আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পদ্মা সেতু প্রকল্পের ভেতর থেকেই শুরু হয়েছিল ষড়যন্ত্র! মূল হোতা ছিলেন তৎকালীন পিডি

মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে বসতে ভা্ল লাগে....।

উপদেষ্টা, সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সহ অনেকের বিরুদ্ধেই অভিয়োগ উঠেছিল। যদিও তাদের বিরুদ্ধে এখনো তদন্ত চলছে। কয়েকবার অভিযোগপত্র জমাও দেয়া হয়েছে।

মন্ত্রীত্ব খোয়া গেছে। সচিব বদল হয়েছে। ঋণ বাতিল নিয়ে অনেক ঘটণা ঘটেছে। কিন্তু অনেকদিন পর জানতে পারলাম, বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু নিয়ে সেতু কর্তৃপক্ষের ভেতর থেকেই ষড়যন্ত্র হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি কোম্পানিকে কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্সির (সিএসসি) কাজ পাইয়ে দেয়াকে কেন্দ্র করেই ওই ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল সেতু কর্তৃপক্ষের কয়েক কর্মকর্তাসহ কোম্পানির স্থানীয় এজেন্টরা।

তাঁরাই ই-মেইল বার্তার মাধ্যমে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রেটি ভাইস প্রেসিডেন্সিকে প্রভাবিত করেছে। বিশ্বব্যাংক অবশ্য ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়ে আগে ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। অন্যথায় ঋণ বাতিলের ব্যাপারেও সতর্ক করে দিয়েছিল। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিতে না পারায় শেষ পর্যন্ত ইন্টিগ্রেটির সুপারিশেই পদ্মা সেতুর ঋণ বাতিল করা হয়েছে। মূলত পাঁচ কোটি ডলারের কাজকে কেন্দ্র করেই ২৯০ কোটি ডলারের দেশের সবচেয়ে বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পটি ভেস্তে গেছে।

জানা যায়, প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামই এ ষড়যন্ত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। প্রকল্পের ডিজাইন উপদেষ্টা একমকে সিএসসির কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য প্রাক-যোগ্যতা অর্জনকারী অপর কোম্পানির বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ই-মেইলের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রিটির কাছে পাঠিয়েছে। তাঁর সঙ্গে যোগসাজশ করেছে কোম্পানি স্থানীয় প্রতিনিধিরা। ষড়যন্ত্রকারীরা এই ই-মেইলের মাধ্যমে নিয়মিত মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেছে বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রিটির কাছে। যার কপি বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছেও দেয়া হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তারা ওই সকল ই-মেইল কপি আবার তৎকালীন সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে ফরোয়ার্ড করে পাঠিয়েছে। এ সকল ই-মেইল বার্তা থেকেই পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের চিত্র বেরিয়ে এসেছে। ওই কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য ওই ষড়যন্ত্রকারীরা প্রাক-যোগ্যতা অর্জনকারী অপর কোম্পানিগুলোরই বিরুদ্ধাচরণ করেনি, জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন মূল্যায়ন কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধেও মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ পাঠিয়েছে। এমনকি ওই কমিটিতে প্রতিনিধিত্বকারী বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি ড. দাউদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে ওই ষড়যন্ত্রকারীরা। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পাঁচটি প্যাকেজের মধ্যে একটি হচ্ছে প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্সির (সিএসসি) বা নির্মাণ তদারকি পরামর্শক নিয়োগ।

এ পরামর্শক নিয়োগের জন্য প্রাক-যোগ্যতা দরপত্র আহ্বান করা হলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে প্রকল্পের ডিজাইন উপদেষ্টা মুনসেল একমও রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সুপারিশে এ কোম্পানিগুলোর দরপত্র মূল্যায়নের জন্য প্রথমে সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়ার নেতৃত্বে একটি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলামও ওই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ প্রকল্প পরিচালক একমকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য পাঁচ সদস্যের ওই মূল্যায়ন কমিটির তিনজনকেই প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়।

