জানার কোন শেষ নাই। জানার চেষ্টা বৃথা তাই।
এই লেখাটি আমার আগের ক্রিস্টোফার নোলান - ১ এর দ্বিতীয় পর্ব।
শুরুতেই একটা কথা বলে নেই, আমি এখানে যা আলোচনা করছি তাকে মুভি রিভিউ বললে ভুল হবে। মুভির থিম নিয়ে ভাসা ভাসা পর্যালোচনা বললে ভালো হয়।
আগের পর্বেই বিষয়টি উল্লেখ করা উচিত ছিল। তখন মনে না থাকায় এখানেই বললাম।
যাই হোক আজ আমরা আলোচনা করবো ক্রিস্টোফার নোলানের অত্যন্ত আলোচিত একটি মুভি মেমেন্তো নিয়ে। মেমেন্তো খুব সোজা কোন মুভি নয়, দেখা যাক কতটুকু কি করতে পারি।
মেমেন্তো(২০০০):
আমার দেখা নোলানের প্রথম কোন মুভি।
এক নিঃশ্বাসে শেষ করার পর কেমন অনুভুতি হয়েছিল তা চিন্তা করে এখনো গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে। মুভিটি শুরুই হয় কাহিনির সমাপ্তি দিয়ে। একদম শেষ দৃশ্য দিয়ে মুভিটি আরম্ভ হয় এবং কাহিনি ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যেতে থাকে একদম শুরুর দিকে। প্রতিটি দৃশ্যেই নোলান কিছুটা ধোয়াশা সৃষ্টি করেন যার, যার উত্তর থাকে পরবর্তি দৃশ্যে এবং উত্তরের সাথে আরো কিছু নতুন জট, নতুন কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। এভাবেই কাহিনি এগিয়ে যেতে থাকে।
মুভির মুল চরিত্রে অভিনয় করেন গাই পিয়ার্স(লিওনার্ড)। তাকে ঘিরেই সমস্ত কাহিনির সুত্রপাত। তিনি এখানে "শর্ট টার্ম মেমোরি লস" নামক এক জটিল রোগে আক্রান্ত। জীবনের একটি নির্দিষ্ট সময়ের স্মৃতি বাদে তার আর কিছুই মনে নেই। তিনি নতুন কোন জিনিস মনে রাখতে অক্ষম।
নতুন করে স্মৃতি ধারন করার ক্ষমতা তার একেবারেই নেই। দৈনন্দিন জীবন যাপনের জন্য সে কিছু নোটবুক, ছবি(নিজের গাড়ি, হোটেল রুম বা পরিচিত মানুষজনের) এবং দেহে আকা ট্যাটুর উপর পুরোপরি নির্ভরশীল। বেচে থাকার এই নিরন্তন সংগ্রামকে নোলান দেখিয়েছেন তার নোলানীয় কায়দাতেই। প্রতিনিয়ত নায়কের নিজের সাথে কথোপকথন, মানুষের তার দুর্বলতার সুযোগ নেয়া, অপমান করা, এরপরেও জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে তার হাল না ছাড়া... এসবই নোলান খুব শৈল্পিকভাবে গেথেছেন এক সুতোয়।
মুভিটি শুরুই হয় একটি হত্যার মাধ্যমে।
যাকে হত্যা করা হয় সেই জো প্যান্টোলিয়ানো(টেডি) কে বারবার দেখা যায়, কিন্তু তাকে সবসময়ই অত্যন্ত রহস্যময়ভাবে উপস্থাপন করা হয়, শেষ দৃশ্যের আগ পর্যন্ত তার ভুমিকাটা বুঝা যায় না। মুভিতে সবসময়ই দেখা যায় গাই পিয়ার্সকে তার স্ত্রী হত্যার প্রতিশোধ নেবার জন্য উন্মুখ অবস্থায়। সে বিশ্বাস করে "জন জি" নামের কোন এক আততায়ী তার স্ত্রীকে ধর্ষনের পর হত্যা করে। এভাবে সেই জন জি. কে খোজা, তার স্ত্রীর স্মৃতি রোমান্থন করা এবং ফোনে ৩য় কোন নাম না জানা ব্যক্তির সাথে কথোপকথন চলতে থাকে। ফোনে কথা বলার সময় প্রায়ই উঠে আসে স্যামি জ্যানকিস নামের একটি চরিত্র।
এই স্যামি জ্যাকসন আসলে অবচেতন মনে তার নিজের প্রতিচ্ছবি।
নোলানের প্রতিটি মুভির উদ্দেশ্য আসলে মানব জীবনের জটিল কিছু ধাধাকে উপস্থাপন করা, এই মুভিটাও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানে দেখানো হয়েছে মানুষ কিভাবে নিজের তাগিদে নিজের পরিচয় নিজের কাছেই লুকিয়ে রাখে। লিওনার্ড সেই কল্পিত হত্যাকারীর খোজে নিজের জীবন উৎসর্গ করে যেখানে সেই হত্যাকারী ("হত্যাকারী" বোধহয় তাকে বলা ঠিক হচ্ছে না) সে নিজেই। বাস্তবে আমরা নিজেরাও আমাদের পরিচয় জানি না।
জানি না আমাদের নিজেদের মাঝে ঘুমিয়ে আছে কত ভিন্ন ভিন্ন রঙের বিভিন্ন সত্তা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।