আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সম্পর্ক বিষময় না মধুময়-- চাবী আপনার হাতেঃ একটি চায়নীজ উপকথা

হতাশা আর দু;খ ব্যাথা যাদের দেখে থমকে দাঁড়ায় আজকে তাদের খুব প্রয়োজন, বিশ্ব এসে দু হাত বাড়ায়।

অনেক দিন আগের কথা। লি-লি নামে এক চায়নীজ মেয়ে বিয়ের পর শ্বসুরবাড়ি গেল। কিছুদিনের মধ্যে সে বুঝতে পারল তার শ্বাসুড়ি একজন বদ মেজাজী মহিলা। তিনি তাকে একদমই পছন্দ করেন না।

লি-লির আচার ব্যাবহারে তিনি যেমন বিরক্ত হন, শ্বাসুড়ির ব্যাবহারে লি-লিও অতিষ্ঠ হয়। দিন যায়। লি-লি আর তার শ্বাসুড়ির ঝগড়া চলতে থাকে। সারাক্ষন ঝগড়া লেগে থাকে। স্বামী বেচারার অবস্থা খারাপ, বাড়ি এলেই মা অভিযোগ করেন বউ এর বিরুদ্ধে আর রাতে বউ এর অভিযোগ শ্বাসুড়ির বিরুদ্ধে!! লি-লি চিন্তা করল সে কোন ভাবেই শ্বাসুড়ির সংগে থাকবে না।

অন্যদিকে স্বামি বৃদ্ধা মা কে ছেড়ে আলাদা ভাবে থাকবেনা। নিজের সংসারের সুখের কথা ভেবে অবশেষে লি-লি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিল। সে স্বরনাপন্ন হলো তার এক চাচা মিস্টার হু-ওয়াং এর যে কিনা হার্বাল চিকিতসা বিদ্যায় অভিজ্ঞ। লি-লি চাচাকে সব খুলে বলল। সে বলল চাচা আমাকে এমন হারবাল ঔষধ দিন যা দিয়ে আমি আমার শ্বাসুড়িকে মেরে ফেলতে পারি।

কারন এই মহিলার সাথে আমার থাকা সম্ভব নয়। মিস্টার হু-ওয়াং ভাতিজির কথা মন দিয়ে শুনলেন। অবশেষে বললেন মা আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব। তবে কাজটা খুব চতুরতার সাথে করতে হবে, খুব দ্রুত মারা যায় এমন বিষ দেয়া যাবে না তাতে তুমি খুনী হিসাবে ধরা পড়ে যেতে পার। তুমি খুনি হিসাবে ধরা পড়লে সুখের সংসার তো আর হবে না, জেলে থাকতে হবে।

তাই কাজটা করতে হবে ধীরে ধীরে, আমি যেভাবে বলব সেভাবে কাজটা করবে। লি-লি বলল চাচা আপনি যেভাবে বলবেন আমি সেভাবেই করব। আপনি বলুন আমাকে কি করতে হবে। মিস্টার হু-ওয়াং লি-লি কে বললেন আমি তোমাকে কিছু ধীর গতির হারবাল বিষ দিব, যা তুমি প্রতিদিন খাবারের সাথে মিশিয়ে তোমার শ্বাসুড়িকে খাওয়াবে। এক বছর লাগবে তোমার কাজ হতে।

তবে কোন সন্দেহ যেন না হয় সেজন্য উনার সাথে ভাল ব্যাবহার করবে। ভাল ভাল খাবার তৈরী করে এই হারবাল মিশিয়ে খাওয়াবে। একেকদিন একেক খাবার দিবে যেমন কোন দিন স্যুপ, কোন দিন কেক, কোন দিন নুডুলস এই রকম। প্রতিদিন খাওয়াবে। মাত্র এক বছর, তারপর তোমার মুক্তি।

