আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তথ্য তত্ত্বের চেয়ে ভয়ঙ্কর

আমি জানতে চাই

আদর্শ হিসাবে শোষণমুক্ত সমাজের কথা বলা সকলের জন্য কাজ, খাদ্য, বাসস্থান ও শিক্ষা এবং রোগের চিকিৎসার ধারণাটার বিরুদ্ধাচরণ পারতপক্ষে কেউ করেন না। অন্ততঃ যাঁরা মানব মুক্তির কথা বলেন কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কে কি করেন কিংবা করেছেন সে কথাটা বলা কোন মতবাদের বিরুদ্ধে প্রচার কিংবা বিরোধিতা হিসাবে আখ্যা দেওয়া সঠিক নয়। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা না থাকায় এবং গণমাধ্যমসমূহ রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত থাকায় সেখানকার প্রকৃত অবস্থা জানা প্রায় অসম্ভব ছিল। তাই শুরুতে কেউ মার্ক্স-লেনিন পড়লেই সমাজতন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আরো একটা ব্যাপার থাকে যে কোন প্রকৃত ঘটনা যদি পুঁজিপতিদের কাছ থেকে আসে তখন কট্টোর সমাজবাদীরা সে বিশ্বাস করেনি বা করতে চাইতো না।

এখোন না। ক্রুশ্চভের স্ট্যালিন সংক্রান্ত গোপন রিপোর্ট যখন নিউইয়র্ক টাইমস্‌-এ প্রকাশিত হলো, তখন তাকে বুর্জোয়া প্রচারণা বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এভাবে ১৯৩৬-৩৮ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত কমিউনিস্ট প্রধান স্ট্যালিন যে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার কমিউনিস্ট কর্মী ও নেতাকে হত্যা করেন এবং তারা যে সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিস্টদের চর ছিলেন বলে প্রচার করা হত, তা পঞ্চাশ দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত বিশ্বাস করত অনেকেই। স্ট্যালিন আমলের অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যা সম্পর্কে সমাজতন্ত্রিরা অনেক কম খবর রাখতো। তারা এখোনো অনেকি জানে না বা জানতে চায় না।

আশির দশকে সোভিয়েত ভিন্নমতাবলম্বীদের বক্তব্য পাশ্চাত্যে প্রকাশিত হওয়ার পর সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিতরকার খব কিছু কিছু জানা যায়। তাও বাইরে থেকে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে অন্ধকার ঘরের আসবাবপত্র দেখার মত। সোভিয়েত ইউনিয়নের ৮০-এর দশকের মধ্যভাগ থেকে গ্লাসনস্ত নীতির কারণে সেখানকার প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ হতে থাকে। আমাদের তাত্ত্বিকেরা শুধু তর্ক করে জিততে চান। মুল ঘটনা আড়াল করে রেখে।

তথ্য যে তর্কের চেয়ে ভয়ঙ্কর সত্য এবং নিষ্ঠুর তা এই তাত্ত্বিকদের বোঝানো কষ্টকর। তেমনি এক অতি সাধারণ ঘটনা যতটুকু আমার জানা এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিকে নিয়ে এক তাত্ত্বিক নিজের মত করে তার নিজের অনলাইন পত্রিকায় ছাপিয়ে যাচ্ছেন । আসল ঘটনাকে আড়াল করে রেখে। তিনি তর্ক করেই জিততে চায় এবং জিতেছেনও তাকে ধন্যবাদ না দিয়ে পাচ্ছি না কারণ তথ্য আর যাই থাকুক তর্ক যৌক্তিক হলেই হল। তাই বলা যায় আমাদের সমাজতন্ত্র তর্কের উপর টিকে আছে, তথ্যের উপর নয়।

যখন ভয়ঙ্কর সত্যটা বের হয়ে আসে তখন সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে যায়। তবে মিথ্যা তথ্য তর্কের জন্য টিকে থাকে না বেশী দিন এইটা একটু বোঝা দরকার। ঘরেই যখন আমরা চোখ থাকতে অন্ধের অভিনয় করছি বিশ্বাসকে পুঁজি করে, সেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে দলন করে কিভাবে শোষণমুক্ত সমাজ গড়া সম্ভব তা বুঝে ওঠা মুস্কিল। ক্ষুধামুক্ত ব্যক্তির পক্ষেই স্বাধীনভাবে চিন্তা করা সম্ভব। অপরের অন্নদাস হয়ে স্বাধীন চিন্তা, স্বাধীনভাবে চলাফেরা সম্ভব নয়।

