ করতে পারিছিলাম না। তারা চারিদিক থাকে আমাদের ঘিরে ধরে। আর হৈচৈ করে, কেহ কান্না করে তাদের দুর্দশার কথা বলতে থাকে।

তবে যাহা সত্য তাহা হলো, তারা আমাদের সাথে মোটেই অশুভন আচরণ করে নি। আমাদের আজ পৌছতে রাত্র হয়ে যাওয়াতে আর বেশি সময় দিতে চাইলাম না। আগামিকাল সারাদিন তাদের সাথে থাকব, তাদের কথা শুনব, তাদের ভিডিও করব এবং তাদের দুখের কথা দেশবাসিকে জানাবো এমন প্রতিজ্ঞা করেই তারপর তাদের থেকে বিদায় নিই। এমন সময় কয়েকজন আমার হাত ধরে করুন সুরে বলতে থাকে, ভাই আপনারা যে আমাদের দেখতে এসেছেন এতেই আমরা অনেক বেশি খুশি, আমরা আর কিছুই চাইনা। সেই মুহুর্তে আবেগ সংযত রাখা বেশ কষ্ট সাধ্য ছিল।

(কতই না অভাগা মনে করে নিজেদের) তাদের থেকে বিদায় নিয়ে আমরা দূতাবাসের লোকজনদের সাথে দেখা করতে গেলাম। তারা আমাদের আগমনের খবর জানত বিধায় অত ফর্মালিটিসের কিছুই ছিল না। তাই তারা জিজ্ঞসে করলেন, কেমন দেখলেন? কি বুঝলেন? তারা কি বলল? আমি এখানে বেশি কথা বলা শুভনিয় মনে করলাম না। কাজেই মুন্নি সাহাই কথা বললেন, আমি ভিডিওর কাজ সারলাম। তারা পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিলেন এই ভাবেঃ ১) মিশর সরকার দয়া করে আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন এটাই অনেক বড় কথা, যার ফলে লোকজন দেশে ফিরে যাবার আশা পোষণ করতে পারছে।

কাজেই এখানে অত শুখ ও আরাম তারা চাইলেই তা দেয়া সম্ভব হবে না। ২) বাঙালি ভাত খেতে চায়, এখানে ভাত আসবে কই থেকে? ৩) এখানে দুএকটা টেপের লাইন ছাড়া কোন পানির ব্যাবস্থা নেই, গোসল করবে কিভাবে। ৪) সেনাবাহিনির লোকজন এর চেয়ে বেশি টয়লেটের পারমিশন দেয় নি, কাজেই টয়লেটের সমস্যা হচ্ছে। ৫) প্রথমদিকে খাবার কষ্ঠ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বিগত ৩/৪ দিন যাবৎ পর্যাপ্ত খাবারের ব্যাবস্থা করা হচ্ছে। ৬) খাবারে আরেক সমস্যা হলো, বেশ কিছু ঘানার লোক আছে যারা গায়ের জোরে বেশি বেশি খাবার নিয়ে যায়।

৭) তারা এটাও বললেন, কোন কোন ছেলের কাছে পানির বতলের বাক্সও আছে তবুও তারা অপরকে দিচ্ছে না। ৮) ইন্ডিয়ান যারা এখানে এসেছিল, তাদের কম্পানির মালিকও ইন্ডিয়ান ছিল, কাজেই শহজে ঐ মালিকদের চাপদিয়ে তাদের দেশে পাঠানোর ব্যাবস্থা করা সম্ভব হয়েছে যেটা আমাদের বেলায় হচ্ছে না। ৯) এই পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ বাংলাদেশী মিশর হয়ে দেশে গিয়েছে। আগামি কাল আরো তিনটি ফ্লাইট দেশে যাচ্ছে। আগামি পরশু ফ্লাইট আছে, তারপরের দিনও ফ্লাইট আছে।

এভাবে নিয়মিত আমরা ফ্লাইট দিতে সক্ষম হচ্ছি যা প্রথম দিকে আমরা পারি নি। কাজেই লোকজনের অতিরিক্ত কষ্ট হয়েছে। আরো বলা হয়, ৫০০ লোকের ফ্লাইট হলে রাতে দেখাযায় আরো নতুন ৪০০ যোগদিয়েছে। কাজেই লোকসংখা কমছে না। তারা বললেন আগামি ১২/১৪ দিনের মধ্যেই আমরা সকলকে দেশে পাঠাতে সক্ষম হবো।

১০) সরকারের পক্ষ থেকে আমরা সবধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা সকলকেই দেশে পাঠানোর ব্যাবস্থা করব, শুধু একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা সারাদিন প্রায় না খেয়ে থাকাতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল, অবশেষে দূতাবাসের গাড়ি ও আমরা আমাদের গাড়ি নিয়ে হোটেলের দিকে রওনা হলাম। আজকে কোন রকমে একটা পরিচয় পর্বের মত শেষ করলাম। আগামি কাল ভাল করে রিপোর্টকরার চেষ্টা করব।

উল্লেখ্যঃ আন্তর্জাতিক সাহায্যকারি সংস্থা 'আইওএম' বিনা খরচে সমস্ত বাংলাদেশীদের দেশে পাঠানোর ব্যাবস্থা করছে। আগামিকাল ৫৪০ জনের মত দেশে যাচ্ছে। -- এখানে নেট সার্ভিস খুব কমপাচ্ছি, আর সারাদিন কোন সুযোগই হয় নি লাপ্পি অপেন করার, কাজেই আপডেট দিতে প্রায় ২৪ ঘন্টা দেরি হলো, এরজন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। --- অনেকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন, বিষয়টি কাল ভাল করে মাঠ অবজার্ভ করে আপনাদের জানাব, তারপর বিষয়টি নিয়ে চি্তা করা যাবে। আপাতত খাবারের মোটামোটি ব্যাবস্থা হচ্ছে, যা ভোক্তভোগিরাই আমাদের বলেছেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.