আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাবি উপাচার্যের লালায়িত টেন্ডার কাহিনী

আধারে দেখা বৃত্তান্ত আলোয় প্রকাশ

আপনারা ইতিমধ্যেই অবগত আছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র’ নির্মানের জন্য দরপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই টেন্ডার নিয়ে কি হচ্ছে আর তার কতটুকু আপনারা জানেন তা আমাদের জানা নেই। আমরা অনেক আগে থেকেই একটি কথা বারবার বলে আসছি যে, উপাচার্য তার টেন্ডারবাজী নিরাপদ করতে ছাত্রলীগের ভিতরে পরিকল্পিতভাবে বিভাজন সৃষ্টি করে রেখেছে। বর্তমান প্রক্রিয়াধীন এই টেন্ডার দিয়েই আমাদের অভিযোগ সত্য প্রমানিত হতে চলেছে। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আপনারা প্রমান করেছেন বর্তমান উপাচার্যের জনপ্রীয়তা আগের চেয়ে কতটা কমে গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আপনাদের বিবেক, জ্ঞান, বুদ্ধি দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে দেখবেন এই আশা রেখে আমরা উপাচার্যের টেন্ডারবাজীর নির্দিষ্ট প্রমান আপনাদের নিকট উপস্থাপন করছি। যদি আমাদের কথা সত্য হয় তাহলে টেন্ডারবাজ কোন ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকতে পারে কিনা আপনারা সিদ্ধান্ত নেবেন। আপনারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং ন্যায়ের পক্ষে আপোসহীন। আপনাদের অব্যহত অনুসন্ধানের ফলে উপাচার্যের অনেক অপকর্মই ইতিমধ্যে ফাঁস হয়ে গেছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যদি টেন্ডারবাজী করেন, তিনি যদি ঘুষ গ্রহণ করেন তাহলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কি শিক্ষা দেবেন।

সাংবাদিকতার মহান পেশাগত দায়িত্ব থেকে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ভালবাসা থেকে আপনারা আমাদের দেয়া তথ্য অনুসন্ধান করে প্রকৃত সত্য গোটা জাতির সামনে উপস্থাপন করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। উপাচার্যের টেন্ডারবাজীঃ ‘ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র’ নির্মানের জন্য জানুয়ারি মাসে একবার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ওই সময়ে সর্বনিু দরদাতা ছিল রাজু এন্টারপ্রাইজ, দ্বিতীয় আরএফএল এবং তৃতীয় ছিল অনিক ট্রেডার্স। রাজু এন্টারপ্রাইজ সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় সংবাদ পরিবেশিত হওয়ায় টেন্ডার বাতিল করা হয়। নিয়ম অনুযায়ি কাজ দ্বিতীয় দরদাতা পেতে পারতো।

কিন্তু তাকেও বাদ দিয়ে অনিক ট্রেডার্সকে কাজ দেয়া সম্ভব ছিল না। প্রকৃত পক্ষে অনিক ট্রেডার্সকে কাজ দেয়া অসম্ভব হয়ে ওঠায় টেন্ডার বাতিল করা হয়। পুনরায় আহ্বানকৃত দরপত্র অনুযায়ি সর্বনিু দরদাতা হচ্ছেন আরএফএল, দ্বিতীয় হয়েছে অনিক ট্রেডার্স আর তৃতীয় উর্মি এন্টারপ্রাইজ। ফলে আবারও বেকায়দায় উপাচার্য। প্রথম দরদাতাকে কাজ না দিয়ে দ্বিতীয় দরদাতা (অনিক ট্রেডার্স)কে কাজ দেয়ার জন্য অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে।

দরপত্র জাচাই বাছাইয়ের জন্য টেন্ডার কমিটিই যথেষ্ট। কিন্তু উপাচার্যের নির্দেশে একটি অতিরিক্ত টেকনিক্যাল কমিটি করা হয়েছে। তিন সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটির মধ্যে একজন রয়েছে জনাব সাইদুর রহমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ নন। কিন্তু উপাচার্যের বন্ধু।

তিনি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন উপাচার্যের কথায় (ইঞ্জিনিয়ার অফিসে খোঁজ নিন)। প্রশ্ন হচ্ছে অতিরিক্ত কমিটি কেন এবং সেই কমিটিতে উপাচার্যের বন্ধু কেন? উপাচার্য এবার কমিটির ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার করতে চাইছে। এজন্য তার বন্ধু প্রথম দরদাতা সম্পর্কে নেতিবাচক এবং দ্বিতীয় দরদাতা (অনিক ট্রেডার্স) সম্পর্কে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছে। এখন উপাচার্যের জন্য সহজ ব্যপার। তিনি সাফ বলে দিতে পারবেন কমিটি সুপারিশ করেছে আমার করার কি।

কিন্তু উপাচার্যের সেই পরিকল্পনায় বাধ সেধেছে অন্য এক সদস্য জনাব আজিজুল হক। তিনি প্রথম দরদাতা যোগ্য এবং দ্বিতীয় দরদাতার কাজপত্রে কি কি সমস্যা আছে তা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছে। আজ ছিল দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির (টেন্ডার কমিটি) মিটিং। এই মিটিং এ কি হয়েছে? উপাচার্য এই কমিটির সদস্য নন। কিন্তু মিটিং শুরু হবার কিছুক্ষণ পূর্বে ট্রেজারার উপাচার্যের রুমে গিয়েছিলেন কেন? প্রকৃতপক্ষে উপাচার্য ট্রেজারারকে যেভাবে সুপারিশ করতে বলেছেন তিনি তাই করেছেন।