সুখের সংসার!! একথা বলে মিস্টার হু-ওয়াং তাকে ১৫ দিনের বিষ দিলেন। ভাতিজি কে বলে দিলেন প্রতি ১৫ দিন পর পর যেন সে এসে তার কাছ থেকে ঔষধ নিয়ে যায়। ভদ্র মহিলা তার জীবন বিষময় করে দিয়েছে। আর মাত্র ৩৬৫দিন তার পর মুক্তি!! লি-লি খুশি মনে খুশী মনে ঔষধ নিয়ে চলে গেল। দিন যেতে থাকে।

প্রতিদিন লি-লি নতুন নতুন খাবার বানিয়ে শ্বাসুড়িকে খাওয়ায়। তার ষড়যন্ত্র যেন ধরা না পড়ে সে জন্য অত্যন্ত ভাল ব্যাবহার করে। শ্বাসুড়ি একটু আধটু খারাপ ব্যাবহার করলেও সে শান্ত থাকে। শ্বাসুড়িও ভাল ব্যবহার পেয়ে কেমন যেন বদলে যেতে থাকে। তিনিও এই মেয়েটির প্রতি ভাল ব্যবাহার করতে থাকে।

অন্যের কাছে গল্প করা শুরু করা তার মত ভাল ছেলের বউ কারো হয় না। ঠিক যেন নিজের মেয়ের মত। ছয়মাস পর পুরো বাসার পরিবেশ বদলে যায়। স্বামী আনন্দময় চিত্তে বাসায় ফিরে। মা যখন বউ এর গুণগান করে তার মনটি ভরে যায়।

স্ত্রীর প্রতি তার ভালবাসা বেড়ে যায়। স্ত্রীর কাছ থেকে মায়ের প্রশংসা শুনে তার হৃদয় প্রশান্তিতে ভরে ওঠে। বছর পুরো হতে চলল। এবার লি-লি বিষন্ন মনে চাচার সাথে দেখা করে। চাচাক সে বলে তার শাসুড়ি এখন অনেক ভাল হয়ে গেছে।

তাকে নিজের মেয়ের মতই দেখে। এখন আর তাদের ঝগড়া হয় না। অন্যদের কাছে তার প্রশংসা করে। স্বামী তাকে আগের চেয়ে অনেক বেশী ভালবাসে। সুতরাং সে চাচাকে অনুরোধ করে এমন কোন ঔষধ দিতে যাতে এক বছরের বিষক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়।

সে চায় না তার শাসুড়ি মারা যাক!! বরং শ্বাসুড়িকে নিয়েই তার সংসার এখন অনেক সুখের, সে সেটা থেকে বঞ্চিত হতে চায় না। মিস্টার হু-ওয়াং এবার লি-লি কে জিজ্ঞেস করেন সে এখন আসলেই কি চায়? কারন এখন তিনি ফাইনাল ডোজ দিতে চান যাতে এক সপ্তাহের মধ্যে কার্যসিদ্ধি হবে অর্থাৎ লি-লির শ্বাসুড়ি মারা যাবেন। লি-লি এবার চাচার পায়ে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেংগে পড়ে। চাচা এমন ঔষধ দিন যাতে আমার শ্বাসুড়ি মারা না যান, তিনি আমার মায়ের মত, আমি আগে বুঝতে পারিনি। চাচা এবার হাসেন।

লি-লি কে বলেন শান্ত হও মা। আমি তোমার শ্বাসুড়িকে কোন বিষ দেইনি বরং যা দিয়েছি তা উনার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন। উনি এর প্রভাবে মারা যাবেন না। আর বিষ যেটা ছিল সেটা তোমার মনে। সেটা তুমি তোমার ব্যাবহার দিয়ে ক্ষয় করে দিয়েছ।

লি-লি প্রথমবার শ্বাসুড়িকে খুন করার পরিকল্পনা করে যে রকম খুশী হয়ে বাসায় ফিরেছিল এবার তার চে অনেক বেশী খুশী হয়ে বাসায় ফিরে যায় যখন জানল শ্বাসুড়িকে খুন করার এক বছরের চেষ্টা ব্যার্থ হয়েছে! শিক্ষাঃ তুমি যদি কাউকে ভালবাস, সেও তোমাকে অবশ্যই ভালবাসবে। এরকম আরেকটি লিখাঃ ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলুনঃ সাফল্য আপনারই হবে। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।