তারা একমকে সর্বোচ্চ ১০ নম্বর দিয়ে অন্যদের এমন কম নম্বর দেয় যে, তারা যাতে প্রতিযোগিতায় আসতে না পারে। একমকে সর্বোচ্চ মার্র্কিং দেয়ার বিষয়টি সদস্যরা একে অন্যকে ই-মেইলের মাধ্যমে জানায়। ভাগ্যক্রমে ওই মেইলটি সেতু বিভাগের সচিবের মেইলেও চলে আসে। ফলে তিনি গোপন পরিকল্পনার কথা জানতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ওই মূল্যায়ন কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে নতুন মূল্যায়ন কমিটি গঠন করেন।

এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন প্রকল্প পরিচালকসহ অন্যরা। তাদের নিজস্ব কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় তারা বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রেটি বিভাগে মিথ্য তথ্য দিয়ে অভিযোগ জানানো শুরু করেন। এ সময় ওই প্রকল্প পরিচালক সেতু বিভাগের সচিবকে জানান যে, বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রেটি বিভাগ পদ্মা সেতু প্রকল্প নজরে রাখছে। তারা বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রেটি বিভাগকে ছাড়াও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও বিশ্বব্যাংকে কর্মরত এক জাপানী কর্মকর্তাকে ওই মেলের কপি পাঠাতেন। ওই জাপানী কর্মকর্তাই তাদের পাঠানো মেলের কপিগুলো ফরোয়ার্ড করে সেতু বিভাগের সচিবের কাছে।

সে থেকেই তাদের ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায়। মেল বার্তাগুলোতে বিশ্বব্যাংককে একমের পক্ষে প্রভাবিত করার জন্য এমনও বলা হয় যে, একম যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি। এ কোম্পানিকে কাজ দিলে পদ্মা সেতু প্রকল্প বিশ্বব্যাংকের আয়ত্তের মধ্যে থাকবে। অথচ এ বিশ্বব্যাংকই প্রাক-যোগ্যতায় অংশ নেয়ার পর একমের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিল। তাদের প্রশ্ন তোলারও যৌক্তিক কারণ ছিল।

তারা বলেছিল, মুনসেল একম পদ্মা সেতু প্রকল্পের ডিজাইন উপদেষ্টার কাজ করছে। এ অবস্থায় তাদের পুনরায় নির্মাণ তদারকি উপদেষ্টা নিয়োগ করলে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ দেখা দেবে। কিন্তু দরপত্র আহ্বানের আগে তাদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করায় শেষ পর্যন্ত দরপত্র প্রক্রিয়া থেকে তাদের বাদ দেয়া যায়নি। আবার এ বিশ্বব্যাংক প্রকল্প পরিচালকের ব্যাপারেও আপত্তি তুলেছিল। তারা বলেছিল, রফিকুল ইসলাম একজন চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ।

তিনি ট্রুথ কমিশনে গিয়ে নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করেছিলেন। শুধু তাই নয়, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি আট প্রকৌশলীর সঙ্গে জেল খেটেছেন। ফলে তাকে কিভাবে এমন একটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে তা নিয়ে বিশ্বব্যাংক বিস্ময়ও প্রকাশ করে। বিষয়টি তখন যোগাযোগমন্ত্রীকে জানালে হলে তিনি বিশ্বব্যাংকের আপত্তিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। বরং বলেছিলেন, তার চাকরির মেয়াদ আর ছয় মাস আছে।

ছয় মাস পর আর তার মেয়াদ বাড়ানো হবে না। প্রথম দিকে মেলগুলোর ব্যাপারে বিশ্বব্যাংক গুরুত্ব না দিলেও একের পর এক মেল পাওয়ার পর বিশ্ববাংকের ইন্টিগ্রেটি বিভাগও তৎপর হয়ে ওঠে। ওই মেলগুলোতে একম সম্পর্কে শুধু সুনাম করা হয়, আর অন্য সব কোম্পানি সম্পর্কে দুর্নাম-দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়। এসব অভিযোগে যোগাযোগমন্ত্রীকেও জড়ানো হয়। যোগাযোগমন্ত্রীর নাম আসার পর বিশ্বব্যাংক নড়েচড়ে বসে।