দ্বিতীয় দরদাতাকে কাজ দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। দরপত্র আহ্বান থেকে এই পর্যন্ত যা হয়েছে তা করা হয়েছে খুবই গোপনে। কিন্তু গোপন করার কি আছে। কে কাজ পাচ্ছে, কার কি সমস্য তা সবাই জানলে কি অসুবিধা। অসুবিধা একটাই, উপাচার্যের টেন্ডারবাজীর জন্য পছন্দের কোম্পানি কাজ পায় না।

এজন্য এতই গোপনে কাজ করা হচ্ছে যে, কমিটির সদস্যরা ছাড়া আর কেউ জানে না কি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এমন কি মিটিংএ অনুপস্থিত কমিটির সদস্যও জানতে পারেন না। কিন্তু দেয়ালেরও কান আছে। সত্য গোপন থাকে না। সাংবাদিকরাও কমিটির সদস্যদের কাছে জানতে চাইলে কিছুই জানিনা বলে জানানো হবে।

কেউ মুখ খুলবে না (সাংবাদিকরা জানার চেষ্টা করলে প্রমান পাবে)। কমিটির ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার প্রায় সমাপ্ত। এখন খাবার পালা। কি খাবেন উপাচার্য? হ্যাঁ, সর্ব নিু দরদাতা দরপত্রে ৮কোটি ২৭লাখ টাকায় কাজটি করে দিবে বলে দর দেয়। দ্বিতীয় দরদাতা (অনিক ট্রেডার্স) ৮কোটি ৮৫লাখ টাকায় কাজটি করে দেয়ার দর দেয়।

এখন প্রথম থেকে দ্বিতীয়ের ব্যবধান ৫৩ লাখ টাকা। অনিক ট্রেডার্স কাজ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি ৫৩ লাখ টাকা। তাহলে উপাচার্য কেন তার বন্ধুকে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ লাখ টাকা ক্ষতি করাচ্ছেন? প্রকৃত বিষয় হচ্ছে অনিক ট্রেডার্স কাজ পেলে ওই ৫৩ লাখ টাকা লেনদেন হবে এটিই সাধারণ ব্যপার। এই টাকার লেনদেনের বিষয়টি চুড়ান্ত হবার পরে অনিক ট্রেডার্স ঘোষণা দিয়েছে টেন্ডার তারা পাবে। অনিক ট্রেডার্সের কর্মকর্তা শাজাহান তিন/চার দিন পূর্বে চ্যালেঞ্জ করেছে এই কাজ তারা পাবে।

পৃথিবীর কোন শক্তি তাদের ঠেকাতে পারবে না (কথাগুলো ইঞ্জিনিয়ার অফিস, প্রান্তিক বাজার ও রেজিষ্ট্রার অফিস থেকে জানতে পারবেন)। প্রশ্ন হচ্ছে আগেই ঠিক হয়ে না থাকলে কিভাবে ঘোষণা দেয়া যায় কে কাজ পাবে? উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির প্রায়ই বলে থাকেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালবাসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ লাখ টাকা ক্ষতিই কি ভালবাসা? হ্যাঁ ভালবাসার আরো উদাহরণ আছে। ইতিপূর্বে এই অনিক ট্রেডার্সকে ‘কলতান বিদ্যা নিকেতন’ ভবন নির্মানের জন্য ৩২ লাখ টাকার কাজ বিনা টেন্ডারে দেয়া হয়। অথছ কিছু দিন পূর্বে আল বেরুনী হলের ৬লাখ টাকার কাজ টেন্ডার দেয়া হয়।

যেখানে ৬লাখ টাকার কাজ টেন্ডারে দেয়া হয় সেখানে ৩২লাখ টাকার কাজ কেন বিনা টেন্ডার দেয়া হয়? বর্তমান সরকার দেশের প্রত্যেক ব্যক্তির তথ্য জানার অধিকার দিয়েছে। যার যথাযথ সুবিধা আপনারা ভোগ করতে পারেন। তাহলে আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা নিন্মোক্ত বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করুণ। তাহলেই সব ঘটনা বেরিয়ে আসবে। ১. অতি গোপনীয়তার কারণ কি? ২. গতবারে টেন্ডার কেন বাতিল করা হয়েছিল? ৩. প্রথম দরদাতার সমস্য থাকলে দ্বিতীয় দরদাতা কেন পায় নি? ৪. অতিরিক্ত একটি টেকনিক্যাল কমিটি কেন করা হয়েছে।

৫. টেকনিক্যাল কমিটিতে উপাচার্যের বন্দু আসলো কিভাবে? ৬. উপাচার্যের বন্ধু কি প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে কি সুপারিশ করেছে? ৭. একই কমিটির অন্য সদস্যরা কি প্রতিবেদন দিয়েছে, সেখানে কি সুপারিশ করেছে? ৮. অনিক ট্রেডার্সকে কি কারণে বিনা টেন্ডারে ৩২ লাখ টাকার কাজ দেয়া হয়েছিল? ৯. অনিক ট্রেডার্সের কর্মকর্তারা আগেই কিভাবে বলেছে টেন্ডার তারা পাবে? ১০. ট্রেজারার মিটিং শুরুর আগেই কেন উপাচার্যের রুমে? ১১. ঢাকার শ্যামলীতে উপাচার্যের শাশুড়ির নামে ৬০ লাখ টাকার ফ্লাট কত তারিখে এবং কোন টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে একই সাথে অনিক ট্রেডার্সের একাউন্ট থেকে কত তারিখে ৬০লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে আর সেই টাকা তারা কোথায় জমা দিয়েছে বা কি কাজে ব্যবহার করেছে? -সচেতন সমাজ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।