একজন হিসাব করণিককে ১০ দিনের ব্যবধানে ঢাকা, রাজশাহী আবার ঢাকায় তিন স্থানে বদলি করা হয়। আরেক কর্মচারীকে বদলির পর তা প্রত্যাহার করা হয় তিন দিনের মাথায়। একই স্থানে ১২ বছর ধরে চাকরি করছেন, যাকে বদলির ঝামেলায় কখনো পড়তে হয়নি। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দুই ধাপ উপরের পদে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে সর্বকনিষ্ঠ কর্মচারীকে। নজিরবিহীন এসব ঘটনা ঘটছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিভিল এভিয়েশন)-এ।
চাঞ্চল্যকর এমন আরও বেশ কিছু ঘটনা বেরিয়ে এসেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার দীর্ঘ তদন্তে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, টাকা দিয়ে বদলি আর বদলির আদেশ প্রত্যাহার দুই-ই সিভিল এভিয়েশনে ওপেন সিক্রেট ঘটনা। শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট সিভিল এভিয়েশনের এই বদলি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। সিন্ডিকেটের কাছে সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা।
জানা গেছে, বদলিবাণিজ্য নিয়ে সরকারের একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা গত বছরের শুরুতে তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত নভেম্বরে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে ওই সময়ে প্রতিবেদনটি রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে যায়। পরবর্তীতে এ বছর জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের মতো ওই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রতিবেদনে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়াসহ কিছু সুপারিশ করা হলেও এর বাস্তবায়ন এখনো হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিভিল এভিয়েশনের হিসাব করণিক আনোয়ার পারভেজকে প্রথম গত বছর ১৮ মে বদলি করা হয় ঢাকা থেকে রাজশাহী বিমানবন্দরে। ঠিক ৯ দিন পর তাকে বদলি করা হয় ঢাকায় নির্বাহী প্রকৌশলী বিভাগে। নির্বাহী প্রকৌশলী বিভাগে বদলির একদিন পরই তিনি আবারও বদলি করা হয় ঢাকায়। মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে তাকে তিনবার বদলি করা হয়। একইভাবে কম্পিউটার অপারেটর শাকিলা আক্তারকে সদর দফতর (প্রশাসন) স্টোর থেকে এরো এন্ড এটিএস-এ বদলি করা হয়।
এর তিন দিন পরই তাকে সদর দফতর সেন্টাল মেইল ডিসপাস-এ বদলি করা হয়। কম্পিউটার অপারেটর জিয়াউর রহমানকে দুই মাসের মধ্যেই সম্পত্তি শাখা থেকে নিরাপত্তা শাখায় এবং আবার নিরাপত্তা শাখা থেকে প্রশাসন শাখায় বদলি করা হায়। কম্পিউটার অপারেটর শাহজাহানকে ১৫ দিনের মধ্যে সেমসু থেকে সদর দফতর এরো এন্ড এটিএস-এ এবং আবার প্রশাসন স্টোরে বদলি করা হয়। প্রশাসনিক বিধানে কোনো স্থায়ী পদ পরিবর্তনের সুযোগ না থাকলেও ক্লিনার কে এ বোরহান উদ্দিনকে এমএলএসএস পদ দেখিয়ে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
সিভিল এভিয়েশনের প্রবিধানমালা না মেনে গত বছর ২০ মার্চ সর্বকনিষ্ঠ কর্মচারী অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটরকে দুই ধাপ উপরের স্টেনো-টাইপিস্ট পদে দায়িত্ব ভাতাসহ অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়।
একইভাবে গত ২০ জানুয়ারি সর্বকনিষ্ঠ কর্মচারী অমল মল্লিক, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরকে দায়িত্ব ভাতাসহ দুই ধাপ উপরের পদে ক্যাশিয়ারের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিভিল এভিয়েশনে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যখন তখন বদলির আদেশ দেওয়া হচ্ছে। যারা ঘুষ দিচ্ছেন, তাদের বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। আর যারা পারছেন না, তাদের বদলির আদেশ নিয়ে ছুটতে হচ্ছে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে। আর এসব বদলিবাণিজ্য হচ্ছে সিভিল এভিয়েশনের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন)-এর নেতৃত্বে।
টাকা দাবি ও টাকা আদায়ের বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ উল্লেখ করে এই সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। যোগাযোগ করা হলে সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক (প্রশাসন) আবু বক্কর সিদ্দিক এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত চলছে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে। এ নিয়ে মিডিয়াতে কথা বলা নিষেধ আছে। তবে অভিযুক্ত সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা সত্য নয়।
কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করে তদন্তের ব্যবস্থা করিয়েছে। মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে তদন্ত করছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।