মুক্তমত প্রকাশের প্লাটফর্ম ব্লগ। তাই ব্লগে বসতে ভা্ল লাগে....।
নীতিমালা না থাকায় দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। সরকারীভাবে নির্ধারিত ফি ধার্য না থাকায় ইচ্ছেমতো কোর্স ফি আদায় করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিষ্ঠান ভেদে কোর্স ফি বাবদ সর্বনিম্ন ৯ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর তোপের মুখে কোর্স ফি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রধান তদারকি প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ফলে সাধ্যের অভাবে অনেকেই মেডিকেলে পড়তে পারছেনা। বাকীদের অনেকটা বাধ্য হয়েই উচ্চ খরচে পড়াশুনা চালাতে হচ্ছে।
সারাদেশের ৪৬টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের কোর্স ফি সম্পর্কে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, সকল প্রতিষ্ঠান গত এক বছরে কোর্স ফি বৃদ্ধি করেছে। সকল প্রতিষ্ঠান সরকারি অনুমোদন নিয়ে পরিচালিত হলেও শিক্ষার্থীদের ফির বিষয়টিতে ব্যতিক্রম।
এ ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতির বালাই নেই। বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ নিজেদের খেয়ালখুশিমতো উচ্চ হারে বেতন ও ফি নিচ্ছে। প্রতিষ্ঠান ভেদে কোর্স ফি বাবদ সর্বনিম্ন ৯ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।
কলেজগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ভর্তি ও কোর্স ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা নিচ্ছে, যা গত বছর ছিল ১২ লাখ। রাজধানীর জেডএইচ সিকদার মেডিকেল কলেজ ১৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা নিচ্ছে, যা গত বছর ছিল ১২ লাখ ৯০ হাজার।
একইভাবে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ৮ লাখ ৩৬ হাজার থেকে এক লাফে এবার নিয়েছে ১২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ গত বছর ১০ লাখ টাকা নিলেও এবার তারা ১২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নিয়েছে। টিউশন ফি গত বছর মাসিক ২ হাজার থেকে ১ হাজার বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। ইব্রাহীম মেডিকেল কলেজ এবার ফি ১১ লাখ ২৮ হাজার টাকা করেছে। গত বছর ছিল ৯ লাখ টাকা।
গুলশানের সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ এক লাফে আড়াই লাখ টাকারও বেশি বৃদ্ধি করেছে। এবার তারা ভর্তি বাবদ নিচ্ছে ১৩ লাখ টাকা করে। অন্যদিকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ নিচ্ছে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা। এছাড়া বড়মগবাজারে অবস্থিত আদ-দ্বীন ওমেন মেডিকেল কলেজ এবার ১২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ভর্তি ফি নিয়েছে, যা গতবার ছিল সাড়ে ৯ লাখের মতো। ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ৮ লাখ ৫০ হাজার থেকে এবার ১০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ভর্তি বাবদ নিচ্ছে।
এছাড়া ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজে ভর্তিচ্ছুদের এককালীন ৯ লাখ এবং প্রতি বছর ১ লাখ টাকা করে দিতে হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে শুধু ঢাকাতেই নয় জেলা পর্যায়ের মেডিকেল কলেজগুলোর চিত্রও একই। ঢাকার বাইরের কলেজগুলোর মধ্যে কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ এবার ১ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা ভর্তি ফি নিয়েছে। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ নিয়েছে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা, গত বছর ছিল ৬ লাখ। সিলেটের জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ এককালীন ৯ লাখ ৫১ হাজার টাকা ও নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ এককালীন সাড়ে ৯ লাখ টাকা নিচ্ছে।
তৃতীয় বর্ষে শিক্ষার্থীকে গুনতে হবে আরো ১ লাখ টাকা। আর সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজে ৯ লাখ টাকায় শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ ১০ লাখ থেকে ১৩ লাখের কোটায় উঠে গেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য নির্ধারিত ভর্তি ফি ধার্য করার জন্য গত বছরের মাঝামাঝি উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটি তদন্ত শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে তাতে সুপারিশ করা হয়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ৫ বছরের জন্য কোর্স ফি সর্বোচ্চ ৮ লাখ টাকা এবং মাসিক ফি সর্বোচ্চ চার হাজার টাকা পর্যন্ত নিতে পারবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর তোপের মুখে তা ভূলে হয়ে যায়। অবশেষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর স্বার্থরক্ষায় সরকার ফি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফি’র বিষয়টি নিয়ে সরকার বেশ তৎপর রয়েছেন। নিয়মিতভাবেই বেসরকারি কলেজগুলোর কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে।
কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত কমিটির মাধ্যমে তা তদন্ত করা হয়। #
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।