আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেখানে টেন্ডার সেখানেই যুবলীগ-ছাত্রলীগ

মেয়াদের শেষদিকে এসে টেন্ডারবাজিতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী দুই সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় টেন্ডার নিয়ে চলছে তাদের হিংস তা। সংগঠন দুটির নেতা-কর্মীরা নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ। কখনো দুই সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষ, কখনোবা অভ্যন্তরীণ গ্রুপের মধ্যে লড়াই। পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, যেখানেই টেন্ডার, সেখানেই হাজির যুবলীগ ও ছাত্রলীগ।

সরকারের তরফ থেকেও দলীয় এই সন্ত্রাসীদের দমনে কোনো পদক্ষেপ নেই। শিক্ষা, বিদ্যুৎ, পিডব্লিউডি, ওয়াসা, পূর্ত, খাদ্য বিভাগসহ দেশের প্রায় সব সরকারি প্রতিষ্ঠানই যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দখলে। অবশ্য, সরকারের পালাবদলে এ চিত্রও পাল্টে যায়। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো শীর্ষ পর্যায়ের আশকারায় টেন্ডার সন্ত্রাসে মেতে ওঠে। বিএনপি আমলে যুবদল ও ছাত্রদল একই ভূমিকায় ছিল।

তবে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। অনেক সন্ত্রাসীও এখন এ সংগঠন দুটোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। বিশেষ করে যুবলীগে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীরা ঘাঁটি গেড়েছে।

টেন্ডারবাজি নিয়ে একের পর এক লাশ পড়ছে। কিছু ঘটনায় পুলিশ খুনিদের গ্রেফতার করেছে।

দলও লোক দেখানো বহিষ্কার করেছে। কিন্তু যুবলীগ-ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজি বন্ধ হয় না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টেন্ডারের দখল নিতে দুই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সারা দেশে মরিয়া হয়ে ওঠেন। প্রয়োজনে গুলি আর বোমা খরচ করে টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ নেন। সরকারের সাড়ে চার বছর ধরেই চলেছে এ পরিস্থিতি।

এখন 'আখেরি ধান্ধায়' নিজেরা খুনোখুনি করছেন। টেন্ডারবাজিতে গত এক মাসে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বন্দুকযুদ্ধে চারজন নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে মহানগর যুবলীগের (দক্ষিণ) সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক মিল্কি খুন হন। তাকে ফিল্মি কায়দায় গুলি করে হত্যা করেন যুবলীগের আরেক নেতা এস এম জাহিদ তারেক। এ ঘটনার পেছনেও কয়েক কোটি টাকার টেন্ডার।

পরে ক্রসফায়ারে নিহত হন তারেক ও তার সহযোগী শাহ আলম।

টেন্ডার নিয়ে গত জুনে চট্টগ্রামে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ভয়াবহ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন তিনজন। তাদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে প্রাণ হারিয়েছে আট বছরের এক শিশুও। টেন্ডার সন্ত্রাসের কারণে দুটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয়। আরও বেশ কয়েকটিতে শুরু হয় অস্থিরতা।

সূত্র জানায়, সংঘর্ষ-সংঘাতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনি ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। বহিষ্কার ও গ্রেফতারের ঘটনাগুলো একেবারেই লোক দেখানো। কয়েকদিন পরেই তারা ছাড়া পেয়ে যান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফের পদও জুটে যায়। সে কারণে যুবলীগ-ছাত্রলীগের কমিটিতে সবসময়ই সন্ত্রাসী-মাস্তান ও ক্যাডারদের আধিপত্য বহাল থাকে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই এ দুই সংগঠন টেন্ডার নিয়ে সহিংস হয়ে ওঠে। বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত টেন্ডারবাক্স ছিনতাই, সশস্ত্র মহড়াসহ সংঘর্ষের দুই শতাধিক ঘটনা ঘটেছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবসায়ীরাও তাদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। সরকারের মেয়াদের শুরুতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজেদের মধ্যে তুমুল সহিংসতায় লিপ্ত হয় ছাত্রলীগ। সংগঠনটির কার্যক্রম স্থগিত করারও দাবি ওঠে।

একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এক হিসাবে দেখা গেছে, সরকারের মেয়াদের প্রথম ১৭ মাসে শুধু ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ঘটনাই ছিল ১৫৮টি। তখন বেশির ভাগ সহিংস ঘটনা অবশ্য নিজেদের মধ্যে ঘটেছে। তাদের হাতে ওই সময়ে নয়জন নিহত ও এক হাজার ৯৪৭ জন আহত হন। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৪১ জনকে আটক করা হয়।

তখন সারা দেশে মামলা হয় ২১৪ জনের নামে। আর সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয় ২৬৪ জনকে। তাদের কারণে ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সে সময় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঢাকায় কয়েক মাস আগে বিশ্বজিৎ নামে এক নিরীহ যুবককে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের অধিকাংশ সরকারি ও বেশকিছু বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বাণিজ্য নিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশের নেপথ্যে ছাত্রলীগ।

তাদের হাতে শিক্ষকরাও লাঞ্ছিত হচ্ছেন। আবার ছাত্রছাত্রীদের মারধর করে সার্টিফিকেট আটকে ভর্তিবাণিজ্য নিশ্চিত করা হয়। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাজে বাধা দেওয়া, থানায় ঢুকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়া, ওসিকে লাঞ্ছিত করা, বিলবোর্ড বাণিজ্য, আধিপত্য বিস্তারে অস্ত্রের মহড়া, সংঘর্ষ-মারামারিসহ নেতিবাচক নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

সূত্রমতে, সংগঠন দুটির এভাবে লাগামহীন হওয়ার প্রধান কারণ সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হতে আর দেরি নেই। নেতা-কর্মীরা শেষ মুহূর্তের সুবিধা আদায়ে মরিয়া।

সারা দেশে যেসব দফতরের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ হচ্ছে, সার্বক্ষণিক লেগে থাকছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ। অধিকাংশ জায়গায় ভাগবাটোয়ারা ঠিকঠাক মতো হয়ে যাওয়ায় বিবাদ প্রকাশিত হয় না। স্বার্থের দ্বন্দ্ব হলেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। দফারফা না হওয়ায় চট্টগ্রামে গত মাসে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ছাত্রলীগ থেকে বিতাড়িত বা অবসর নেওয়া অনেক নেতার যুবলীগ বা অন্যান্য সহযোগী সংগঠনে পুনর্বাসিত হওয়া নিয়েও সংঘাতের সৃষ্টি হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার শিক্ষাভবন নিয়ন্ত্রণ করছেন ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত এক নেতা। তিনি পরে যুবলীগে একটি পদ পান। শিক্ষাভবন-সচিবালয়-সেগুনবাগিচা এলাকায় ব্যাপক পোস্টারিং করে নিজের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের বিষয়টি জানান দেন। এর পর থেকে শিক্ষাভবন, বিদ্যুৎভবন, পিডব্লিউডি, খাদ্যভবন এলাকায় তার আধিপত্য বেড়ে গেছে।

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.