আমি পূজারী,শুধুই তোমার প্রেমের
“যারা বেরাতে এসেছেন তারা এখানেই নেমে যান”,পিচ্চি কন্টাক্টরের ডাকে ঘুমঘুম ভাব কেটে যায় আরিফের। আকাবাকা পাহাড়ী পথে গাড়ি উঠছিল বলে তার ঘুম ঘুম ভাব চলে এসেছিল। চোখ মেলেই খেয়াল করে তার হাতদুটো সন্ধ্যা এখনো নিজের হাতের মধ্যে ধরে রেখেছে। যতদূর মনে পড়ে সোবহানীঘাটে গাড়িতে ওঠার পর হাতদুটো এভাবে ধরেছিল। তারমানে পুরোরাস্তা এভাবেই ধরেছিল সে!আরিফ বুঝতে পারে সন্ধ্যা তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
সেও তাকাতে চাইলো,কিন্তু পারল না। তার সাহস হল না। “আচ্ছা এটা কী সাহসের কাজ ছিল নাকি ভয়ে কিংবা কষ্টে সে তাকাতে পারল না?”আরিফ প্রশ্ন করে নিজেকে। কিন্তু জবাব তৈরি করার আগেই সন্ধ্যা হাত ধরে টান দেয়। “কি হল নামবে না?”
আরিফ বাধ্য ছেলের মত নেমে পড়ে সন্ধ্যার হাত ধরে।
সত্যি খুব সুন্দর জায়গা। যেমনটি সবাই বলে। ফুরফুরে ঠান্ডা বাতাস। বাসস্ট্যান্ডের দোকানগুলোর উপর দিয়ে পাহাড় চূড়াগুলো দেখা যাচ্ছে। ঘোলাটে ঘোলাটে ভাব,যেন শীতকাল।
শিশিরভেজা প্রকৃতি। দুরে মেঘ জমে আছে পাহড়ের চুড়ায়। আরিফের মনটা হঠাত করে খারাপ হয়ে যায়। বুকের ভেতরটা শুন্য মনে হতে থাকে তার। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে তা সে বুঝে উঠতে পারে না কোনভাবেই।
“ঘুরতে আসছেন আপনারা?”এক রিকশাওয়ালার কৌতূহলী জিজ্ঞাসা। জবাব পাবার আশা না করেই আবার প্রস্তাব দেয়, “চলেন আপনাদেরকে নদীর দিকে নিয়ে যাই”। সন্ধ্যার মৌনস্মমতি বুঝে নিয়ে রিকশায় উঠে পড়ে দুজনে।
“আপনার বাড়ি কই?”,রিকশায় উঠেই রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করে আরিফ। এইটা ওর অভ্যাস।
ইদানিং সন্ধ্যার কাছে এই বিষয়টা বদভ্যাস বলে মনে হয়। যেখানে যায় সেখানেই এভাবে রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করবেই -“আপনার দেশের বাড়ি কই?”
রিকশাওয়ালা উত্তর দেয়, “চিনবেন না ,অনেক দূরে”।
“দূরে কোথায়?ভারতে নাকি নেপালে?”
“আরে না!আমি বিদেশী হমু ক্যান?দ্যাশের বাড়ি উত্তরবঙ্গে”।
“উত্তরবঙ্গে কোথায়”?