একথার মধ্যে যে সত্য আছে তা অস্বীকার করা যায় না। ক্ষুধামুক্তির আয়োজনটা ছিল, কিন্তু বাস্তবে যখন তা অর্জন করতে গিয়ে দেখা গেল কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না, তখন তত্ত্বটা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন না তুলে মানুষের আন্তরিকতা এবং সততা সম্পর্কে সন্দেহ করে, তাদের জন্য চরম দন্ডের ব্যবস্থা করা হল। এই জন্যই সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে গড়ে উঠেছে শ্রম শিবির। তার একটা মনের মত নাম দেওয়া হল Corrective Labour Camp. অর্থাৎ সংশোধনী শ্রম শিবির। যুগসঞ্চিত ভ্রান্ত চিন্তার পরিবর্তে নতুনভাবে চিন্তা করার ব্যাপারে দীক্ষাদান।

কিন্তু সেই শিক্ষাটা আসলে ছিল দাস শ্রমের কোন অপরাধী ব্যক্তিকে বাধ্য করা। একট মহৎ আদর্শের নাম করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দেশে কয়েকটি দলকে একত্র করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। কোন সমাজতান্ত্রিক দেশ পুঁজিবাদী বিশ্ব অপেক্ষা উন্নততর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। তার কারণ তারা মনগড়া একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তির জোরে চালাতে চেয়েছিলেন।

চীনে কমিউনিস্টরা শাসন ক্ষমতায় থাকলেও তাদের উৎপাদন ব্যবস্থায় কোন নতুওনত্ব নেই। পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকেই তারা আধুনিকীকরণের নামে চালু করেছে দেশে যা এখন আমরা সবাই জানি চীনে চলছে পুঁজিবাদী সমাজতন্ত্র। কমিউন ব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দেওয়ার পর সেই পথ থেকে সরে এসেছে। একটি নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং বর্তমানে বহুজাতিক কোম্পানীর আধিপত্য থেকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে নতুন পথের সন্ধান দিতে পারে। এযাবৎকালে মার্কসীয় অর্থনীতি নামে যে তত্ত্বকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে গিয়ে জবরদস্তি চালানো হয়েছে, তাকে সমাজতন্ত্র বলার মতো কোন যুক্তি বর্তমান নেই, কি আছে তা আপনারাই বিচার করুন।

প্রয়োগের মাধ্যমেই একটি তত্ত্বের নির্ভুলতা কিংবা তা ভ্রান্ত কি না সেটা প্রমাণিত হয়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এটাই। দীর্ঘদিনের পরীক্ষা চলেছে সমাজতান্ত্রিক দেশে এবং সে পরীক্ষায় শ্রমশিবির, হত্যা-নির্যাতনকে পর্যন্ত প্রয়োগ করা হয়েছে। আজ সে কথা প্রকাশ হয়ে পড়েছে এবং সেই হত্যা আর নির্যাতনের কেন নিন্দা করা হবে না বা যাবে না? পুঁজিবাদীদের যে জন্য নিন্দা করা হয় সেই একই ধরনের অপরাধ কেন সমাজতান্ত্রিক দেশে ভিন্ন মাপকাঠিতে বিচার্য হবে? এসব প্রশ্নকে এড়িয়ে কোন মতবাদকে অভ্রান্ত বলে চালানো যায় না। এই সত্যকে স্বীকার করেই মানবমুক্তির ব্যাপারে আমরা আন্তরিক হতে পারি না কি? গরবাচেভ এসে সেই মিথ্যার মুখোশ উন্মোচন করেছেন।

আমাদের দেশেও দেখা গিয়েছিল বিবেককে চাপা দেওয়ার ধারাটাকেই বিবেক বলে চালানোর চেষ্টা চলেছিল এবং চলেছে। তাই একদা যাঁরা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা ছিলেন তাঁরা অসংখ্য তরুনকে মৃত্যুমুখে পাঠিয়ে নিজেদের ভাগ্যের সৌধ গড়েছেন এদেশে। তাঁদের যাঁরা উপদেষ্টা ছিলেন তাঁরা এখন নিরব কেন? সমাজতন্ত্রের কথা বলেছেন এরা গরীব দেশবাশীর ভাগ্যোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। যারা খেতে পায় না, শিক্ষা পায় না, লাঞ্চনা যাদের নিত্যসহচর তাদের কাছে মহৎ আদর্শের কথা বলে চলছে নিজেদের ভাগ্য পড়ার পাঁয়তারায়। একেই বলে দেশের দুর্দশা নিয়ে ব্যবসা।

আর মহৎ কথা কে না বলেন! নির্বাচনের সময় যেমন সবাই জনদরদী গরীবের বন্ধু। অথচ দারিদ্র্য ঘোচে না। জনগণ বাঁচার পথের সন্ধান পায় না। তাহলে জনদরদ আর গরীবের বন্ধুত্ব কেন বিফলে যায়- একথা কি আমরা ভেবে দেখেছি???? বলা হবে যে , এ তো বুর্জোয়া আর টাউটদের কথা। ঠিক তাই।

বামপন্থীরাও তো আছেন। তাঁরা কেন আজও একটি শক্তিশালী পক্ষ হিসেবে আত্মপ্রকাশে ব্যর্থ হলেন বা হন এখোনও- এ প্রশ্নটা কি করা অযৌক্তিক

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.