তারা তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হন। বিশেষ করে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের বরাত দিয়ে উইকিলিকসের ফাঁস করা একটি বার্তায় সৈয়দ আবুল হোসেনকে ‘লেস দেন অনেস্ট’ হিসাবে আখ্যায়িত করলে যোগাযোগমন্ত্রী সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের নেতিবাচক ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর ঋণ স্থগিত করে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে আসে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তারা কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য উপস্থাপন করেনি।

প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানতে চাইলে তারা জানিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গেলে তাঁকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেয়া হবে। অবশ্য অর্থমন্ত্রী ওই সময় ওয়াশিংটনে গেলে তাঁর কাছে বিশ্বব্যাংক একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠিতেও তারা পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সঙ্গে সৈয়দ আবুল হোসেনের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দেয়। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কি অভিযোগ তা বলা হয়নি। জানা যায়, জামিলুর রেজা চৌধুরীর কারিগরি মূল্যায়নে এসএনসি লাভালিন নয়, এইচপিআর প্রথম হয়েছিল।

লাভালিন হয়েছিল দ্বিতীয়, একম তৃতীয় ও হ্যালক্রো চতুর্থ হয়েছিল। এ কারিগরি মূল্যায়ন বিশ্বব্যাংকের অনুমোদনের পর তাদের আর্থিক প্রস্তাব খোলা হয়। আর আর্থিক প্রস্তাবে লাভালিন চলে আসে প্রথমে। কারণ লাভালিন প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ ডলার দর দিয়েছিল। আর এইচপিআর দর দিয়েছিল সাত কোটি ১০ লাখ।

হ্যালক্রোর দর ছিল অবশ্য তিন কোটি ৫০ লাখ ডলারের মতো। যদিও তখন সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেছিলেন, মূল্যায়নের প্রতিটি পর্যায়েই বিশ্বব্যাংকে অবহিত করে মতামত নেয়া হয়েছে। অথচ মূল্যায়ন শেষ হওয়ার অনেক আগে থেকেই একটি মহল গোপনে ই-মেলের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রেটি ভাইস প্রেসিডেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং মূল্যায়ন বিষয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য পরিবেশন করতে থাকে। ওই মেল যোগাযোগে বিশ্বব্যাংকের টাস্ক টিম লিডারসহ যে সকল কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে কাজ করতেন তাদেরও জড়ানো হয়েছিল। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রেটির কিছু কর্মকর্তাও অভিযোগকারীদের সঙ্গে ই-মেল যোগাযোগে উৎসাহিত হয়।

শোনা যায়, এক পর্যায়ে তারা বাংলাদেশে এসে অভিযোগকারীদের সঙ্গে সাক্ষাতও করেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সত্যানুসন্ধানের স্বার্থে তাঁরা আমাদের কারও সঙ্গে কিংবা মূল্যায়ন কমিটির কোন সদস্যের সঙ্গে দেখা করেননি। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংক আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়েরের আগে আমি তাদের কাছে প্রস্তাব করেছিলাম বিশ্বব্যাংক এবং সরকারের পক্ষে আমরা একত্রে বসে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে এর সত্যতা যাচাই করা হোক। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের তরফ থেকে এ ধরনের কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বরং তারা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উত্থাপনপূর্বক পদ্মা সেতুর কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়।

মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেন, এসএনসি লাভালিনকে কার্যদেশ প্রদান করেনি। কারিগরি মূল্যায়নেও তাদের প্রস্তাব প্রথম হয়নি। কিন্তু প্রথম স্থান অধিকারী প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রস্তাব এসএনসির তুলনায় এত বেশি ছিল যা উভয়ের কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়নের গড় হিসাবে এসএনসির নম্বর বেশি হয়। তিনি বলেন, কারিগরি মূল্যায়ন বিশ্বব্যাংকে পাঠানোর বেশ কিছু সময় পর বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। অথচ কারিগরি মুল্যায়ন বিশ্বব্যাংক কর্র্তৃক অনুমোদিত হয়েছিল।

আর আর্থিক প্রস্তাব কারিগরি মূল্যায়নের পরই খোলা হয়েছিল। খবরটি যদিও অনেক আগের, তবুও সামুর বন্ধুদের জানার জন্য দিতে ইচ্ছে করলো। তাই দিলাম। এসব বিষয়ে গত বছর জনকণ্ঠ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনও ছাপা হয়। নীচে এর লিংক দেয়া হলো: Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.