“রংপুরে”।
আরিফের মুখের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল সে এই উত্তরটাই আশা করছিল।
সে হাসিতে ফেটে পড়ে। “মিস,আমি কি বলেছিলাম মনে আছে?”,সন্ধ্যার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় আরিফ।
রিকশাওয়ালা কিছু না বুঝেই আবার বলতে থাকে, “এখানকার বেশিরভাগ ড্রাইভারের বাড়িই রংপুর নাহয় গাইবান্ধায়”।
রিকশা মূল রাস্তা থেকে নেমে ছোট রাস্তায় ওঠে। পথে বেশ ধূলা,আর ছোট ছোট পাথর।
পথের দুই পাশে স্টোন ক্রাশিং এর ব্যবসা। তাদের দুজনের কেউ আগে এ ধরনের স্টোন ক্রাশার দেখেনি। তাই বেশ মুগ্ধ হয়েই পাথর ভাঙ্গা দেখতে থাকে। ট্রাক ট্রাক পাথর আনা হচ্ছে। মেশিনে ভেঙ্গে আবার ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে।
আর একটু সামনে গিয়ে চোখে পড়ল সারি সারি সাজানো সি.এন.জি. আর ব্যানার লাগানো বাস। বেশিরভাগ মানুষই এখানে আশে সি.এন.জি. রিজার্ভ করে। আর ব্যানার লাগানো বাস দেখে বোঝা যায় পিকনিকের জন্যও এটা একটা ভাল জায়গা।
আরিফ নিজেও চেয়েছিল সিএনজি বাসে করে আসতে। সন্ধ্যা রাজি হয়নি।
তার যুক্তি ছিল-“সিএনজি খুব দ্রুত চলে,তাই খুব দ্রুত তারা পৌছে যেতে পারে। এতে আরিফের পাশে সে বেশি সময় থাকতে পারবে না”। যাতে বেশি সময় থাকতে পারে সে জন্যই বাসে করে আসা।
“আচ্ছা আপনারা কি কমলা বাগানের দিকে যাবেন নাকি জিরো পয়েন্টে যাবেন?”,রিকশা ড্রাইভার জিজ্ঞেস করে।
“আমরা তো কিছু চিনিনা”।
সন্ধ্যা বলে। “আপনি বলেন কোনদিকে গেলে ভাল হয়?”
“তাইলে আগে জিরো পয়েন্ট দেখেন,ভাল লাগবে। পরে সেখান থ্যাকে বাগানে যাইয়েন”।
“আচ্ছা তাই করেন”,আরিফ সায় দেয়।
কথা বলতে বলতে রিকশা পিচ ঢালা রাস্তা শেষ করে মেটো পথে নামে।
একপাশে উচু উচু পাহাড়,পাহাড়ের পাদদেশ ঘেষে এই রাস্তা আর অন্যপাশে রাস্তা ঘেষে নদী। খুবই সুন্দর!খুব খুব বেশি সুন্দর। প্রকৃতি আসলেই অতি সুন্দর।
নদীতে নৌকার ভীড়। এরকম নৌকা তারা আগে কখোনো কোথাও দেখেনি।
নদীর মাঝখানে দ্বীপের মত। প্রচুর মানুষ দেখা যাচ্ছে। বোঝায় যায় সবাই ঘুরতে এসেছে। নদীর অন্যপাশেই আরো উচু উচু পাহাড়। এত সুন্দর জায়গা দেখে ভাবে তারা যেন এক অতিপ্রাকৃতিক পরাবাস্তব জগতে চলে এসেছে তারা।
“রিকশা আর যাবে না। আপনারা নাইম্যা যান”।
ভাড়া দেবার সময় আরিফ সন্ধ্যাকে দেখিয়ে বলে, “এর বাড়িও কিন্তু রংপুরে”। ভাড়া নেয়া হয়ে গেলে ড্রাইভার বলে, “সেই জন্যই তো দুই টাকা ভাড়া কম নিছি”। বলেই হোহো করে হেসে ওঠে,যেন পুরো রাজ্য জয় করে ফেলেছে।
সন্ধ্যাও হেসে ওঠে,আরিফ তা আড়চোখে খেয়েল করে। বুকের মধ্যে কষ্টের ঢেউ খেলে যায় তার।
তারা পাশাপাশি হাটতে থাকে। কেউ কোন কথা বলে না। অথচ এমনটা কখোনো হয় না।
কে বেশি কথা বলবে এই নিয়ে জোর প্রতিযোগীতা চলে সবসময়। আজ মনে হয় দুজনেরই গলায় কথা আটকে আছে,স্বর বের হচ্ছে না।
একটু সামনেই কালো সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে। সাদা কালিতে লেখা,”আন্তর্জাতিক সীমারেখা অতিক্রম করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ”। তারা লেখাটার কাছে গিয়ে দাড়ায়।
এখানেই একটা সীমারেখা বিভক্ত করে দিয়েছে বাংলাদেশ আর ভারত নামের দুটো ভূ-খণ্ডকে। আরিফ ঠিক দাগটার কাছে চলে যায়। সন্ধ্যা নিষেধ করে।
“আচ্ছা সন্ধ্যা,সীমা অতিক্রম করলে কী হয়?”আরিফের কৌতূহলী প্রশ্ন।
“কী হবে আবার!কড়া শাস্তি হয়”।
সন্ধ্যার নির্লিপ্ত জবাব।
“সেই জন্যই মনে হয় আমি আমার সীমাটা অতিক্রম করতে পারলাম না,কি বল?”
