নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে গতকাল বুধবার অব্যাহতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রামীণ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন পদ থেকে ইউনূসকে সরিয়ে দেওয়ার এ খবর বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী গণমাধ্যম খুবই গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে।
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা ‘ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা বিতাড়িত’ শীর্ষক শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইউনূসকে জোর করে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পত্রিকাটি গ্রামীণ ব্যাংকে সরকার নিযুক্ত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হকের বরাত দিয়ে জানায়, তাঁকে গ্রামীণ ব্যাংকের সব ধরনের কাজ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
যুক্তরাজ্যের ইয়েলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আহমেদ মুশফিক মোবারক নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ যদি এটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করে, তাহলে বিনিয়োগনীতির ক্ষেত্রে দেশটি এক দফা পিছিয়ে যাবে।
’ ক্ষুদ্রঋণ বিশেষজ্ঞ বিজয় মহাজন বলেন, ‘মোটের ওপর এটা ক্ষুদ্রঋণ খাতের জন্য খারাপ সংকেত। বিতর্ক যাই থাকুক না কেন, দারিদ্র্য বিমোচনে তাঁর অবদান অনেক। ’
নিউইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদনে ইউনূস সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক একটি মন্তব্যও তুলে ধরা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেছেন, দারিদ্র্য বিমোচনের নামে ইউনূস দরিদ্র মানুষের রক্ত চুষছেন। সেই সঙ্গে ইউনুসের গত জানুয়ারিতে দেওয়া একটি বক্তব্য তুলে ধরেছে পত্রিকাটি।
ইউনূস বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করতে চান। কিন্তু ব্যাংকের স্থিতিশীলতার জন্য তাঁর থাকা দরকার। তাঁর হঠাত্ বিদায় ব্যাংকটির অবস্থা খারাপের দিকে চলে যেতে পারে।
ব্রিটিশ পত্রিকা টেলিগ্রাফ ‘বরখাস্ত’ শীর্ষ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশ এল।
টেলিগ্রাফ ঢাকায় কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, অধ্যাপক ইউনূসের আন্তর্জাতিক অবস্থান ও ২০০৭ সালে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ হাসিনাকে ক্ষুব্ধ করেছে।
কানাডার গ্লোব অ্যান্ড মেইল পত্রিকা ‘বাংলাদেশ গরিবের ব্যাংকারকে বিতাড়িত করতে চাইছে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্র চার বছর আগে মুহাম্মদ ইউনূস নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে মাদার তেরেসা, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ও নেলসন ম্যান্ডেলার মতো সম্মান পেয়েছিলেন। আর এই সপ্তাহে এই নোবেলজয়ী বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছেন।
পত্রিকাটি নিউইয়র্ক থেকে উইমেন্স ওয়ার্ল্ড ব্যাংকিংয়ের প্রধান নির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট মরি এলেন ইস্কেন্দেরিয়ানকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘কেউ তাঁর সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না। সবচেয়ে বড় ক্ষুদ্রঋণের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এটা খুবই উদ্বেগজনক।
সর্বোপরি এটা আমাকে খুবই ব্যথিত করেছে। ’
ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একতরফাভাবে সরকার ঘোষণা করেছে, মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের দ্বন্দ্বে বিষয়টি নতুন মাত্রা যোগ করবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রায় ৩০ বছর আগে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কার্যকর ফরমুলার অংশ হিসেবে ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনূসের বিরুদ্ধে উগ্র আচরণ করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় সরকার, যা বড় রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত হবে।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্টের অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তাকে তাঁর ব্যাংক থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁকে জোর করে ব্যাংকের প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলছে। তবে ইউনূস তাঁর পদে বহাল থাকবেন এবং এর জন্য লড়বেন।
সিএনএন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, নোবেলজয়ীকে তাঁর ব্যাংকের পদ থেকে বিতাড়িত করার আবারও চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বিবিসি, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, দ্য ওয়াশিংটন টাইমসসহ বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।