সন্ধ্যা কিছু বলে না। সে ঠিকই বুঝতে পারে আরিফ তাকে কি বুঝাতে চাচ্ছে।
কী মনে করে জানিনা,আরিফ হঠাত সীমানার অপরপাশে একটা পা রাখে। সন্ধ্যা ভয় পেয়ে দৌড়ে এসে তাকে টেনে বাংলাদেশের ভেতরে নিয়ে আসে,জাপটে ধরে।
কড়া গলায় জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি?ওপারে যাচ্ছ কেন?বি.এস.এফ. দেখলে তো গুলি করে দেবে!”
“দিলে দেবে। আমি মরে গেলে তো এখন তোমার আর কোন কিছুই যায় আসে না। হয়ত কোন এক সময় অনাক কিছুই যায় আসত তোমার”। বলতে বলতে বালু বেলায় নামতে থাকে আরিফ। সন্ধ্যা কিছুই বলতে পারে না।
কেউ যেন তার গলা টিপে ধরেছে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। ছলছল চোখে আরিফে যাওয়া দেখে।
চকচকে সাদা বালি। কোথাও একটু আধটু পানি।
বুদবুদ বের হচ্ছে অনেক জায়গা থেকে।
আরিফ জুতা খুলে হাতে নেয়। প্যান্টের নিচে কয়েকটা ফোল্ড করে। সন্ধ্যা আস্তে আস্তে আরিফের পিছনে হাটা দেয়। ওর দেখাদেখি সেও তার জুতাজোড়া খুলে হাতে নেয়।
“উফফ!কী ঠান্ডা!সন্ধ্যা দেখে যাও”।
“না, দেখতে আরব না। আমার ভাল লাগছে না। তোমার ইচ্ছে হলে বেশি করে দেখ”। সন্ধ্যা দূর থেকেই জবাব দেয়।
আরিফ শুনেও না শোনার ভান করে বোকার মত হাসতে থাকে।
নৌকায় ওঠে দুজন। সন্ধ্যাকে হাত ধরে উঠতে সাহায্য করে আরিফ। নৌকাটা লম্বায় বেশ বড়। কিন্তু চওড়ায় এত কম যে ব্যালেন্স ঠিক রেখে বসাই কঠিন তাদের জন্য।
সন্ধ্যা আরিফকে ধরে বসে। আরিফ সন্ধ্যাকে মাঝখানে বসিয়ে নৌকার গলুইয়ের দিকে যায়। হেলেদুলে গিয়ে বসে সেখানে। দাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পারছে না।
সন্ধ্যার সতর্ক বাণী,”এই পড়ে যাবে তো,সাবধান”।
আরিফ হেসে ওঠে, “পড়লে কি হবে!দেখ কত কম পানি। নদীর নিচ পর্যন্ত দেখা যায়”।
সন্ধ্যা অবাক হয়ে খেয়েল করে, “তাইতো,বালু দেখা যাচ্ছে”।
কী স্বচ্ছ পানি।
নিচে ছোট ছোট পাথর। কোন শ্যাওলা নাই। নানান রকম ছোট মাছের ঝাক। সন্ধ্যা পানিতে হাত দেয়। আরিফ সত্যিই বলেছে,পানি খুব ঠাণ্ডা।
যেন বরফ গলে গেছে কিছুক্ষণ আগে। “আচ্ছা পানি এত পরিস্কার আর ঠাণ্ডা কেন”?মাঝিকে জিজ্ঞেস করে সন্ধ্যা।
“এগুলো আসলে ঝরণার পানি। ওই যে পাহাড়গুলান দেখতেছেন,সেখান থেকে আসতেছে। ঝরণার পানি খুবই ঠাণ্ডা হয় আর তাতে কোন ময়লা থাকে না”।
মাঝির কথা শুনে দুজনেই আবার সামনের দিকে তাকায়। দুইদিকে বিশাল বিশাল পাহাড়। মাঝখানে ফাকা। নদীটা ঐ ফাক দিয়েই আসছে। একটা ঝুলন্ত ব্রীজ নদীর উপর।
ব্রীজটা দুই পাহাড়ের মধ্য যোগ সাধন করে দিয়েছে। ব্রিজের একপাশে শহরের মত একটা যায়গা। মাঝির কথা অনুযায়ী ওইটা ভারতের একটা বাজার। বাজারকেন্দিক শহর। ব্রিজের অপরপাশে আরও উচু উচু পাহাড় চূড়া।
তাতে রাস্তে আছে বলে মনে হচ্ছে। গাড়ী যাচ্ছে দেখা যায়।
নদীর মাঝে যে দ্বীপ,তা বাংলাদেশের মধ্যে পড়েছে। নৌকা সেই দ্বীপে এসে থামে। দ্বীপের বালুতে নামে তারা।
প্রচুর লোকের ভীড়। সব বয়সী মানুষই আছে। সবাই মজা করছে। ছোট পিচ্চি বাচ্চারা দৌড়া দৌড়ি করছে আর হাটু পানিতে ঝাপাচ্ছে। আর বড়দের কেউ কেউ নদীর ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করছে বেড়াতে এসে।
আরিফের খুব ইচ্ছে হল গোসল করার। কিন্তু আফসোস,গোসলের জন্য আলাদা কাপড় আনা হয়নি। তাই ইচ্ছাটা ইচ্ছাই থেকে গেল। কেন জানি তার জীবনের বেশিরভাগ ইচ্ছাই আফসোস হয়ে যায়। কারনটা সে আজও বের করতে পারেনি।
দুইটা ছেলে বাইনোকুলার নিয়ে আসে তাদের কাছে। প্রতি মিনিট দুই টাকা তবে শর্ত হল কমপক্ষে দশ মিনিট। আরিফ একটা ভাড়া করে সন্ধ্যার হাতে দিয়ে বলে, “তুমি দেখ”।
সন্ধ্যা বলে, “তুমি দেখবে না”?
আরিফ ব্যাংগাত্মক জবাব দেয়, “আমি তোমার মত কানা নই। খালি চোখেই তোমার বাইনোকুলারের চেয়ে ভাল দেখব”।
সন্ধ্যা কিছু না বলে চশমা খুলে বাইনোকুলার চোখে লাগিয়ে এদিক ওদিক দেখতে থাকে।
“দেখ দেখ, বি.এস.এফ এর একজন এই দিকে রাইফেল তাক করে আছে। যেন এক্ষুনি গুলি করবে। ভাগ্যিস তখন তোমাকে দেখেনি। দেখলেই গুলি করে দিত”।
সন্ধ্যার বক্তব্য। উতকণ্ঠাময়।
আরিফ সন্ধ্যার উতকণ্ঠা দেখে মুচকি হাসে। সে জানে,এমন উতকণ্ঠা সে আর কখনো দেখতে পাবে না,শুনতে পাবে না ওর কাছ থেকে। চোখের কোণা বালির মত চিকচিক করে ওঠে তার।
এমন সময় আরিফের সমবয়সী একজন তাকে ডাক দেয়, “হ্যালো ব্রাদার,একটা ছবি তুলে দেবেন প্লিজ”।
বলেই ক্যামেরা বাড়িয়ে দেয় আরিফের দিকে। আরিফ রাজি হতেই পাশ থেকে লাজুক একটা মেয়ে এসে ছেলেটার পাশে দাঁড়ায়।
“আমার বউ,হানিমুনে ঘুরতে বেরিয়েছি”। ছেলেটি নিজ থেকেই বলে।
সন্ধ্যা আরিফের কাছে এসে দাড়ায়। সে এই দুজনের কথার কিছুই শোনেনি। ওই ছেলেটি জিজ্ঞেস করে, “আপনারাও বুঝি…..?”
আরিফ মাথা নাড়ায়, “না”।
আরিফ সন্ধ্যাকে নিয়ে পাহাড়ের দিকে হাটতে থাকে। কিন্তু এখানেও হলুদ পতাকা।
মানে আর সামনে যাওয়া যাবে না। এটাই সীমানা। আরিফের খুব মন খারাপ হয়ে যায়। সাথে মেজাজও। মেজাজ নাকি ম্যাজাজ –তা নিয়ে তার ডাউট আছে।
সে মনে মনে ক্ষেপে যায় ভারতের উপর। সবগুলো পাহাড় নিয়ে বাংলাদেশকে কেবল দিয়েছে নদী। স্বার্থপর।
তো আর কি করার?এখানেও আফসোস করতে হল তাকে। দূর থেকেই পাহাড় দেখল মন ভরে।
“স্যার যাবেন নাকি চা বাগান?কমলা বাগান,পানের বরজও আছে। খাসিয়া রাজবাড়িও দেখতে পারবেন”। এক অচেনা লোক জিজ্ঞেস করে।
“কিন্তু আপনি কে”?আরিফ পালটা প্রশ্ন করে।
“আমরা এখানে গাড়ি চালাই।
সকলরে গাড়িতে করে ঘুরে ঘুরে সব জায়গা দেখাই। ওই যে আমার ভ্যান গাড়ি”।
“ও”,আরিফ স্বস্তি বোধ করে।
এমন সময় সন্ধ্যার ফোনে কল আসে। সে একটু দূরে গিয়ে কলটা রিসিভ করে।
আরিফ দূর থেকে সন্ধ্যার যে কথাগুলো শুনতে পারে তা এরকম-“হ্যালো মা….হ্যা আমি ভালো আছি……হ্যা মণীষাদের বাড়িতে…..ওরা ভালো আছে…..কালকেই ফিরব…..ভালো….সুস্থ….আচ্ছা….আচ্ছা….বাই”।
সন্ধ্যা ফোন ব্যাগে রাখতে রাখতে আরিফের কাছে এসে বলে, “চলো,বাগান দেখতে যাব”।
আরিফ পাহাড়ের দিকে মুখ করে বলে “,তোমার বাবা কি আগের চেয়ে ভালো?সুস্থ”?
সন্ধ্যা আরিফের খালি পায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, “হুম, ভালো”।
“তুমি বিয়েতে রাজি হয়েছ বলেই আংকেল মনে হয় ভালো হয়ে উঠেছেন,কি বল”?
“বাদ দাও। বাগান ঘুরব চলো”।
“না, বাগানে যাব না। ফিরে যাব,চল”।
“কেন?”
“তুমি তোমার স্বামীর সাথে হানিমুনে এসে দেখে যেও বাগানগুলো”। আরিফের বুকের ভেতর জমে থাকা বরফ যেন গলে যাচ্ছে।
সন্ধ্যা খেয়াল করে আরিফের চোখের কোনে সূক্ষ্ম ঝরণা।
সে জানে,এই জল ঠাণ্ডা নয় উষ্ণ,স্বচ্ছ নয় লোনা। তার চোখেও পানি চলে আসে।
দুজনে নৌকায় চড়ে বসে। ফিরে যাবার জন্য।
আরিফ একবার সন্ধ্যাকে দেখে,আরেকবার পিছন ফিরে পাহাড়গুলো দেখে।
পাহাড়গুলোর কাছে যেতে পারেনি সে,দূর থেকেই দেখেছে শুধু। হাত বাড়ালেই ছোয়া যায়,কিন্তু হাতটা বাড়াতে পারেনি সে। একটা বর্ডার তা হতে দেয়নি।
কিছুদিন পর,হয়ত দু কি তিন সপ্তাহ পরেই তার আর সন্ধ্যার মাঝে এমন একটা অদৃশ্য সম্পর্কের সীমারেখা তৈরি হয়ে যাবে। যার একপাশে সন্ধ্যা।
আর ঠিক কাছেই কিন্তু আপরপাশে আরিফ।
আরিফ তার মুখ ধুয়ে ফেলে নদীর পানিতে। তার অশ্রু নদীর পানিতে মিশে যায়। যেন পাহাড়ের অঝর কান্না আর আরিফের চাপা কান্না এক হয়ে নদী বেয়ে অজানায় পাড়ি জমাচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।